আপনজন ডেস্ক: প্রায় চার মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ চলছে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে। এ যুদ্ধে বিশ্বের অন্যতম সামরিক পরাশক্তি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বেশ ভালোভাবেই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। কিন্তু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হামাস এতো অস্ত্র কোথা থেকে পাচ্ছে, সেই প্রশ্ন ছিল শুরু থেকেই। এবার এ নিয়ে পাওয়া গেল এক বিস্ফোরক তথ্য।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা ও এরপর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হামাস যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তার বড় অংশ এসেছে ‘অস্বাভাবিক’ একটি উৎস থেকে। ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, সেই উৎস হলো খোদ ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। কয়েক দশকের মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বিধ্বংসী হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হামলায় কয়েক হাজার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, বিস্ফোরক, ছোট ও হালকা অস্ত্র এবং প্রচুর পরিমাণ গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে হামাস। প্রায় ১৭ বছর ধরে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা গাজা। এছাড়া আকাশ ও নৌপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। তা সত্ত্বেও হামাসের হামলায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের ব্যবহারে কীভাবে হলো তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিজেদের বুদ্ধিমত্তা, কৌশল ও উপকারী বিদেশি বন্ধুর সহায়তায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞরা মত দেন।
এছাড়া অনেক সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অবরোধের মধ্যেও হামাসের কাছে এত ভারী অস্ত্র থাকার কারণ হলো, গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে তৈরি করা পথে চোরাচালানের মাধ্যমে এসব অস্ত্র তাদের হাতে আসে।কিন্তু ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর গোয়েন্দাদের সাম্প্রতিক দেওয়া তথ্যে উঠে এসেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে হামাসের ব্যবহার করা অস্ত্রের অন্যতম উৎস ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় দখলদার দেশটির ফেলা অবিস্ফোরিত হাজার হাজার গোলাবারুদ দিয়ে নিজেদের জন্য রকেট ও ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা তৈরি হয়েছে হামাসের। এছাড়া ৭ অক্টোবর হামলার সময় ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি থেকে লুট করা অস্ত্রও হামাস তাদের যোদ্ধাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। গত কয়েক মাসের লড়াইয়ের সময়ে সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে, হামাসের সম্পর্কে ৭ অক্টোবরের আগে যা মূল্যায়ন করা হয়েছে তা ভুল। তেমনি তাদের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টিকেও ছোট করে দেখেছে ইসরায়েল। বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বিগত ১৭ বছরের গাজা অবরোধকালে সেখানে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, এখন সেগুলোই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সম্প্রতি ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেদিন হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢোকার কয়েক ঘণ্টা পর রেইম সামরিক ঘাঁটির বাইরে সশস্ত্র এক হামাস যোদ্ধার মরদেহ দেখতে পান ইসরায়েলি সেনারা। তার শরীরে একটি গ্রেনেড বাঁধা ছিল। ইসরায়েলি সেনাদের একজন বলেন, ‘গ্রেনেডে হিব্রু ভাষায় লেখাগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।’ তিনি চিনতে পারেন, সেটি ইসরায়েলের তৈরি নতুন মডেলের বুলেটপ্রুফ গ্রেনেড।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct