আপনজন ডেস্ক: ভারতের প্রথম প্রথম রাজ্য হিসেবে উত্তরাখণ্ডে মঙ্গলবার পেশ হল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। উত্তরাখণ্ড বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে ওই বিল পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। এ সময় বিজেপি বিধায়কেরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে থাকেন।বিল পেশের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী ধামি লেখেন, ‘দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের নাগরিকদের সমান অধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল পেশ হতে চলেছে। এই বিধি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে আমরা পরিচিত হব। এটা রাজ্যবাসীর জন্য গর্বের মুহূর্ত।’পরে বিধানসভায় উপস্থিত হয়ে ধামি বলেন, ‘আজ আমাদের অপেক্ষার দিন শেষ। দেশের নাগরিকদের সমান অধিকার দেওয়ার কাজ উত্তরাখণ্ড থেকেই শুরু হচ্ছে।’এই বিল আইনে পরিণত হলে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের সব ধর্মাবলম্বীর জন্য বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সম্পত্তির ভাগাভাগি, খোরপোষ, উত্তরাধিকার, সন্তান দত্তক গ্রহণ প্রভৃতি এক রকমভাবে প্রযোজ্য হবে।অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এই বিলের বিরোধিতা করছে। বোর্ডের সদস্য মাওলানা খালিদ রশিদ ফারাঙ্গি মাহালি মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই আইন কি সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে? উত্তর হল, না। সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কোনও কোনও সম্প্রদায় বা সমাজের অংশকে এর আওতা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তাহলে আইনটি সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য কী করে হবে?’খালিদ রশিদ বলেন, বোর্ডের আইন বিশারদেরা খসড়া বিল খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য এস টি হাসান বলেছেন, এই বিধি পবিত্র কুরআনবিরোধী। তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের জন্য পবিত্র কুরআনে যে হিদায়েত (নির্দেশ) দেওয়া আছে, এই বিধি তার বিরোধী হলে আমরা তা মানব না। হিদায়েত অনুযায়ী হলে মানতে অসুবিধে নেই।’বিধানসভায় পেশ হওয়া খসড়া বিলে বলা হয়েছে, আইন হলে রাজ্যে যাঁরা বিয়ে না করে ‘লিভ ইন’ সম্পর্কে থাকতে চান, তাদের জেলা প্রশাসনে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। ২১ বছরের কম বয়সিদের অভিভাবকদের সম্মতি নেওয়াও বাধ্যতামূলক।বিলে বলা হয়েছে, ওই সম্পর্ক ‘সরকারি নীতি ও নৈতিকতা’ বিরোধী হলে, কিংবা দুজনের একজন বিবাহিত হলে অথবা অন্য সম্পর্কে থাকলে তা নথিভুক্ত করা যাবে না। তা ছাড়া এ ধরনের সম্পর্কে দুজনের যেকোনো একজন নাবালক-নাবালিকা হলে কিংবা কোনো একজনের সম্মতি জবরদস্তি নেওয়া হলে, তা নথিভুক্ত করা যাবে না।লিভ ইন সম্পর্ক নথিভুক্ত করতে ওয়েবসাইট তৈরি করা হবে। প্রতিটি আবেদনপত্র খতিয়ে দেখবে জেলা কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনে তদন্ত করা হবে। সে জন্য সম্পর্কে থাকতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হতে পারে। কোনো কারণে নথিভুক্ত করা না হলে রেজিস্ট্রারকে লিখিতভাবে তার কারণ জানাতে হবে।
এই সম্পর্কে থাকার জন্য ভুল তথ্য দিলে তিন মাসের জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ধার্যের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আইন পরিপন্থী বিয়ে করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এছাড়া নিয়মের পরিপন্থী ডিভোর্স নিলে তিন বছর পর্যন্ত জেলের বিধান রয়েছে। বিধিতে বলা হয়েছে, লিভ ইন সম্পর্কের ফলে সন্তানের জন্ম হলে তারা বৈধ বলে গণ্য হবে। সেসব শিশু ওই দম্পতির সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকারীও হবে। কোনো নারীকে তাঁর লিভ ইন পার্টনার ছেড়ে গেলে তিনি খোরপোষের অধিকারী হবেন। যদিও ‘ছেড়ে দেওয়ার’ সংজ্ঞা ওই বিলে নির্ধারিত হয়নি। এই বিলে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সব ধর্মের জন্যই বাল্যবিবাহ বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার মধ্যে দ্বিতীয় বিবাহ তখনই করা যেতে পারে যখন তাদের একজন মারা যাবে।মালিকানার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার থাকবে। কোন প্রকার বৈষম্য থাকবে না।দেশের সব নাগরিকের জন্য অভিন্ন ফৌজদারি বিধি চালু আছে। কিন্তু দেওয়ানি বিধি জাত, ধর্ম, সম্প্রদায়, অঞ্চলভিত্তিতে আলাদা।বিজেপি চায়, সব ধর্ম ও জাতের জন্য এক দেওয়ানি বিধি চালু করতে। তাদের মূল তিন প্রতিশ্রুতির এটি অন্যতম। বাকি দুই প্রতিশ্রুতি, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ ও রামের জন্মভূমিতে মন্দির নির্মাণ। এ দুটি বিজেপি ইতিমধ্যেই পূর্ণ করেছে।এর আগে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির আওতা থেকে দেশের আদিবাসীদের বাদ দেওয়ার কথা বিজেপি বারবার বলেছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলেও ওই বিধি প্রযোজ্য না করার কথা বলা হয়েছে। এক বিপুল জনগোষ্ঠীকে আইনের আওতার বাইরে রাখা হলে সেই আইন দেশের সবার জন্য ‘অভিন্ন’ কী করে হয়, এই প্রশ্ন সংগত কারণেই উঠছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct