দেশের কোনো মননশীল বুদ্ধিজীবী কেন এই সরকারের সঙ্গে হাত মেলাতে প্রস্তুত নয়? আট বছর ধরে সরকার চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সরকার স্থিতিশীল, দল নির্বাচনে জয়ী এবং প্রধানমন্ত্রী জনপ্রিয়। সাধারণভাবে এ ধরনের সরকারে বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, চিন্তাবিদ ও লেখকদের সমারোহ থাকা উচিত। কিন্তু এটা ঘটল না কেন? আমার মনে এই প্রশ্ন জাগে যখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন একদিনের জন্য ভারত জোড়ো যাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন। এ নিয়ে লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ প্রথম কিস্তি।
দেশের কোনো মননশীল বুদ্ধিজীবী কেন এই সরকারের সঙ্গে হাত মেলাতে প্রস্তুত নয়? আট বছর ধরে সরকার চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সরকার স্থিতিশীল, দল নির্বাচনে জয়ী এবং প্রধানমন্ত্রী জনপ্রিয়। সাধারণভাবে এ ধরনের সরকারে বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, চিন্তাবিদ ও লেখকদের সমারোহ থাকা উচিত। কিন্তু এটা ঘটল না কেন? আমার মনে এই প্রশ্ন জাগে যখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন একদিনের জন্য ভারত জোড়ো যাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন। যদি দেখেন, বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। অধ্যাপক রাজন কয়েক ঘণ্টার সফরে যোগ দেন, যাত্রীদের সঙ্গে কিছু কথাবার্তা বলেন এবং রাহুল গান্ধির সঙ্গে খানিকটা সময় কাটান। তিনি এই যাত্রায় যোগদানকারী প্রথম বিশিষ্ট ব্যক্তি নন। তাঁর আগে প্রাক্তন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল রামদাস, প্রাক্তন বিচারপতি কোলসে পাতিল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ টিএম কৃষ্ণ, বিশিষ্ট কবির গায়ক প্রহ্লাদ টিপানিয়া, প্রখ্যাত ভাষাবিদ গণেশ দেবীর মতো মানুষেরা এই পদযাত্রায় যোগ দিয়েছেন। কিন্তু রঘুরাম রাজন যোগ দেওয়ায় তোলপাড় হল। বিজেপির একজন মুখপাত্র তাঁর ‘বিতর্কিত’ পদক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য করেন। টিভি চ্যানেলগুলিও সেই সন্ধ্যায় ওই বিতর্ক নিয়ে আলোচনা করেছিল। আমাকেও ডাকা হয়। আমি বললাম, বুঝতে পারছি না এর মধ্যে কোনো বিতর্ক আছে। অধ্যাপক রঘুরাম রাজন কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব নন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হওয়ার আগেও তিনি বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত অর্থনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত ছিলেন এবং আজও বিবেচিত হন। আমেরিকায় শিক্ষকতা করলেও ভারতের নাগরিকত্ব এখনও তাঁর রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর থাকাকালীন তিনি এমন কিছু করেননি যাকে বিতর্কিত বলা যায়। হ্যাঁ, যারা জনগণের টাকা লুট করেছে এবং ব্যাঙ্কের ঋণ আত্মস্যাৎ করেছে, সেইসব ধনীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । রঘুরাম রাজন যাত্রায় যোগ দেওয়ার পর বড় ধরনের কোনো বিতর্কিত বক্তব্য রাখেননি। শুধু বলেন, যা তিনি ইতিমধ্যে বলেছেন এবং যা এখন যারা অর্থনীতি বোঝেন না তারাও বোঝেন। তার মানে, নোটবন্দি একটি তুঘলকি সিদ্ধান্ত ছিল। একজন ভারতীয় নাগরিক হওয়ায় দেশের রাজনীতি সম্পর্কে মতামত তৈরি করার এবং প্রকাশ্যে বলার অধিকার রঘুরাম রাজনের রয়েছে। তবুও সফরের সময় এবং রাহুল গান্ধির সঙ্গে রেকর্ড করা কথোপকথনে তিনি রাজনীতি নিয়ে কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করেননি। একটি রাজনৈতিক দল আয়োজিত যাত্রায় তাঁর অংশগ্রহণ কোনোভাবেই ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত গভর্নরের মর্যাদার লঙ্ঘন নয়। মজার ব্যাপার হল, যে বিজেপি এই নিয়ে লাফালাফি করেছে, তারা প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংকে একজন সাংসদ এবং মন্ত্রী বানিয়েছে। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে অবসরের পরপরই রাজ্যসভার সাংসদ করেছে। না জানি কতজন আমলাকে রাজনীতিতে আনা হয়েছে। সেই দলের মুখপাত্র যখন পদযাত্রায় রঘুরাম রাজনের অংশগ্রহণে আপত্তি তোলেন, তখন তা ভণ্ডামির চেয়ে বেশি ঈর্ষা বলেই মনে হয়। যেন তারা বলছে, কেন রঘুরাম রাজন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেননি। অথবা তারা মনে মনে মোদিজিকে গালমন্দ যে কেন তিনি নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রঘুরাম রাজনের সতর্কবাণীকে গুরুত্বের সঙ্গে নেননি।
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: শ্রেয়ণ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct