উত্তরপ্রদেশে এবারের নির্বাচনে বিজেপির হাসি ফের কান ছোঁবে কি না, বুধবার অনু্ষ্ঠিত চতুর্থ দফার ভোট তা বুঝিয়ে দেবে। রাজ্যের যে ৯টি জেলার ৫৯ আসনের ভোট বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়, সেখানে শেষ পর্ব পর্যন্ত লড়াইটা হবে সেয়ানে সেয়ানে। পা হড়কালে বিজেপির কপালের ভাঁজ গাঢ় হতে বাধ্য। কিন্তু দেড় বছর ধরে কৃষক আন্দোলন রাজ্যে যে ঝড় বইয়েছে, তার খেসারত দিতে হতে পারে বিজেপির। এ নিয়ে লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ শেষ কিস্তি।
উত্তরপ্রদেশে প্রথম তিন দফার ভোট পুরোপুরি বিজেপি বনাম সমাজবাদী জোটের মধ্যে আবদ্ধ থেকেছে। প্রথম দুই দফার নির্ণায়ক যদি জাট, যাদব ও মুসলমান ঐক্য হয়ে থাকে, তাহলে তৃতীয় দফা ছিল পুরোপুরি যাদবভূমির চরিত্রনির্ভর। সমাজবাদী দলের গড় হিসেবে পরিচিত তৃতীয় পর্বে যাদবদের সঙ্গে মুসলমানদের সখ্য এবার দৃঢ়তর হয়েছে। ফলে প্রথম তিন পর্ব বিরোধীদের উৎফুল্ল রেখেছে। বিজেপি ক্ষতি স্বীকারে দ্বিধা করছে না, কিন্তু তাদের ধারণায়, আগেরবার যে বিপুল সমর্থন তারা আদায় করেছিল, তা নিশ্চিতভাবেই এবার তলানিতে ঠেকবে না। ফলে আসন কমলেও লড়াইয়ের আঙিনার ভেতরেই থাকবে তারা। সেটা কতখানি কার্যকর, আজ এবং আগামী তিন পর্ব তা বুঝিয়ে দেবে। এই প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে বিজেপির চেষ্টায় কিন্তু ত্রুটি নেই। বিরোধী জোটের মুখ যেখানে প্রধানত অখিলেশ যাদব ও জয়ন্ত চৌধুরী, বিজেপি সেখানে কার্পেট বম্বিংয়ের মতো হাজির করছে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, জে পি নাড্ডা, যোগী আদিত্যনাথদের। কিন্তু তবু, প্রচারের ঢং দেখে মনে হতেই পারে বিজেপি হয়তো একটু খেই হারিয়ে ফেলছে। প্রচারের অভিমুখ তাই দিনদিন বদলে যাচ্ছে।
যেমন, শুরুর দিনগুলোয় শাসকদলীয় নেতাদের প্রচারে উঠে আসছিল কেন্দ্র-রাজ্য প্রশাসনে ‘ডবল ইঞ্জিন’ বহাল থাকার তাৎপর্য। উদাহরণ হিসেবে দাখিল হচ্ছিল পাঁচ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান। কিন্তু অচিরেই তা বদলে যায়। উন্নয়নের বদলে উঠে আসে মন্দির-মসজিদ, জিন্না-গন্না (আখ), ভাইসাব-ভাইজান, দেশপ্রেম-দেশদ্রোহ, হিন্দুস্তান-পাকিস্তান, হিন্দু-মুসলমান। চতুর্থ দফার প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নিজেই আচমকা টেনে আনেন সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গ। ২০০৮ সালে আহমেদাবাদ বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে সমাজবাদীদের নির্বাচনী প্রতীক সাইকেলের অবতারণা করে বলেন, ‘বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল সাইকেলে। আমি হয়রান হয়ে যাই এটা ভেবে যে সমাজবাদী পার্টির প্রতীক সাইকেলে কেন বিস্ফোরক রাখা হবে?’ এ কথা বলার মধ্য দিয়ে তিনি সমাজবাদী ও সন্ত্রাসবাদের যোগসাজশের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেও ইতিমধ্যেই বলাবলি শুরু হয়েছে, এই উক্তি পশ্চিমবঙ্গের ভোটে মমতাকে ‘দিদি, ও দিদি’ কটাক্ষের মতো ব্যুমেরাং হয়ে উঠবে কি না। অখিলেশও ছাড়েননি। পাল্টা আক্রমণ করে বলেছেন, সাইকেলের অপমান মানে সাধারণ মানুষের অপমান। মানুষই জবাব দেবে। চতুর্থ দফার প্রচার শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী পঞ্চম দফার প্রচার শুরু করেছেন নতুন বিষয় টেনে। কে জানে, এটাই তাঁর তুরুপের শেষ তাস কি না? ইউক্রেন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রথম তিনি প্রকাশ্যে তাঁকেই ভোট দেওয়ার আবেদন জানালেন। বললেন, বিশ্ব পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক নয়। অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে। এই অবস্থায় দেশের প্রয়োজন দৃঢ় ও কঠোর নেতৃত্ব। দেশবাসীকে সেই নেতৃত্বই বেছে নিতে হবে। এখানেও কেন যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোঁয়া! পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনে তিনিই প্রার্থী। নরেন্দ্র মোদির কণ্ঠেও কি সেই সুর? উন্নয়ন, হিন্দুত্ববাদ, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় মেরুকরণ হয়ে ইস্পাত কঠিন নেতৃত্ব! মরা-বাঁচার লড়াইয়ে বারবার গোলপোস্ট বদল কিসের লক্ষণ? চতুর্থ দফার ভোট সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট করতে পারে। (সমাপ্ত...)
সৌজন্যে: প্র. আ.
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct