আজব পাথর আল নসলা
ফৈয়াজ আহমেদ
মরুভূমির ধূ ধূ প্রান্তরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে একটি বিশাল পাথরখণ্ড। তার ঠিক মাঝখানে উপর থেকে নিচে এক ইঞ্চিরও কম ফাঁক। যেন মসৃণ ভাবে ছুরি চালিয়ে কেটে দুইভাগ করে দিয়েছে পাথরটিকে। দুই ভাগের পাদদেশে অতি সামান্য অংশ জুড়ে রয়েছে। সৌদি আরবের মরুভূমিতে চার হাজার বছরের পুরনো আল নসলা নামের এই পাথর ঘিরে কৌতূহলের অন্ত নেই। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন একটি পাথরকে কেটে দুইভাগ করা হয়েছে। কীভাবে পাথরের মাঝখানে এতো মসৃণ ফাঁক তৈরি হলো? তা নিয়ে নানা জনের নানা মত। অনেকের দাবি, ভিন্গ্রহীরাই লেসাররশ্মি দিয়ে এ পাথর কেটে দুইভাগ করেছেন। অনেকের আবার দাবি, প্রাকৃতিক কারণেই ক্ষয়ের জেরে এমন ফাঁক হয়েছে আল নসলায়। তবে এত বড় পাথরের মাঝে প্রায় নিখুঁত ঐ ফাঁকটি তৈরি হলো কীভাবে? আজও তার সদুত্তর মেলেনি। সৌদির তাবুক প্রদেশের তায়মা ( অনেকে বলেন, তেমা) মরূদ্যানে এই পাথরটি দেখা যায়। এর গায়ে তাম্র যুগের অসংখ্য আঁকিবুকি ছড়িয়ে রয়েছে। পাথরের ফাঁক ঘিরে প্রশ্নের মতোই সে সব নিয়েও একাধিক তত্ত্ব রয়েছে।
আরবদেশের রাজধানী রিয়াধ থেকে গাড়ি করে ৮ ঘণ্টায় পৌঁছনো যায় আল নসলায়। ইতিহাস বলে, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময় ব্যাবিলনের সম্রাট নেবোনিদাসের প্রাসাদ ছিল তায়মায়। আধুনিক যুগে তায়মার মরূদ্যানটি মদিনা থেকে আল-জওয়াফ যাওয়ার দিকে বাণিজ্যপথে পড়ে। ফলে পর্যটকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কাছেও এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আল নসলাকে নিয়ে ভূবিজ্ঞানী বা ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে আমজনতারও কম কৌতূহল নেই। এই পাথরটির সঙ্গে নিজস্বী বা ছবি তোলার জন্যও নাকি বহু পর্যটক সেখানে ছুটে যান। সংবাদমাধ্যমের নানা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আল নসলার উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। লম্বায় এবং চওড়ায় তা আবার ছাড়িয়েছে যথাক্রমে ৩০ ও ২৫ ফুট। দূর থেকে এই পাথরের খাঁজটি দেখে মনে হয় যেন একটি ঘোড়ার উপরে সওয়ারি বসে রয়েছেন। পাথরের গায়ে খোদাই করা যে সব আঁকিবুকি পাওয়া যায়, সেগুলো প্রায় চার হাজার বছরের পুরনো বলে দাবি। আল নসলাকে ঘিরে সমাজমাধ্যমে নানা তত্ত্ব ভেসে বেড়ায়। কীভাবে পাথরের মাঝখান দুই ভাগ হলো, তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে এক ভূবিজ্ঞানীর দাবি, বরফ গলে গিয়ে ঐ ফাঁক হয়েছে। যদিও তার তত্ত্ব মানতে নারাজ অনেকে। লম্বায় এবং চওড়ায় তা আবার ছাড়িয়েছে যথাক্রমে ৩০ ও ২৫ ফুট
ভূবিজ্ঞানীর তত্ত্ব খারিজ করে তাদের পাল্টা প্রশ্ন, পাথরের খাঁজ এতো নিখুঁত এবং মসৃণ হয় কীভাবে? যদিও তাদের তত্ত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঐ তত্ত্ব অনুযায়ী, এটি পৃথিবীতে পা রাখা ভিন্গ্রহীদের কাজ। প্রাচীন কালে ভিন্গ্রহীরা নাকি পৃথিবীতে এসে একটি বিশাল আকারের লেসার দিয়ে ঐ পাথরটিকে কেটে দুই ভাগ করেছিলেন। আল নসলাকে ঘিরে এমনও তত্ত্ব শোনা যায়। স্বাভাবিক ভাবেই তত্ত্বও উড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে। যুক্তিবাদীদের হারিয়ে আল নসলাকে ঘিরে জল্পনা থামেনি। সমাজমাধ্যমে তো একজন বলেই ফেলেছেন, কোনো দূরের গ্রহের প্রাণী এখানে এসে একটা সুপার লেসার পয়েন্টার নিয়ে এলোমেলো ভাবে তা চালিয়ে দিয়েছেন। দুর্ঘটনাবশত তা পড়েছে ঐ পাথরের উপর আর তা কেটে দুইভাগ হয়ে গিয়েছে। অনেকে আবার দাবি করেন, ঝোড়ো হাওয়া, বৃষ্টি, বালির ঝড় এবং জলধারা প্রভাব- সব মিলিয়েমিশিয়ে আল নসলায় এ ধরনের খাঁজ তৈরি করেছে। এক জন সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীর মতে, এই পাথরে খাঁজ কীভাবে তৈরি হলো, তা নিয়ে কারও ঠিক ধারণা নেই। তবে অনেকের মতে, ইতিহাস বইয়ে যা লেখা থাকে তার থেকে বেশি উন্নত ছিল প্রাচীন সভ্যতা।
তথ্যসুত্র: ইন্টারনেট
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct