ভোটের বাদ্য
শংকর সাহা
সেদিন স্কুল থেকে ফিরেই মা মা বলে চিৎকার করে বাড়িতে আসে টকাই। পাশেই রান্না ঘরে খই ভাঁজছিল বিনোদিনী। ছেলের চিৎকার শুনেই উদ্ধশ্বাসে বাইরে বেরিয়ে এসে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করে,“ কি হলো টকাই।এমন করে মা বলে ডাকছিস?”মার পাশে বসে টকাই বলে, “ মা ,ভোট কি গো? কাল স্কুলের মাঠে অনেক বড় বড় লোক আসবে।হেড স্যর বলেছে কাল স্কুল যেতে হবে না। ও মা,,ভোট কি গো?”“ ও তুই বুঝবি না টকাই? এতটুকু বয়সে এগুলো জানতে নেই ”। “ হাত ধুঁয়ে আয়? খেতে দেবো তোকে।“পরের দিন সকালে উঠে কাজে যাবার আগে ছেলেকে বারে বারে নিষেধ করে বিনোদিনী বলে,”টকাই,আজ স্কুলের মাঠে যাসনে বাবা? ওতো লোকের মাঝে তুই হারিয়ে যাবি”মার কথায় কর্ণপাত করেনা বছর সাতের ছোট্ট টকাই। তাই মা বড়বাড়িতে কাজে গেলে স্কুলের মাঠে ছুটে যায় সে।এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসে কিন্তু টকাই ফেরেনা। ছেলের জন্যে উৎকন্ঠায় একবার ঘর আর বাহির করতে থাকে বিনোদিনী। অপরাহ্নের আলো পড়তেই টকাই বাড়ি ফিরে আসে।বাড়ি ফিরে এসেই মাকে ডেকে বলে,” মা,আমায় খেতে দাও।খুব ক্ষিদে পেয়েছে।“দেখো ছেলের কান্ড,এতক্ষণ কোথায় ছিলি বাবা?”“বলছি,খেতে দাওতো।ভাত খেতে খেতে টকাই মার দিকে চেয়ে বলে, “ জানো মা,আমরা না আর গরীব থাকবো না। তোমাকেও আর কষ্ট করে ওই বাড়িতে কাজ করতে হবেনা”“ মানে,কি বলছিস এইসব ?”“ হাঁ মা।জানতো আজ স্কুলের মাঠে গেছিলাম।কত্ত লোক।কত্ত গাড়ি।ওখানেই একজন মাইক হাতে নিয়ে বললো ভোট দিলে আর কারো কষ্ট থাকবে না।“ “মা,ওমা মা....ভোট কি গো! টাকা বুঝি?”ছোট্ট টকাইয়ের প্রশ্নের উত্তর সেদিন জানাছিলো না বিনোদিনীর। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে শুধু ছেলের দিকে...
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct