প্রথমেই ঝাড়খণ্ডের পরিচয় দিই, ঝাড়খন্ড ভারতের একটি রাজ্য, এই রাজ্যের রাজধানী হল রাচি।এ রাজ্যটি বিহারের দক্ষিণাংশ থেকে আলাদা হয়ে২০০০ সালের ১৫ নভেম্বর গঠিত হয়েছিল। ঝাড়খণ্ডে এখনকার সাক্ষরতার হার
৬৭.৬ % । এখানকার সরকারি ভাষা প্রথমে হিন্দি এবং দ্বিতীয় হচ্ছে ইংলিশ ভাষা হিসেবে ধরা হয়। বাংলাভাষা বঞ্চিত। অথচ ঝাড়খণ্ডের ৪০ শতাংশ মানুষ বাঙালি। তাদের মাতৃভাষা বাংলা।
এবার আমি ঝাড়খন্ডের যে বিষয়ে কথা বলতে চাইছি, সে বিষয়ে আসি। ঝাড়খণ্ডের মানুষজনদের কথা বলতে গেলেই, আগে উঠে আসে মেয়েদের কথা। আর মেয়েদের কথা মনেই, তাদের সমস্যার কথা বলা। এখানে মেয়েরা আজও পিছিয়ে আছে। কারণ কথায় আছে, মেয়েদের “পায়ে পায়ে দোষ” অর্থাৎ তাদের প্রত্যেক মুহূর্তে, প্রত্যেক পদে, সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
এবার আমি মূল বক্তব্যে আসি, সেটা হলো আমরা যারা ঝাড়খন্ডে এসেছে, তারা দেখতে পেয়েছে, এখানকার মানুষদের জীবনযাত্রা। বিশেষ করে মেয়েদের জীবন। মেয়েরা আজও কিভাবে পিছিয়ে আছে। এখানকার মেয়েদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে, তার মধ্যে একটি বিষয়ে আমি, আলোকপাত করব, সেটা হল “শিক্ষা”।
আমাদের জীবনে সঠিক একজন মানুষ হতে গেলে আগে শিক্ষার প্রয়োজন। আর শিক্ষা, আমাদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। কিন্তু এই শিক্ষা, আজ ও অনেক রাজ্যের মানুষ সহজে উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের মধ্যে ঝাড়খন্ড হল সেই রাজ্য। এখানে আজও মেয়েরা সহজে শিক্ষা লাভ করতে পারে না। তার কারণ হল অনেক রকম বাধা, তাদেরকে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আড়াল করে রেখেছে।
এই অনেকগুলো বাধার মধ্যে প্রধান হল
যোগাযোগ ব্যবস্থা।-এখানে আমরা দেখতে পাব, একটা স্কুল যেতে গেলে, অনেক দূরে যেতে হবে। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা এত খারাপ যে, ঠিকমতো গাড়ি কিংবা বাস কোনটাই পাওয়া সম্ভব নয়। সেহেতু তাদের স্কুলে যাওয়া একটা দুরূহ ব্যাপার।
দ্বিতীয়ত, অভাব, মানুষ বেঁচে থাকতে গেলে, সবার আগে প্রয়োজন খাদ্যের। আর যখন মানুষ অভাব অনটনে দিন কাটায়, তখন তাদের কাছে শিক্ষা, অপ্রয়োজনীয় মানে হয়ে দাঁড়ায়। তাইতো ক্ষুধার্ত মানুষদের কাছে, পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটি মনে হয়। তৃতীয়ত,-সাংসারিক কাজ, মেয়েরা যেন জন্ম নিয়েছে সংসার সামলানোর জন্য। সে বিবাহিত হোক,বা অবিবাহিত মেয়েদের সব সময় সংসারের কাজকর্ম করেই তবেই অন্য কিছু করার কথা ভাবতে পারে, এটাই যেন চির সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাইতো এই ঝাড়খন্ড রাজ্যের মেয়েরা সংসারের কাজকর্ম নিয়েএত ব্যস্ত যে ,স্কুলে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারেনা। চতুর্থত, জীবনযাত্রা অনুন্নত - ঝাড়খন্ডে অধিকাংশ মানুষ আদিবাসী। এমনকি বেশিরভাগ মানুষ জীবন চালায় অনাহারে। কারণ এদের উপার্জন নেই বললেই চলে। আজও এখানকার মানুষ কাঠ কেটে জীবন চালায়। যা শুনলে, আমরা “গল্প” মনে করব। যখন জীবন চালানো এত কষ্টের, তখন কি করে তারা পড়াশোনর দিকে এগোবে?
পঞ্চমত, জ্ঞানের অভাব - আজও ঝাড়খন্ডে অধিবাসীদের মধ্যে, অধিকাংশ মানুষের জ্ঞানের অভাব রয়েছে। তারা মনে করে মেয়েদের শিক্ষার কোন প্রয়োজন নেই তারা শুধুমাত্র সংসারের কাজকর্ম করবে। তাই ঝাড়খণ্ডের মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার কোন উৎসাহ দেখা যায় না।
ষষ্ঠত, অল্প বয়সে বিবাহ - ঝাড়খন্ডে মেয়েদের ক্ষেত্রে অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার প্রচলন আছে। তাই তারা উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করার আগেই, তাদের বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের আগে যদিও বা কেউ স্কুলে যায় কিন্তু স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই তাকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। মেয়েরা আজ ও পিছিয়ে রয়েছে।
সপ্তমত, সচেতনতার অভাব - এখানকার অধিকাংশ মেয়েদের মধ্যে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। তাই তারা শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে না। জীবন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা নিয়ে পড়ে থাকে। এখানে শুধুমাত্র আমি মেয়েদের কথাই বললাম। মানে, অবিবাহিত মেয়েদের কথা। আর বিবাহিত মেয়েদের কথা বলতে গেলে, তাদের এই একই সমস্যা কারণে অল্প বয়সে, বিয়ে করে সংসার করতে হচ্ছে। জীবন মানে তাদের কাছে, কাজ করা,পরিবারের বাকি সদস্যদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া। এটাই যেন তাদের উদ্দেশ্য। তাদের জীবনে শিক্ষার অভাব আছে বলেই অন্য কিছু ভাবা সম্ভব হয় না। ঝাড়খণ্ডের অধিকাংশ মেয়েরা ঘরের বাইরে যে একটা জগৎ আছে ,তা তারা দেখতেই পায় না।সে সম্পর্কে তাদের জ্ঞান অজানাই থেকে যায়। এখানে আমি বলতে পারতাম যে, বাইরের জগতের কথা ভাবা “স্বপ্নের” ব্যাপার তাদের কাছে। কিন্তু আমি এ কথাটা বললাম না, কারণ স্বপ্ন দেখতে হলে সে বিষয়ে জানতে হয়, কিন্তু ঝাড়খণ্ডের অধিকাংশ মেয়েদের পক্ষে বাইরের জগত কি? তা, তাদের কাছে অজানা। তাই তারা স্বপ্ন দেখতে পায় না।
উপরিক্ত নানা সমস্যার কারণে, ঝাড়খণ্ডের মেয়েরা শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে রয়েছে। তাই আমাদের উচিত, ঝাড়খণ্ডের মেয়েদের, শিক্ষার বিষয়ে এগিয়ে আনতে হবে। তাদের কাছে শিক্ষাকে পৌঁছে দিতে হবে। তাদেরকে উৎসাহ দেয়ার জন্য সমাজ সেবক দের এগিয়ে আসতে হবে।
নারী শিক্ষা উন্নত না হলে সমাজ ব্যবস্থা অচল হয়ে যাবে। কারণ, নারী যেমন এক হাতে সংসার সামলায়, তেমনি অন্য হাতে, সমাজকে উন্নত করে তোলে। তাই নারীদের কাছে শিক্ষাকে পৌঁছে দিতে হবে। সর্বোপরি একটা কথাই বলব, নারী শিক্ষা কে উন্নত করতে হবে। আমরা শুধু ঝাড়খণ্ডের মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উন্নত করবো, তা নয়। আমরা দেশের, যেসব জায়গায় ঝাড়খন্ড রাজ্যের মতো, পিছিয়ে পড়ে আছে, সেসব রাজ্যকে ও উন্নত করে তুলবো। এটাই আমাদের শপথ হবে। তাহলে দেশের উন্নতি সমাজের উন্নতি, নারীর উন্নতি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct