নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আবেদনের শুনানি চলে বৃহস্পতিবার । এদিন টেট চাকরিপ্রার্থীদের অনশন আন্দোলনের জায়গায় রাজ্যকে পুলিশ মোতায়েন করার নির্দেশ দিল আদালত । প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কর্মীদের যাতে নিশ্চিন্তে কাজে যোগ দিতে পারেন, রাজ্যকে পুলিশের সাহায্য নিয়ে তারই ব্যবস্থা করতে হবে বলে আদালত জানিয়েছে। অর্থাত্, পুলিশ আন্দোলনকারীদের অবস্থান-বিক্ষোভ সরিয়ে দেবে, এমন কোনও নির্দেশ আদালতের তরফে দেওয়া হয়নি।যাতে পর্ষদের কর্মীরা নিশ্চিন্তে অফিসে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন, সেই পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট ।গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে দ্রুত শুনানি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ তা মানেনি, মামলা দাখিল করে পর্ষদ কে তাদের আবেদন জানাতে বলেছিল আদালত। গত বুধবার মামলা দাখিল হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তার শুনানি হলো কলকাতা হাইকোর্টে। গত সোমবার থেকে সল্টলেকের করুণাময়ীতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ২০১৪ সালের টেট চাকরিপ্রার্থীরা । এই চাকরিপ্রার্থীদের আমরণ অনশন ও ধর্নার বিরোধিতা করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে পর্ষদ।
কলকাতা হাইকোর্টের কাছে দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয় পর্ষদের তরফ থেকে। তবে দ্রুত শুনানির আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল হাইকোর্ট।টানা চারদিন এই ধর্না চালাচ্ছেন এইসব প্রার্থীরা।প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দাবি, -' এই আন্দোলনের জেরে দফতরে ঢুকতে পারছেন না কোনও কর্মী। এরফলে অফিসের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনেও একই অভিযোগ করেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল। এই বিষয়টি আদালতে জরুরি ভিত্তিতে গত বুধবার শোনার আবেদন জানান পর্ষদের আইনজীবী।ওইদিন পর্ষদের এই আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলা দায়ের করে আসতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, 'এত দ্রুত শুনানির কী আছে? এতদিন আন্দোলন চলছে, আর এক দিন চললে এমন কী অসুবিধা হবে?' প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বক্তব্য , -' আন্দোলনের জেরে কোনও কর্মী ঢুকতে পারছেন না। এরফলে কোনও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না'। পাশাপাশি অফিস কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার আবেদনও জানায় পর্ষদ ।উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার প্রাথমিক মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে নাটকীয় মোড় নেয়,কলকাতা হাইকোর্টের সিংহভাগ নির্দেশিকার ওপর অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত । প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল সাংবাদিক বৈঠক করে স্পষ্ট জানিয়েছেন -' ২০১৪-র টেট উত্তীর্ণ আন্দোলনকারীদের দাবি আইনসম্মত নয়। অন্যায্য দাবি করছেন তাঁরা'। ২০১৪-র টেট উত্তীর্ণদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে অনুরোধ করেন তিনি। তিনি আরও বলেছেন ,- 'নীতিগতভাবে নিয়োগ দেওয়া যায় না। কারণ, ২০১৬ সালের নিয়োগ নীতি আইন মেনেই নিয়োগ করতে হবে।
আজকে যারা নন-ইনক্লুডেড ক্যানডিডেট, তাঁরা পর পর দুবার ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তাঁরা এমপ্যানেলড হননি। এখন আইন মেনেই নিয়োগ করতে হবে। তাই নন-ইনক্লুডদের নিয়োগ দেওয়া যায় না।প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাও চাকরির দাবিদার। ১৬,১০১ জনের প্রশিক্ষণ রয়েছে। টেট পাস সকল প্রার্থী যদি বয়স থেকে থাকে, তবে সবাই-ই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আর ৪০ বছর বয়স হয়ে গিয়ে থাকলে, সেক্ষেত্রে বয়সসীমায় ছাড় দিলে তাঁরাও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন। তবে সেই ছাড় দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার'। গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে প্রাথমিকে ২৬৯ জনের চাকরি বাতিলের হাইকোর্টের নির্দেশের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট জানায় - ' আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কারও চাকরি বাতিল করা যাবে না। চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে ওই ২৬৯ জন প্রাথমিক শিক্ষকদের'। বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টে টেট প্রার্থীদের ধর্নার বিরুদ্ধে পর্ষদের আবেদনের শুনানি চলে।সেখানে পর্ষদ কর্মীদের অফিসে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পুলিশ কে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct