দেশের রাজনীতিতে একটি সুপরিচিত প্রবাদ হচ্ছে—দিল্লির ক্ষমতার রাস্তা উত্তরপ্রদেশের মধ্য দিয়ে যায়। এ কথা থেকে বোঝা যায়, ভারতের রাজনীতিতে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে এই রাজ্য সেসব রাজনীতিকের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ যাদের জাতীয় পর্যায়ে বড় আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশের ১৪ জন প্রধানমন্ত্রীর ৯ জনেরই নির্বাচনি আসন ছিল এই রাজ্যে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের বাসিন্দা হলেও তিনি বারাণসী আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন নিয়ে লিখেছেন তালেব রানা।
দেশের রাজনীতিতে একটি সুপরিচিত প্রবাদ হচ্ছে—দিল্লির ক্ষমতার রাস্তা উত্তরপ্রদেশের মধ্য দিয়ে যায়। এ কথা থেকে বোঝা যায়, ভারতের রাজনীতিতে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে এই রাজ্য সেসব রাজনীতিকের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ যাদের জাতীয় পর্যায়ে বড় আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশের ১৪ জন প্রধানমন্ত্রীর ৯ জনেরই নির্বাচনি আসন ছিল এই রাজ্যে। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের বাসিন্দা হলেও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের মন্দির শহর বারাণসী আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সাত দফায় এবার উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই নির্বাচনের শেষ ধাপে ভোটগ্রহণ হবে ৭ মার্চ। আর ভোট গণনা হবে ১০ মার্চ। ৪০৩ বিধানসভা আসনে এবার মোট ভোটার ১৫ কোটিরও বেশি। উত্তর প্রদেশের নির্বাচন হবে চলতি বছরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক চর্চা। লোকসভায় ৮০ জন সাংসদ যান উত্তরপ্রদেশ থেকে। দেশের মধ্যে একটি রাজ্য থেকে নির্বাচিত সাংসদদের সংখ্যা এটিই সর্বাধিক। তবে ভারতের রাজনীতিতে সর্বাধিক আসনসংখ্যার হিসাব ছাড়াও আরো কিছু কারণে এই উত্তরপ্রদেশ গুরুত্বপূর্ণ। হরিয়ানা রাজ্যের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক গিলেস ভেমিয়ারস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, উত্তরপ্রদেশকে ভারতের জাতীয় রাজনীতির ব্যারোমিটার হিসেবে দেখা হয়। ভারতের রাজনীতিতে যেসব চু্ক্তিরেখা আছে তার সবগুলো উত্তর প্রদেশে আছে। যেমন জাতপাতের বিভাজন আছে, তেমনি ধর্মীয় মেরুকরণও আছে। আবার সাম্প্রদায়িকতা আছে, রাজনৈতিক সহিংসতাও আছে। এই রাজ্যের রাজনৈতিক যে হিসাব-নিকাশ আছে তা ভারতের জাতীয় রাজনীতিতেও রয়েছে। যে কারণে ভারতের রাজনীতির গতিবিধির একটি সহজ ধারণা এই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পাওয়া যায়। বর্তমানে এই রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ। তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এবার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি। ভারতের প্রধান বিরোধী দল ন্যাশনাল কংগ্রেসও এবারের নির্বাচনে লড়ছে। তবে জনমত জরিপের ফল বলছে গতবারের চেয়ে তাদের বেশি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা এবার কম।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে দ্বিমুখী লড়াই দেখা যাবে। নয়াদিল্লি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো নিরঞ্জন সাহুর মতে, এ কারণেই এবার বিজেপির পরাজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বিজেপি বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছে। তবে তারা যদি উত্তর প্রদেশে হারে তবে তা দলটির জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হবে। যারা ভারতের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক ফোর্স হিসেবে রয়েছে। সাহুর মতে, রাজধানী নয়াদিল্লির কাছের এবং সবচেয়ে বড় রাজ্য হিসেবে অন্যসব রাজ্যের চেয়ে উত্তর প্রদেশ অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির হার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে বড় ধরনের মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা দেবে। যারা বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হতে এখন রীতিমতো ধুকছে। একই সঙ্গে এই রাজ্যে হার বিজেপি জোটের শরিক দলগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলবে। অনেক শরিক দল তখন নতুন সম্ভাবনা দেখবে এবং জোট থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। আর এটা হলে রাজনীতিতে দুর্বল হয়ে পড়বে বিজেপি। তবে ভেমিয়ারসের মতে, উত্তরপ্রদেশে ধাক্কা খেলেও ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্যে কোনো পরিবর্তন এখনই আসবে না। এর কারণ জাতীয় পর্যায়ে এখনো বিজেপির অবস্থান প্রশ্নাতীত। এবারের নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের সামাজিক অস্থিরতা এবং জাতীয় সমস্যারও প্রতিফলন থাকবে। গত ৫ বছরে উত্তর প্রদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে। জাতপাতের বিভাজন বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রায়ই মুসলিমদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে বেশ কিছু আইন পাশ হয়েছে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠদের পক্ষেই গেছে। ভেমিয়ারসের মতে, যখন আমরা ভারতে গণতান্ত্রিক বিচ্যুতির কথা বলি তখন আমরা দেখি সবচেয়ে এর অতিরঞ্জন হয়েছে উত্তরপ্রদেশেই। তাই এবারের এই নির্বাচন ২০২৪ সারের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি অগ্নি পরীক্ষা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct