জৈদুল সেখ, কান্দি: উচ্চশিক্ষা লাভ করে সরকারি চাকরি না পেয়ে অনেকেই বেছে নিয়েছেন বেসরকারি প্রাইভেট স্কুল, অনেকেই প্রাইভেট টিউশনে কিংবা গৃহশিক্ষকতার কাজে যুক্ত থেকে কোনো রকমে দিন চালান এমনকি পরিবারের সংসারও চালাতে হয়। কিন্তু লকডাউনের ফলে দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ প্রাইভেট টিউশন এবং প্রাইভেট স্কুল যার ফলে আর্থিক সংকটে ভুগছে মুর্শিদাবাদ জেলাসহ পশ্চিমবঙ্গের লক্ষাধিক শিক্ষাজীবী।
যাদের রুটি-রোজগারের প্রধান মাধ্যম এই গৃহশিক্ষকতা বা প্রাইভেট টিউশন, লকডাইনের ফলে তাদের জীবনে নেমে এসেছে দুশ্চিন্তা! বন্ধ পড়াশোনা বন্ধ রোজকার! পরিবার তো দূরের কথা নিজের জীবন চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে!
তাই প্রাইভেট টিউশন খুলে দেওয়ার দাবীতে এবার প্রতীকী প্রতিবাদে নামতে শুরু করেছে প্রাইভেট শিক্ষক সংগঠনের শিক্ষকেরা। বেশ কিছুদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের পর এবার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ প্রাইভেট টিউশন শিক্ষক সংগঠনের। গতকাল সকালে ভারত জাগরন আন্দোলন সংগঠনের পক্ষ থেকে রায়গঞ্জ স্টেশন বাজারে একটি প্রতীকী বিদ্যালয় কর্মসূচি পালন করা হয়। তাদের বক্তব্য সবজি, মাছ, ফলের বাজার, মদের দোকান খোলা, অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ কেন?
সংগঠনের সদস্য বিপ্লব কর্মকার বলেন, দেশের প্রতিটি বিদ্যালয় বিগত প্রায় ১৮ মাস ধরে বন্ধ। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার আঙিনা থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যদি ক্রমশ ছাত্ররা দূরে সরে যায়, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ কিন্তু একেবারেই অন্ধকার হয়ে যাবে। তাই করোনা বিধি মেনে, যেকোনো একটি সুনির্দিষ্ট উপায় বের করে, বিদ্যালয় খোলার বন্দোবস্ত করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
জীবন্তি চেতনার প্রাইভেট শিক্ষক প্রীতম মন্ডল বলেন, আমাদের এক বছর ধরে রোজকার বন্ধ, এরকম তো চলতে পারে না! এই ভাইরাস যদি আরো পাঁচ বছর থাকে, তাহলে কি পাঁচ বছরের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে ? এমনই প্রশ্ন তুলেন আরো অনেকেই।
গৃহশিক্ষক তোকাজ্জুমান সাকিব সেখ বলেন, আজ বাজার, হাট, এমন কী রমরোমিয়ে চলছে মদের দোকান! সব খোলা অথচ বন্ধ আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিন্তু কেন? তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘করোনাভাইরাস কি এত শিক্ষিত যা হাটে-বাজারে যায় না! মদের দোকানে যায় না! শুধুমাত্র স্কুল খোলার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে! আসলে এটা একটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাইভেট টিউশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি মুর্শিদাবাদ জেলার কার্যকারি সভাপতি মানস মুকুল সরকার বলেন, এই লকডাউনের মধ্যে বাড়িতে বসে সরকারি স্কুল শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছে, উপরি ইনকাম হিসেবে টিউশন পড়াচ্ছে। তাই আমরা সর্বপ্রথম দাবি জানাচ্ছি যে সরকারি স্কুলশিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা করা বন্ধ করা হোক। প্রোজেক্টের প্র্যাকটিক্যালে ছাত্র ছাত্রলীদের ভয় দেখিয়ে ভাগ বসাচ্ছে সরকারি স্কুল শিক্ষকরা। এরকম চলতে থাকলে গৃহশিক্ষক আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এই গৃহশিক্ষকতা পেসার কোনো মর্যাদা নেই। আমরা গৃহশিক্ষকতা মর্যাদা দাবি করছি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct