নিজস্ব প্রতিবেদক, কালিয়াচক: ভরা বর্ষার মরশুম। অথচ দেখা নেই গঙ্গার রূপোলি শস্যের। হতাশ কালিয়াচক-৩ ব্লকের মৎস্যজীবীরা। ইলিশের আশায় রোজ জাল, নৌকো নিয়ে গঙ্গাবক্ষে পারি দিয়ে দীর্ঘ সময় কাটান মাছ ধরার পেছনে। ৩-৪ দিন পর হয়ত একটা ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তাও ৬০০-৭০০ ওজনের মতো। ১ কেজি কিংবা তার ওপর ইলিশ দুষ্প্রাপ্য বলা চলে। মৎস্যজীবীরা বছরভর বসে থাকেন এই বর্ষা মরশুমের জন্য। এই সময় ইলিশের দেখা মেলে। কিন্তু ভরা বর্ষাতেও দেখা নেই ইলিশের। বর্ষার বৃষ্টির সাথে সাথে গঙ্গায় বাড়তে থাকে ইলিশ। জল বাড়ার পাশাপাশি বন্যায় প্লাবিত হলেও ইলিশের সেই অর্থে দেখা নেই। সাধারণত মালদাবাসীর কাছে গঙ্গার ইলিশ বলতে ফরাক্কার ইলিশই বোঝায়। স্বাদে, গন্ধে ফরাক্কার ইলিশ খানিকটা ওপার বাংলার ইলিশের সমান প্রায়। সে-দিক থেকে ফরাক্কার ইলিশের চাহিদা ব্যাপক। যদিও দামও থাকে চড়া। সাধারণত বর্ষার মরশুমেই ফরাক্কার ইলিশের পর্যাপ্ত দেখা মেলে। আর এই ইলিশের ওপর ভরসা করে সংসার চলে কালিয়াচক-৩ ব্লকের কয়েক হাজার জেলে সম্প্রদায়ের মানুষের। সংশ্লিষ্ট ব্লকের গঙ্গার পার ঘেঁষে হোসেনপুর, সুজাপুর দিয়ারা, ভাঙাটোলা, চকবাহাদুরপুর, কুলি দিয়ারা, পারলালপুর। এসব গ্রামের সিংহভাগ বাসিন্দাই মৎস্যজীবী। তুলনামূলক ভাঙাটোলা, সুজাপুর দিয়ারায় মৎস্যজীবীর সংখ্যাটা বেশি। অন্য সময় দু’একটা মাঝে মধ্যে ইলিশ মিললেও বর্ষার মরশুমই ইলিশের আদর্শ সময়। কালিয়াচকের এক মাছবিক্রেতা চাপলু চৌধুরি বলেন, ‘বর্ষা এখন মধ্য গগনে। অথচ দেখা নেই ইলিশের। বাজারে অল্প কিছু ইলিশ আসছে। এই সময় প্রচুর ইলিশ আসার কথা। যে দু’একটি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে পাইকারি দামই আকাশছোঁয়া। আশা করি কিছুদিন পর পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা মিলবে।’ ফরাক্কা ইলিশের চাহিদা এখন তুঙ্গে। দাম তাই আকাশছোঁয়া। খোলা বাজারে ৫০০ গ্রাম ফরাক্কার ইলিশের দাম ১৫০০ টাকা। এক কেজির ওপর দাম ২ হাজার টাকা। আবার দেড় কেজি ওজন ইলিশের গড়ে দাম প্রায় ২৪০০ টাকা। ২ কেজি ওজনের ইলিশের দাম তিন হাজার টাকা।
কালিয়াচক-৩ ব্লক মৎসজীবী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক মঙ্গলচন্দ্র সরকার বলেন, ‘এখন ছিটছাট ইলিশ উঠছে। একসময় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মৎসজীবীরা এই সময় ইলিশ ধরার জন্য গঙ্গার ধারে ভিড় জমাতেন। এখন গঙ্গায় ইলিশের আকাল। গঙ্গার জলস্তর বাড়লেও তেমন স্রোত নেই। তাই হয়ত ইলিশের দেশা সেই অর্থে নেই। তবুও আশায় রয়েছি।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct