আচার ও আমসত্ত
মোঃ আব্দুর রহমান
চালের উপর ঢাপুস-ঢুপুস আমপড়া শব্দে, ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো আপন-স্বপন দুই জমজ ভাই। ওরা দুজনেই পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ে। লেখা পড়ায় দুজনেই সমানে সমান। আপনের এক আর স্বপনের দুই।খেলাধুলাতেও দুজন মিলে স্কুল, মাঠ,বাড়ীটা একদম মাতিয়ে রাখে। একজন মেসি আর একজন রোনালদো!একজনকে ছাড়া আর একজন খায়না, পড়েনা এমনকি ঘুমায়ওনা।টাটাটানি ও গলাগলি করে কেটে যায় দুই চড়ুই পাখির দিন।ঠিক এখনও একসাথে কৈ মাছের মতো ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো। ছুটির দিনে ঝটপট দরজা খুলে বাহিরে এলো। ওমা অনেকগুলি লালটুকটুকে পাকা আম সারা উঠোনে ছড়িয়ে আছে। অবশ্য এর মধ্যেকিছু কাঁচা আমও রয়েছে। কোন কথা নেই, দুইভাই মিলে এক বালতি আম কুড়িয়ে মাকে তাক লাগিয়ে দিলো! মা দুঃখ করে বললো, আহারে এতগুলি আম নষ্ট হবে! আপন বললো,না মা একটি আমও নষ্ট হবে না। মা অবাক হয়ে তাকালো!তাহলে এতো আম কে খাবে শুনি? শোন মা, এই পাকা আমগুলি দিয়ে আমসত্ত্ব তৈরি করে নাও মা। আমরা সারা বছর স্কুলে যেয়ে বাজারের জিনিস না খেয়ে, কামড়িয়ে-চুসে এই মিষ্টি আমসত্ত্বগুলি মজা... করে খাবো। এবার স্বপন বললো, মা আর কাঁচা আমগুলি দিয়ে একটু আচার বানিয়ে রাখোনা মা। বিভিন্ন মসলা মেখে আর খাঁটি সরিষার তেলে ভিঁজিয়ে কত্তো সুন্দর আচার হবে! আমরা হাতের তালুতে নিয়ে চেটেচেটে খাবো। কি মজাটাইনা হবে।
এর মাঝেই ওদের বাবাও বললো, হ্যাঁগো- আপন-স্বপন ঠিক বলেছে। আমগুলি নষ্ট না করে,আমসত্ত্ব আর আচার বানানোর বুদ্ধিটা মোটেও মন্দ নয়। আর আচার দিয়েতো সামনের বর্ষায় খিচুরি দিয়ে খাওয়া যাবে। কি বলো তোমরা? আপন বললো, ও মা শুধু কি তাই..বাবা বিরিয়ানির সাথেও চলবে! স্বপন লাফিয়ে বললো, বাবা গরম ভাত এবং ডালের সাথেতো আরও জমবে! এবার সবাই খুশিতে হাতে তালি দিয়ে উঠলো। তিন বাপ-বেটার হইহুল্লোর দেখে মা বললো, আচ্ছা বাবা ঠিক আছে তোমাদের সকলের প্রস্তাব মেনে নিলাম। তবে আমাকে এগুলি বানানোর জন্য তোমাদের বাবাকে মসলা,খাঁটি সরিষার তেল এনে দিতে হবে। আর তোমাদের দুইভাইকেও কিন্তু আমাকে আজ সহযোগিতা করতে হবে। কি রাজি? বাবা বললো আমরা সবাই রাজি। কারণ একদিন কষ্ট করবো আর সারা বছর মজা করে খাবো। কি তোমরা কি বল? অবশ্যই বাবা আমরাও এক কোটিবার রাজি। আপন বললো,তবে মা আমার একটি পরামর্শ আছে। মাঝে মাঝে আচারগুলিকে একটু রোদ্রে দিয়ে গরম করতে হবে। আর স্বপন বললো, একদম ঠিক বলেছে আমার ভাইটা। মা, আরসাথে সব সময় আচারটা তোলার সময় কষ্ট করে চামচ ব্যবহার করতে হবে। তাহলে আর আচারটা নষ্ট হবেনা।সোনার টুকরোদের মুখে এমন সচেতনতামূলক পরামর্শ শুনে বাবা-মা দুজনেই খুব খুশি হলো! ওদের বাবা বাজারে গেলো। ওরা দুইভাই মায়ের সাথে আম কুটতে লেগেগেলো।কি সুন্দর আচার ও আমসত্ত্ব তৈরি হয়েগেলো। এখন ওরা সারাবছর ইচ্ছেমতো খাবে-দাবে আর ফুর্তি করবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct