আপনজন ডেস্ক: বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র ও আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জিতে গেল তৃণমূল। বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বাবুল সুপ্রিয় বালিগঞ্জ কেন্দ্রে ২০ হাজার ৫৬ ভোটে জিতেছেন আর ‘বিহারি বাবু’ শত্রুঘ্ন সিনহা আসানসোলে এই প্রথম তৃণমূলের হয়ে ঘাসফুল ফোটালেন। ২০১৪ সালে বাম দুর্গ বলে পরিচিত অসানসোলে পদ্ম ফুটিয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। ২০১৯ সালেও জিতেছিলেন। সেই পদ্মঘাঁটি ভেঙে চুরমার করে ঘাসফুল ফোটালেন বিহারিবাবু শত্রুঘ্ন সিনহা। প্রায় তিন লক্ষ ভোটে জিতে বিজেপিকে ভোকাট্টা করে দিলেন। বিজেপি এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে। বিজেপির কাছ থেকে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রটি তৃণমূল কংগ্রেস ছিনিয়ে নেওয়ায় একদিকে যেমন সংসদে তৃণমূলের একজন সাংসদ বাড়ল তেমনি কমল বিজেপির। তবে, এবারের উপনির্বাচনে আসানসোলের ভোটের ফলে তৃণমূলকে উজ্জীবিত করলেও বালিগঞ্জের ফল হতাশ করে তোলার জন্য যথেষ্ট। এর কারণ হল, বাবুল সুপ্রিয়র প্রাপ্ত ভোট। সুব্রত মুখোপাধ্যায় যা ভোট পেয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয় তার অর্ধেক ভোটও পেলেন না। তাই জয়ের মার্জিন ২০ হাজার ৫৬তে সীমাবদ্ধ থাকতে হল। এর মূলে বিজেপির সাংসদ থাকাকালীন বাবুল সুপ্রিয় বিভিন্ন সময়ে মুসলিম বিরোধী মন্তব্য। তাই কলকাতা পুরসভার ভোটে যেখানে সংখ্যালঘুপ্রধান ৬৪ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল ব্যাপক ভোটে জিতেছিল সেখানে এবারের উপনির্বাচনে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। বলা যায়, সংখ্যালঘু ভোটের একটা অংশ ফের শহর কলকাতায় বামেদের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে।শনিবার সকাল থেকেই সবার চোখ ছিল এই বালিগঞ্জ কেন্দ্রে গণনার দিকে। প্রথম রাউন্ডের শেষে ২১৭০ ভোটে এগিয়ে থেকে বাবুল বুঝিয়ে দেন তিনি জিতছেন।
যদিও তার সঙ্গে বিজেপি পাল্লা দিতে না পারলেও নাসিরুদ্দিন শাহের ভাইঝি সায়রা শাহ হালিম টক্কর দিয়েছেন। সপ্তম রাউন্ডে বাবুল সুপ্রিয়কে টপকে যান সায়রা শাহ হালিম। বাবুল এই রাউন্ডে ২৩৩৯টি ভোট পেযেছেন। কিন্তু সায়রা পেয়েছেন ২৮৩১টি ভোট। দশম রাউন্ডেও বাবুলের থেকে হাজারেরও বেশি ভোট পান সায়রা। বাবুল ২৫৫০টি ভোট পেয়েছেন। আর সায়রা পেয়েছেন ৩৫৯৫টি ভোট। এর পর বারো রাউন্ডে বাবুল যেখানে ২০৩৬টি ভোট পেয়েছেন সেখানে সায়রার প্রাপ্তি ২৩০৭টি ভোট। যদিও সার্বিকভাবে কোনও রাউন্ডে এগিয়ে যেতে পারেননি সায়রা। এবারের ফলাফল একটা বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছে, বাবুলকে প্রার্থী করার কারণে মুসলিম ভোটের একটা বড় অংশ সিপিএমের ঝুলিতে গিয়েছে। গত পুরসভার নির্বাচনে ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিপুলভাবে জিতেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের শাম্মি জাহান। তার এলাকার মধ্যে রয়েছে পার্ক সার্কাস এলাকা। সেখানে বাবুল পিছিয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে, ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে আরএসপি থেকে তৃণমূলে যাওয়া নিবেদিতা শর্মা ভাল মার্জিনে জিতেছিলেন। তারে এলাকার মধ্যে পড়ে তিলজলা ও কুস্টিয়া, পাম এভিনিউ। সেখানে কিন্তু মানুষ বাবুলের থেকে বেশি ভোট দিয়েছেন সায়রাকে। বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণে ভোট করতে চাইলেও মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে ৭১ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বাবুলের প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৯.৭ শতাংশ। ৩০. ০৬ শতাংশ ভোট পড়েছে সায়রার ঝুলিতে। বিজেপি ১২.৮ শতাংশ। জাামানত জব্দ হয়েছে বিজেপি প্রার্থীর। কংগ্রেস ৫.০৬ শতাংশ। এই ভোটে বিজেপির রত্ত ক্ষরণ হলেও লাভ পেল সিপিএম। গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমে প্রার্থী ফুয়াদ হালিম পেয়েছিলেন ৫.৬১ শতাংশের মতো ভোট। তার চাইতে অনেক গুণ বেশি ভোট পেলেন তার স্ত্রী সায়রা শাহ হালিম। প্রায় ৩০.১ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি পাওয়ায় বামেদের হয়ে বাজিমাত করেছেন সায়রা এটা বলা যায়।।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct