ড. শান্তনু পাণ্ডা: অতিমারি কোভিড-১৯ কেড়ে নিয়েছে বহু প্রাণ। এই রোগের প্রধান লক্ষণ ছিল শ্বাসকষ্ট। অক্সিজেনের ঘাটতি। অক্সিজেনের অভাবে অনেক প্রাণ চলে গেছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ নেই শুনে শুনে কান ঝালাপালা। যখন ২০২০ সালের মার্চ মাসে গোটা দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা হল, তখন বাস, ট্রেন, ট্রাক অন্যান্য যানবাহন সব বন্ধ। কল-কারখানা ও মিল বন্ধ। পরিবেশ হয়ে উঠেছিল শান্ত ও ক্লান্ত। যে সমস্ত প্রাণীরা আকাশের উড়ে তারা খুব ভালো একটা পরিবেশ পেয়েছিল মুক্ত ভাবে বিচরণ করার। গোটা পৃথিবী যখন স্তব্ধ হয়েছিল তখন অক্সিজেনের মাত্রা বেড়েছিল কিন্তু মানুষের পরিবেশের প্রতি অবহেলা অত্যাচার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করেছে, যার ফল স্বরূপ অক্সিজেনের মাত্রা কমছে ও অভাব দেখা দিচ্ছে। ৫ জুন ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। আমরা সবাই বৃক্ষরোপণ ও গাছ লাগিয়ে দিনটি পালন করি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঘোষণা করেছেন ১৪ জুলাই ২০২১ থেকে ২১ জুলাই ২০২১ বনমহোৎসব সপ্তাহ। অনেকে গাছ লাগিয়ে, আবার কেউ পরিবেশ পরিষ্কার করে, বিভিন্ন সেমিনার আলোচনার মাধ্যমে পালন করছেন। পৃথিবীতে আদি প্রাণ হল “বৃক্ষ”। কেবল মাত্র উদ্ভিদরা বায়ুতে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ নির্ধারকের ভূমিকা পালন করে। উদ্ভিদের ওপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছিল জীবকুলের। এই অতিমারিতে জীবকুলের মধ্যে মানুষ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও মানুষের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত। অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু অতিমারি মানুষকে এবং পরিবেশকে বেশ শিক্ষা দিল। যেমন মানুষের লাগামহীন পরিবেশের প্রতি অত্যাচার; জল দূষণ, বায়ু দূষণের ও শব্দ দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ যত তত্র ফেলে রেখেছিল পরিত্যক্ত খাবারের প্যাকেট যা প্লাস্টিকের তৈরি, ভারী শিল্প নির্গত ধুম এবং গরল, যানবাহন নির্গত ধূম এবং শহরের তরল ও কঠিন বর্জ্য পদার্থ যা বায়ুমণ্ডল মাটি এবং জলকে দূষিত করছে। ধান চাষে ব্যবহৃত কীটনাশক যা মাটি, জল ও বায়ুকে দুষিত করেছে। শহরের জল নিষ্কাশন নালাগুলো আবর্জনা পলিথিন ও প্লাস্টিক এর দ্বারা ভর্তি জল চলাচল বন্ধ পরিষ্কার করা খুব কঠিন; সেখান থেকে নানা জীবানু ও মশা জন্ম নিচ্ছে । আবার দূষিত গ্যাস সৃষ্টি হচ্ছে । শহরে বড় বড় ফ্ল্যাট ও দালান বাড়ি তৈরি হওয়ার ফলে দীর্ঘদিন ধরে নিকাশি বন্ধ। এই সমস্ত বিপর্যয় বায়ুতে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দিচ্ছে। স্বাভাবিক বাতাসে যে পরিমাণ অক্সিজেন থাকা দরকার তা কমে যাচ্ছে, স্থানভেদে তা আরো কমে যাচ্ছে দশ-বারো তালা ফ্লাট তৈরি হওয়ার জন্য ভূ-অভ্যন্তরের জল এর কমতি এবং জলস্তর এর কমতি এছাড়া জলস্তর নিম্নগামী।
এছাড়া মৌসুমী বায়ুর অনিয়মিত আগমন অথবা দেরীতে আগমন এবং মাঝে মাঝে দীর্ঘ বিরতি, অতিরিক্ত খরা, পাহাড়ে ধস ও হ্ড়কা বান, উস্নায়নের ফলে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে যা সমুদ্র উপকূলবরতি স্থলভাগে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সমস্ত অনিমিত্ত বিপর্যয় মানুষের মধ্যে ও পরিবেশের মধ্যে বিশেষ দূষণ তৈরি করে। পরিবেশ দূষণের ফলে বহু উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং কিছু বিলুপ্ত হতে চলেছে। এই পরিবেশ দূষণের মধ্যমণি হলো “মানুষ”। তাই মানুষই পারে এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ করতে- সে মহামারি হোক বা দূষণ হোক। তাই এই অতিমারি কে কেন্দ্র করে যে লকডাউন তাতে আসল প্রকৃতি কে দেখলাম।যেখানে নেই কোন মাইক ও বক্সের আওয়াজ, কার্বন ডাইঅক্সাইড, ধুলো, ধুঁযো, হর্ন, কোলাহল পরিবেশ হযেছে দূষণ মুক্ত।
তাই সরকার ঘোষিত বন মহোৎসব সপ্তাহে প্রচুর গাছ লাগানো ও তার পরিচর্যা হোক শহর থেকে গ্রামে। পরিবেশ রক্ষায় গাছের পাশাপাশি কৃষি ফসলের সবুজয্নের বাতাস প্রচুর অক্সিজেন যোগান দেয় এবং প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। তাই সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে আগামী প্রজন্মকে দূষণ মুক্ত প্রকৃতি দান করতে সমস্ত সচেতন মানুষকে ক্ষতিকর কার্যাবলি থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সমবেত ভাবে সচেষ্ট হতে হবে সুস্থ পরিবেশ রক্ষায়। সব শেষে বলি “গাছই জীবন -গাছ কাটা মানে মৃত্যু”।
লেখক সমাজকর্মী ও কেশপুর কলেজের শিক্ষক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct