আপনজন ডেস্ক: দিন কয়েক আগে ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ে আক্রমণ করে বিজেপি সমর্থকরা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ত্রিপুরায় তৃণমূলের জমি পাওয়াটা ততটা সহজ হবে না। শনিবারও তার প্রমাণ মিলল। ত্রিপুরার আমবাসায় যাওয়ার পথে তৃণমূলের ছাত্র নেতা সুদীপ রাহা, জয়া দত্ত, যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের উপরে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ।। এই ঘটনায় আহত হন সুদীপ রাহা। মাথা ফাটে জয়া দত্তর। যদিও এই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। এর পাশাপাশি ধর্মনগরে তৃণমূলের একটি কার্যালয়েও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ।
দলীয় যুব কর্মীদের উপর এই আক্রমণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ট্যুইটে লিখেছেন, 'এই অত্যাচার আপনার অমানবিকতার প্রমাণ। যা খুশি করে নিন। ত্রিপুরায় তৃণমূল এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বে না।'
তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষও ট্যুইটারে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ত্রিপুরায় আমাদের সহকর্মীরা আক্রান্ত, রক্তাক্ত। গণতন্ত্রকে হত্যা করছে বিজেপি। তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন আঙুল চুষবে?’
তবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জখম নেতৃত্বের ছবিও পোস্ট করেন। তাতে দেখা যায় সুদীপ রাহা মাথা ফেটে গিয়েছে। জয়ারও গাল কেটে গিয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। জানা যায়, এদিন ধর্মনগরে যাচ্ছিলেন দেবাংশু, সুদীপ, জয়া-সহ ত্রিপুরার তৃণমূল নেতৃত্ব। অভিযোগ, তখনই রাস্তায় তাঁদের উপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। প্রথমে গাড়িতে ইট মারা হয়। এরপর লাঠি, রড দিয়ে হামলা করা হয় বলে।
এ ব্যাপারে তৃণমূলের ত্রিপুরা রাজ্য সভাপতি আশিস লাল সিংহ অভিযোগ করেছেন, দেবাংশু, সুদীপ, জয়া দত্তরা সাংগঠনিক কাজে ধলাই জেলা সফর করেন। তারা আমবাসায় ঢকুতে না ঢুকতেই বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে তাদের গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। ইট, পাথর ছোড়ে।
আশিস লাল বলেন, ত্রিপুরার বিজেপি তৃণমূল আতঙ্কে ভুগছে। তাই এই বর্বরোচিত আচরণ।
এই ঘটনার জেরে আমবাসার জাতীয় সড়কে শ পাঁচেক তৃণমূল সমর্থক পথ অবরোধ করেন। ফলে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, ধর্মনগরে তৃণমূলের উত্তর জেলা কমিটির সভাপতি আইনজীবী বাচিত খানের বাড়ি তথা দলীয় অফিস ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে বিজেপির দিকে। এই ঘটনায় তৃণমূল সমর্থকরা পথ অবরোধ করলে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের কনভয় অাটকে পড়ে। অবশেষে বিপ্লব দেবকে ঘুরপথে হেলিপ্যাডে পৌঁছতে হয়।
তবে, এই ঘটনায় তৃণমূলের সঙ্গে গলা মিলিয়ে নিন্দা জানিয়েছে ত্রিপুরা সিপিএম।
ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বিবৃতিতে এই দুই ঘটনারই তীব্র নিন্দা করে বলা হয়েছে, ‘আমবাসা ও ধর্মনগর শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কর্মী এবং অফিসের উপরে রাজ্যের শাসক দল বিজেপি-র দুর্বৃত্ত বাহিনীর ফ্যাসিস্টসুলভ আক্রমণের তীব্র নিন্দা করা হচ্ছে। বিজেপি রাজত্বে রাজ্যে ভারতের সংবিধানে প্রদত্ত মত প্রকাশের, সংগঠন করার অধিকার, আইন- গণতন্ত্রের কোন অস্তিত্ব নেই- তা সমগ্র দেশবাসীর সামনে আবারও উন্মোচিত করেছে। এ ধরনের ফ্যাসিস্ট সুলভ আক্রমণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সমস্ত গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের প্রতি সিপিএম আহ্বান জানাচ্ছে।’
প্রথমে আইপ্যাকের দলকে হোটেল বন্দি করে রাখা, তারপর অভিষেকের কনভেয়ে আক্রমণ, আর সবশেষে তৃণমূলের যুব নেতা-নেত্রীদের উপর আক্রমণের ঘটনায় ত্রিপুরা বিজেপি বুঝিয়ে দিচ্ছে, তারা কোনওভাবেই তৃণমূলকে ত্রিপুরার এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি নয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct