প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নানা বিষয়ে অভিনবত্বের পথিকৃৎ। যেমন ধরুন, শুধু বিশ্বাসের ভিত্তিতে অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ করা, থালা বাজিয়ে ও মোমবাতি জ্বেলে করোনার হৃদপিণ্ড ফাটিয়ে দেওয়া এবং তারপরে ১০০ কোটি টিকা দিয়ে সেই ফাটা হৃদপিণ্ডকে চৌচির করে দেওয়া, পোশাকে–আশাকে নিত্য-নতুন স্টাইল প্রবর্তন করা ইত্যাদি। বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে তাঁর আলিঙ্গন বা জাপ্টা-জাপ্টি তেমনি এক অভিনব ব্যাপার। এ নিয়ে লিখেছেন দিলীপ মজুমদার। আজ প্রথম কিস্তি।
বাংলা ব্যাকরণে ‘সন্ধি’ বলে একটা ব্যাপার আছে। সেখানে বর্ণের মিলন হয়। দুটো আলাদা শব্দ একটা নতুন শব্দে পরিণত হয়। সাধারণ মানুষ সন্ধির নিয়ম না জেনেও কিন্তু দুটো শব্দকে এক শব্দে পরিণত করে নেয় তাদের উচ্চারণের সুবিধার জন্য। যেমন জামানত + বাজেয়াপ্ত = জামানাপ্ত। এই যেমন এবারের উপনির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রে বিজেপির জামানাপ্ত হয়েছে। তেমনি দুই শব্দের মিলনে তৈরি হয়েছে ‘ হাগপ্লোমেসি’। দুটোই ইংরেজি শব্দ। hug + diplomacy = hugplomacy . ‘hag’ শব্দের বাংলা অর্থ হল আলিঙ্গন। ‘আলিঙ্গন’ সংস্কৃতগন্ধী শব্দ। বাংলায় জাপ্টা-জাপ্টি বা জড়াজড়ি বললে ঠিক ভাবটি বোঝায়। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাপ্টা-জাপ্টির কূটনীতির কথায় এবার যাওয়া যাক।
প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নানা বিষয়ে অভিনবত্বের পথিকৃৎ। যেমন ধরুন , কালোটাকার গুষ্টি-তুষ্টি করা , কোন প্রস্তুতি ছাড়া জিএসটি প্রবর্তন করা , শুধু বিশ্বাসের ভিত্তিতে অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ করা, থালা বাজিয়ে ও মোমবাতি জ্বেলে করোনার হৃদপিণ্ড ফাটিয়ে দেওয়া এবং তারপরে ১০০ কোটি টিকা দিয়ে সেই ফাটা হৃদপিণ্ডকে চৌচির করে দেওয়া, পোশাকে–আশাকে নিত্য-নতুন স্টাইল প্রবর্তন করা ইত্যাদি ইত্যাদি। বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে তাঁর আলিঙ্গন বা জাপ্টা-জাপ্টি তেমনি এক অভিনব ব্যাপার। বিদেশি সংবাদপত্রেও তার চর্চা চলে। মোদীর জীবনী-লেখিকা নীলাঞ্জনা মুখোপাধ্যায় তাঁর Narendra Modi : The Man, The Times ( 2013 ) বইতে এই জাপ্টা-জাপ্টির চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর দ্বারা একটা বার্তা দিতে চান। কি সেই বার্তা ? বার্তাটা হল তিনি যাঁদের সঙ্গে জাপ্টা-জাপ্টি করেন ,তাঁদের সমান তিনি , তিনি তাঁদের বন্ধু। আসলে নরেন্দ্র মোদীবাবু অন্তরের গভীরে রবীন্দ্রনাথের পরম ভক্ত। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন সব ঠাঁই তাঁর ঘর আছে , দেশে দেশে আছে পরমাত্মীয়।
কিন্তু মোদীবাবুর পরকে আপন করার এই অভিপ্রায় বুঝতে পারেন নি গুতেরেস। জি-২০ গোষ্ঠীর বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন মোদীবাবু। ভাটিকানে গিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গেও জাপ্টা-জা[প্টি করে এসেছেন তিনি। ভারতে আসার নেমতন্ন করে এসেছেন। কিন্তু গ্লাসগোয় জলবায়ু সম্মেলনের মঞ্চে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসকে বিয়ার-হাগ করতে যেতে তিনি অস্বস্তি প্রকাশ করলেন। একেই বলে স্বর্গীয় মূর্খতা। তিনি মোদীবাবুর আন্তরিকতা দেখলেন না , দেখলেন না তাঁর বুকের ভেতরের উষ্ণতা। কি এমন ক্ষতি হত, একবার জাপ্টা-জাপ্টির সুযোগ দিলে! (ক্রমশ...)
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct