জৈদুল সেখ, বড়ঞা, আপনজন: “আমি, বাবু দলুই, বিদায় নিচ্ছি। আমাদের সমাজ ও রাজ্য খুব খারাপ”- একরাশ হতাশা, অবসাদ ও ক্ষোভের বহিপ্রকাশ করে সুইসাইড নােট লিখে চির বিদায় নিয়েছেন অষ্টুমীর সকালে এ রাজ্যের গরিব পরিবারের মেধাবী এক চাকরিপ্রার্থী। ঘটনানাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা থানার অন্তর্গত কল্যানপুর দুইনম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে বড্ডা গ্রামে।
শুক্রবার সকাল দশটা নাগাদ বড্ডা গ্রামের সেই পরিবারকে সমবেদনা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন ভারতের যুব ফেডারেশন মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সভাপতি আনোয়ার সাদ্দাত, এসএফআই জেলা কমিটির সভাপতি সাদাত হোসেন এছাড়াও বামপন্থী যুব এবং গণ আন্দোলনের পক্ষ থেকে মানুয়ার হোসেন, হাসিরুল ইসলাম, আবু সালেক, দেলুয়ার হোসেন প্রমুখ্য। এদিন যুব নেতা আনুয়ার সাদাত সাংবাদিকদের বলেন “ খুব দারিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র ছিল বাবু অনেক কষ্টে পড়াশোনা করে পিএসসি পাশ করেও তৃণমূল সরকারের অপদার্থ এবং প্রতারণার জন্যই এই মেধাবী চাকরি প্রার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা মনে করি। কেবলমাত্র তাই নয় প্রাইমারি, আপার, এস এস সি সবেই রাজ্য সরকারের অপদার্থতার জন্য লক্ষ লক্ষ যুবকদের ভবিষ্যৎ এবং অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। “
উল্লেখ্য মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার বড্ডা গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর পরিবারের ছেলে বাবু দলুই। খুব কষ্ট করেই তাঁর বেড়ে ওঠা। বছর সাতেক আগে হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাঁর বাবা। দুই বছর আগে বাবু’র মাও মারা যান। এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাবু’র মেধার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়নি জেদ আর অধ্যাবসায়ে। মাধ্যমিকে ৭৮ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৫ শতাংশ নিয়ে পাশ করার পর ইংরেজিতে স্নাতক হয়ে বাবু দলুই সরকারি কেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ করেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষকের ডিএলএড’র প্রশিক্ষণ। একের পর এক চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি নিজের খরচ চালাতে দিনমজুরি করতেও দ্বিধা করেননি বাবু। পিএসসি ক্লার্কশিপের চূড়ান্ত তালিকায় ছয় হাজারের মধ্যে তাঁর নামও এসেছিল। আনন্দ পেয়েছিলেন বাবু। কিন্তু সেই প্যানেল বাদ হয়ে দ্বিতীয় পুনরায় প্যানেল লিষ্টে আঠারো হাজার পর নাম আসতেই হতাশায় রাজ্য সরকারকে দায়ী করে আত্মহত্যা করে বলেন জানান তার বোন শ্রাবণী দলুই। বোনের আরও অভিযোগ দাদার মৃত্যুর নয়দিন পরও সরকার পক্ষ থেকে কেউ সাহায্য তো দূরের কথা সমবেদনা জানাতেও আসেনি। বীরভূমের রামপুরহাটে বসবাস করা বাবু দলুইয়ের এক জামাইবাবু তমাল দলুই জানিয়েছেন, “কলকাতাতেই ছিল বাবু। বলেছিল একটা কাজ খুঁজছে। পিএসসি’তে নাম আসার পর সে বাড়ি এসে বলেছিল টাইপ শেখার জন্য আমার বাড়িতে থাকতে চায়। টাইপের স্কুলে ভর্তিও করেছিলাম। তারপর সব ওলটপালট হয়ে গেল। পিএসসি’র তালিকা বাতিল হলো। দ্বিতীয় তালিকা বের হল তাতে দেখা গেল বাবুর নাম চলে গিয়েছে আঠারাে হাজারে। খুব ভেঙে পড়ে বাবু। আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যায় গ্রামে। তারপর গত অষ্টমীর ১৩ অক্টোবর সকালে খারাপ খবরটি আসে। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, কলকাতায় অন্য কোনও কাজ নয়, বাবু রাজমিস্ত্রির জোগারের কাজে লেগেছিলেন। পিএসসি’র ফল বের হতেই তিনি মজুরি না নিয়ে আসেন গ্রামে, চাকরি পাওয়ার উৎফুল্লতায়। কিন্তু সেই আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। চাকরি না পেয়ে মানসিক অশান্তিতে ছিল। কিন্তু এই ভাবে নিজের জীবন শেষ করবে আমরা আন্দাজ করতে পারিনি”
প্রসঙ্গত বড্ডা গ্রামের দারিদ্র্য পরিবারের মেধাবী ছাত্র এবারের ডাব্লিউওবিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে, ২০১৭ প্রাইমারি পরীক্ষাও দিয়েছে। গ্রামের আর পাঁচটা ছেলে মতো অযথা ফালতু সময় নষ্ট করত না বলে গ্রামের আত্মীয় পরিজনরা জানালেন। ছোট্ট থেকেই কোণি উপন্যাসের মতো ভিতরের একটা জেদ কিছু করতে হবে কিছু হতে হবে। কিন্তু সরকারের গাফিলতি ভুল সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র স্বপ্নকে নয় জীবনকে শেষ করে দিতে পারে তার প্রমাণ মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার বাবু দলুই। সপ্তমীর রাতে গলায় চাদর লাগিয়ে আত্মহত্যা করার আগে সুইসাইড নোটে ইংরেজিতে লিখেছল “ আই কুইট। বাবু দলুই। আওয়ার সোসাইটি অ্যান্ড স্টেট ভেরি ব্যাড।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct