নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: সম্প্রতি কার্যকর হওয়া ওয়াকফ সংশোধনী আইন ২০২৫-এর বিরুদ্ধে সরব হল ইউনাইটেড গার্জেন কাউন্সিল (ইউ.জি.সি) । সংগঠনের দাবি, এই আইন ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের পরিপন্থী। তাঁরা জানিয়েছেন, এই আইনের মাধ্যমে মুসলিম সমাজের দীর্ঘদিনের সাংবিধানিক অধিকার ও ওয়াকফ সম্পত্তির সুরক্ষা কাঠামো বিপন্ন হয়ে পড়েছে । তাই সংগঠনের পক্ষ থেকে এই আইন বাতিলের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷ ইউ.জি.সি-র সাধারণ সম্পাদক পাশারুল আলম বলেন, “এই আইন মুসলিম সমাজের স্বার্থবিরোধী এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে। এটি সম্পূর্ণ একটি কালাকানুন। ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা খর্ব করে এই আইন কার্যকর হলে ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।” তিনি আরও বলেন, এই লড়াই কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে। তিনি বলেন, সংবিধানের ২৫ ও ২৬ ধারা অনুযায়ী, প্রতিটি নাগরিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীকে স্বাধিকারভুক্ত ধর্মাচরণ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকার প্রদান করা হয়েছে। নতুন ওয়াকফ সংশোধনী আইন এই অধিকার সীমিত করতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই আইনি ও সামাজিক প্রতিবাদ দানা বেঁধেছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধু আইনি পথে নয়, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেও এই ‘কালা আইন’-এর বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ গড়ে তুলবে । অচিরেই রাজ্যের প্রতিটি জেলায় অবস্থান বিক্ষোভ সংগঠিত করা হবে এবং কলকাতায় একটি কেন্দ্রীয় অবস্থানের ডাক দেওয়া হয়েছে । ইউ.জি.সি-র সভাপতি ডঃ নুরুল ইসলাম বলেন, “এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ এবং সংবিধানিক ধারার মধ্য দিয়েই পরিচালিত হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একত্রিত করে, দলিত, আদিবাসী ও অনগ্রসর শ্রেণিকে যুক্ত করে বৃহত্তর গণআন্দোলনের সূচনা করা।” তিনি জানান, আগামী ১৮ ও ১৯ এপ্রিল কলকাতায় একটি ‘চিন্তন শিবির’-এর আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াকফ আইনের সাম্প্রতিক সংশোধনীতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো হয়েছে এবং রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডগুলোর স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইন সংবিধানের ২৫ ও ২৬ ধারায় প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে ৷ মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিষ্ঠান ও সম্পত্তির ওপর এই ধরনের হস্তক্ষেপ শুধু সংবিধান বিরোধীই নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতির পক্ষেও হুমকি। এই প্রেক্ষিতে ইউনাইটেড গার্জেন কাউন্সিলের পক্ষ থেকে নাগরিকদের সচেতন করা এবং আইনগত ও গণতান্ত্রিক পথে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রয়াস উল্লেখযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct