কুতুবউদ্দিন মোল্লা ও বাবলু প্রামাণিক, আপনজন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ও প্রবল জলোচ্ছ্বাসে জলের স্রোতে সু্ন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে ভেসে বেরিয়ে এল হরিণ। আবার সুন্দরবনের প্রায় সমস্ত নদীর বাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে আস্তানা হারিয়ে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এল বাঘ। দুটি ঘটনা ঘটেছে বুধবার দুপুরে। পাখিরালয় জঙ্গল থেকে নদীতে ভেসে এল হরিণ আর অপর দিকে কুলতলির মৈপিঠ এলাকায় বেরিয়ে পড়লো বাঘ। এদিন সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। একদিকে পূর্ণিমার ভরা কোটাল আর অপর দিকে যশ এর তান্ডব। দুইয়ের মাঝে পড়ে সুন্দরবনের সাধারণ মানুষ থেকে পশু পাখি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। নদীতে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে আস্তানা হারিয়ে নদীর জলে ভেসে আসে একটি হরিণ। মুহূর্তে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে হরিণটিকে উদ্ধার করে বারুইপুর পুলিশ ও জেলার গোসাবা থানার পুলিশ। বর্তমানে হরিণ টি সুস্থ রয়েছে। অক্ষত অবস্থায় হরিণটিকে সুন্দরবন ফরেষ্ট রেঞ্জের হাতে তুলে দিয়েছে গোসাবা থানার পুলিশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমলে হরিণটিকে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে বনদফতর সুত্রে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে যশ আছড়ে পড়ে তছনছ করে দিয়েছে সমগ্র সুন্দরবন। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে জলমগ্ন সুন্দরবনের জঙ্গলের বিভিন্ন দ্বীপ এলাকা। জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছে। নামখানার মৌসূনী দ্বীপ, মদনগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুড়াখালি, দেবনগর, ট্যাঁকার বাজার, হরিপুর, ঈশ্বরীপুর, নাদাডাঙ্গা প্রভৃতি জায়গায় নদীবাঁধ ভেঙ্গে জল ঢুকেছে। কাকদ্বীপ শহরে জল ঢোকায় বাজারের সকল দোকান ডুবেছে, দোকানের সামগ্রী নষ্ট হয়েছে। এছাড়া কাকদ্বীপের গঙ্গাধরপুর, হারউডপয়েন্ট, ভুবননগর প্রভৃতি জায়গা প্লাবিত হয়েছে।পাথরপ্রতিমার ১২টি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রায়দিঘী ব্লকের দক্ষিণ কঙ্কনদিঘীর তিন জায়গায়, পুরকাইত পাড়ায়, দক্ষিণ শংকরের ঘেরি নারায়ণ মন্দির থেকে স্ল্যুইস গেট প্রভৃতি জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামে জল ঢুকেছে। কুলতলির দেউলবাড়ি, নলগড়া, কৈখালি, গোপালগঞ্জ, ব্যাংকের ঘাট, সাঙ্কিজাহান, দেবিপুর, ভুবনেশ্বরী, ঢাকিরমুখ, ডোঙাজোড়া, অম্বিকানগর, বৈকুন্ঠপুর, নগেনাবাদ প্রভৃতি অঞ্চলে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামে জল ঢুকেছে। গোসাবার সাতজেলিয়া, রাঙাবেলিয়া, কুমিরমারী, মোল্লাখালি, বাসন্তীর ঝড়খালি ও ভরতগড় এবং ক্যানিং-র ইটখোলা প্রভৃতি জায়গা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোসাবার সাতজেলিয়া, কুলতলির ভাসা, কুলপীর ট্যাংরার চর সমেত সুন্দরবনের নানা জায়গায় গ্রামের মানুষ নিজেরা বাঁধ রক্ষা করার কাজ করেছেন, আমাদের দলের কর্মীরা তাতে হাত লাগিয়েছেন বলেন, জয়নগর প্রাক্তন বিধায়ক তরুণকান্তি নস্কর ও কুলতলির প্রাক্তন বিধায়ক জয়কৃষ্ণ হালদার। একাধিক জায়গায় নদীর বাঁধ ভেঙে ফিশারি এবং এলাকায় জল ঢুকে যাওয়াতে পুকুরের মাছ গবাদি পশু গরু ছাগল যে সমস্যার মধ্যে পড়তে দেখা যায় ।সুন্দরবনের জঙ্গলে কিছু জায়গায় জল ঢোকাতে বন্যপ্রাণী ও ভেসে আসতে দেখা যায় লোকালয়ে। গোসাবা থানার একটি প্রতিনিধি টিম বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে ফরেস্ট রেঞ্জ তের হাতে তুলে দেন। সেই সাথে বুধবার থেকে বিভিন্ন স্কুল কলেজ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যারা আশ্রয় নিয়েছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রাজনীতির বিশেষ ব্যক্তিরা। কোথাও চাল ডালের খিচুড়ি। ডিম ভাত। কুমড়ো আলু সোয়াবিন করে তাদের খেতে দেয়া হয়। ইয়াস ঝড়ের দুর্যোগ কেটে যাওয়া তে একের পরে এক আশ্রয় শিবির থেকে বাড়ি ফিরেছেন সাধারণ মানুষ সেই সাথে বেশ কিছু জায়গায় নদী বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন তারা আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct