খুশির ঈদ
তাপস কুমার বর
“আকাশে এখনো চাঁদ ওঠেনি,তোমার প্রতিক্ষায় প্রহর গুনছে,ঈদ মোবারক উৎসব”।- সেদিন রমজান চাচা, দোকান থেকে বাড়িতে ফিরতে স্ত্রী মেহেবুব চাচি, রমজান চাচাকে বললো,....“সামনে ঈদ, ছেলে মেয়েদের জন্য কবে পোশাক কিনবে?”- রমজান চাচা মেহেবুব চাচিকে বললো, জানো কয়েকদিন ধরে, দোকানে সেল কমে গেছে তেমন একটা রোজগার হচ্ছে না। ছেলে-মেয়েদের জন্য পোশাক কি করে কিনবে? বুঝতে পারছিনা আমি। মেহেবুব চাচি বললো, ঈদ এখনো তো বেশ কিছু দিন বাকি আছে, চিন্তা করো না “আল্লাহর উপর ভরসা রাখো, সব ঠিক হয়ে যাবে”।রমজান চাচা একজন সৎ চরিত্রবান মানুষ। তিনি সৎ পথে থেকে রুজি-রোজগার করে। গ্রামের সকলে রমজান চাচাকে ভীষণ ভালোবাসে। অনেকদিন পর ওই গ্রামে ভূপতিবাবুর একমাত্র ছেলে প্রিয়তোষ বেড়াতে এসেছে। তাদের সাতপুরুষ জমিদার। ভূপতিবাবু ও এই গ্রামে জমিদার ছিলেন। আজ থেকে প্রায় পনেরো বছর আগে তিনি মারা গেছেন। তাই বাবার এতো সম্পত্তি,ব্যবসা সবকিছু এখন প্রিয়তোষকে দেখাশোনা করতে হয়। ছোটোবেলায় প্রিয়তোষ রমজান চাচার দোকানে মিষ্টি নাড়ুর স্বাদ এখনো ভুলতে পারেনি। তাই গ্রামে এসে প্রথমে রমজান চাচার দোকানে গিয়ে চাচার সঙ্গে প্রিয়তোষ দেখা করে। এতোদিন পর রমজান চাচা প্রিয়তোষকে দেখে ভীষণ খুশি। রমজান চাচা প্রিয়তোষকে বললো,.....“অনেক দিন পর এলি প্রিয়তোষ। সামনে ঈদ। আসতে হবে বাড়িতে আমার ছোট্ট ভাইকে”।- প্রিয়তোষ চাচাকে প্রথমে প্রণাম করলো। দু’জনে দু’জনকে গলায় জড়িয়ে ধরলো। প্রিয়তোষ বললো,....“চাচা, তোমার হাতের বানানো মিষ্টি এখনো আমি ভুলিনি। ভালোবাসা দিয়ে তৈরি করা মিষ্টি ওটা, ভালো তো হবেই”।- রমজান চাচা একটু চিন্তিত, মনটা একটু শুকনো শুকনো। প্রিয়তোষ রমজান চাচাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলো,.....“চাচা, কিছু কি হয়েছে আপনার? বলো আমাকে!”- রমজান চাচা হেসে উঠলো। বললো, না না তেমন কিছু নয়। সামনে ঈদ, রোজা চলছে। সারাদিন রোজা রাখতে হয়। তাই হয়’তো তোমার একটু চিন্তিত চিন্তিত লাগছে আমাকে। কিন্তু রমজান চাচা তার মনের যন্ত্রণার কথা প্রিয়তোষকে বললো না। প্রিয়তোষ দোকান থেকে চলে যাবার আগে রমজান চাচাকে বললো,...“চাচা, মেহেবুব চাচিকে বলে রেখো,তাদের ছোট্ট ভাইটা ঈদে কোব্জি ডুবিয়ে খেয়ে আসবে, তার প্রিয় রমজান চাচার বাড়িতে”।- এই বলে প্রিয়তোষ রমজান চাচাকে সেলাম ঠুঁকে ওখান থেকে চলে গেলো। এদিকে চাচা খুবই চিন্তিত। আর মাত্র কয়েকটা দিন পর ঈদ। ছেলে-মেয়েদের পোশাক এখনো কিনে দিতে পারেনি। যেটুকু অর্থ রোজগার হয়, চারটে পেট চালাতে তাদের সংসার ও ঠিক মতো চলে না। তাই রমজান চাচা, আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,.....
“হে আল্লাহ্, তুমি আমার সহায় হন”।- একদিন মেহেবুব চাচি রমজান চাচাকে বললো, ঈদ তো আর একটা দিন বাকি। কি করে এবারের ঈদ আমাদের পালন হবে? রমজান চাচা এই কথাশুনে তাঁর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু বইতে থাকলো। কিছুক্ষণ পর একজন অচেনা লোক দরজায় কড়া নেড়ে বললো, বাড়িতে কেউ আছেন? রমজান চাচা বাড়ির দরজা খুলে দেখে একজন অচেনা লোক,বাইরের দুটো রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অচেনা লোকটি বললো, এগুলো আপনার জন্য প্রিয়তোষ বাবু পাঠিয়েছেন। রমজান চাচা শুনে অবাক! দু’জন অচেনা লোক বললো, একটু হাত লাগিয়ে জিনিস পত্র গুলো বাড়িতে ডুকিয়ে নিন। রমজান চাচা আকাশের দিকে তাকানো, তিনি তাঁর “আল্লাহ্কে কোটি কোটি সেলাম জানালো”। প্রিয়তোষ চাচা,চাচি ও তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য পোশাক ও ঈদের নানান সরঞ্জাম আরো অনেক পোশাক পাঠিয়েছে। সঙ্গে একটা চিঠি, তাতে লেখা,....“চাচা, তোমাদের জন্য এইটুকু কাজ করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। অনেক সরঞ্জাম পাঠালাম। পুরো গ্রামকে নেমন্ত্রণ করো চাচা। এই ঈদ আমাদের সকলের। চাচা সব জিনিস পত্র গুছিয়ে রেখে সেই রিক্সাওয়ালার সঙ্গে চলে গেলো। যাওয়ার আগে স্ত্রী মেহেবুবকে বলে গেলো,....“আমার ছোটো ভাইটার কাছে যাচ্ছি মেহেবুব। ওর জন্য রান্না করো। সকলে একসঙ্গে এসে খাবো।”- রিক্সাওয়ালা রমজান চাচাকে প্রিয়তোষের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেলো। প্রিয়তোষ চাচাকে সামনে দেখে একটু অবাক হলো। চাচা প্রিয়তোষকে দেখে কাঁদতে শুরু করে দিল। প্রিয়তোষ রমজান চাচাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,....“আমার অনেক আছে চাচা। সেই সম্পতি যদি মানুষের কল্যাণে না লাগে তাহলে মরে ও শান্তি পাবোনা।”- প্রিয়তোষ বললো, চাচা আপনার কষ্টের কথা ভোলা আমাকে জানিয়ে ছিল। কোন সমস্যা হলে এই ভাইটা তোমার পাশে আছে। আমার একটা ফ্যাক্টরিতে তোমাকে হিসাব রক্ষকের জন্য আমি বলে দিচ্ছি। ওখানে ঈদের পর তুমি যুক্ত হবে কাজে। আর তেমন তোমার অভাব থাকবে না। রমজান চাচা প্রিয়তোষকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবার কাঁদতে শুরু করলো, প্রিয়তোষ চাচার চোখের অশ্রু মুছিয়ে দিয়ে বললো,...“আর কান্না নয়, অনেক কাজ বাকি আছে। পুরো গ্রাম নেমন্ত্রণ করতে হবে চাচা”।- চলো, প্রিয়তোষ আমরা এবারে খুশির ঈদে সকলে মেতে উঠি। প্রিয়তোষ একটু মুচকি হাসলো চাচাকে খুশি দেখে। এবারে চাচির হাতে বেশি করে সেমাই, লাচ্ছা ও তোমার হাতে বানানো নাড়ু খেতে হবে যে। রমজান চাচা, হো হো করে হেসে উঠলো,...“আমার ভাইটা, এতোটাই মানবদরদী। সকলকে আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়ে তোলে।”- এই বলে রমজান চাচা, প্রিয়তোষকে সঙ্গে নিয়ে রিক্সা করে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct