আপনজন ডেস্ক: ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন দেশটির প্রধান বিচারপতি সাইয়েদ ইব্রাহিম রইসি। শনিবার ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক প্রাথমিক ফলাফলে তার দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জামাল আরাফ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট দুই কোটি ৮৬ লাখ ভোটার অংশ নিয়েছেন।
এর মধ্যে ৯০ ভাগ ভোট গণনার পর প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী ৬২ ভাগ ভোট পেয়ে জয়ী হচ্ছেন ইব্রাহিম রইসি। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা এক কোটি ৭৮ লাখ। তার নিকটবর্তী মোহসিন রেজায়ি পেয়েছেন ১১ ভাগ ভোট। তিনি পেয়েছেন ৩৩ লাখ ভোট।
একমাত্র সংস্কারপন্থী প্রার্থী ও ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান আবদুন নাসের হেমমাতি পেয়েছেন আট ভাগ ভোট। তিনি ২৪ লাখ ভোট পেয়েছেন। চতুর্থ প্রার্থী আমির হোসাইন কাজীজাদেহ হাশেমি ৩ ভাগ ভোট। তিনি প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১০ লাখ।
এর আগে শুক্রবার ইরানজুড়ে একটানা ১৯ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ করা হয়। স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় দেশটির ৭৩ হাজার পাঁচ শ’ ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঁচ দফায় সন্ধ্যা ৭টা, রাত ৯টা, রাত ১০টা, রাত ১২টা ও দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত ভোট নেয়ার সময় বাড়ায় ইরানি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইরানে মোট পাঁচ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার তিন শ’ সাতজন নিবন্ধিত ভোটার রয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া হিসাব অনুযায়ী মোট ভোটারের ৪৮.২৩ ভাগ ভোটার নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, যা দেশটির ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিম্নতম ভোটার অংশ গ্রহণের রেকর্ড।
এই বছর আগে থেকেই ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা করা হয়েছিল। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, করোনা মহামারী ও জনপ্রিয় কয়েক জন প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন না পাওয়ায় ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অন্যবারের তুলনায় কম হয়েছে।
এর আগে ১৯৯৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিত হয়েছিলেন। ওই সময় দেশটির মোট ভোটারের ৫০.৬৬ ভাগ নির্বাচনে ভোট দেন। এদিকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগেই বিজয়ী প্রার্থী হিসেবে ইব্রাহিম রইসিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অপর তিন প্রার্থী।
নির্বাচনে একমাত্র সংস্কারপন্থী প্রার্থী আবদুন নাসের হেমমাতি ইনস্টাগ্রামে দেয়া এক বার্তায় রইসিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমি আশা করি আপনার সরকার সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নেতৃত্বের অধীনে আমাদের জাতির জন্য শান্তি ও উন্নতি বয়ে আনবে।’
আমির হোসাইন কাজীজাদেহ তার অভিনন্দন বার্তায় বলেন, ‘আমি রইসিকে অভিনন্দন জানিয়েছি, জাতির দ্বারা নির্বাচিত হওয়ায়।’ ইব্রাহিম রইসির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোহসিন রেজায়ি এক টুইট বার্তায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আমার সম্মানিত ভাই আয়াতুল্লাহ ড. সাইয়েদ ইব্রাহিম রইসির সিদ্ধান্ত নির্ধারণী এই নির্বাচন এক শক্তিশালী জনগণের সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি বহন করবে।’
এর আগে এক বিবৃতিতে ইরানের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি কারো নাম উল্লেখ ছাড়াই ‘জনগণের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে’ অভিনন্দন জানান।
বিবৃতিতে তিনি নির্বাচনে ‘ঐতিহাসিক ও বিরল উপস্থিতির’ জন্য ইরানের জনগণ ও সর্বোচ্চ নেতাকে ধন্যবাদ জানান।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি চার বছর মেয়াদে তার দুই দফা দায়িত্ব পালন শেষ করায় তৃতীয় বার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেননি।
২০১৩ ও ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরপর দুই বার সংস্কারপন্থী এই নেতা নির্বাচিত হন। ইরানের আইন অনুসারে পরপর দুই দফা দায়িত্ব পালনকারী প্রেসিডেন্ট পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
এর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণকারী গার্ডিয়ান কাউন্সিল সাত প্রার্থীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়। বুধবার তিন প্রার্থী মোহসিন মেহের আলীজাদেহ, সাইদ জালিলি ও আলী রেজা জাকানি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর বর্তমানে চারজন প্রার্থী নির্বাচনে লড়েন। তাদের মধ্যে রক্ষণশীল তিন প্রার্থী; প্রধান বিচারপতি সাইয়েদ ইব্রাহিম রইসি, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) সাবেক প্রধান মোহসিন রেজায়ি, ডেপুটি স্পিকার আমির হোসাইন কাজীজাদেহ হাশেমি ও সংস্কারপন্থী প্রার্থী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুল নাসের হেমমাতি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct