এম মেহেদী সানি, কলকাতা ও সারিউল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ, আপনজন: চেনা ছন্দে ফিরছে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান-সামশেরগঞ্জ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মঙ্গলবার সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিস্থিতি সরজমিনে খতিয়ে দেখতে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র এবং পুলিশ সুপারকে সঙ্গে নিয়ে পরিদর্শনে এসেছিলেন সংখ্যালঘু বিষয়ক মাদ্রাসার শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব পি বি সেলিম। এলাকার শান্তিরক্ষার্থে, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান এবং সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে রাজ্য সরকারের নির্দেশে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান-সামশেরগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে এসেছেন বলে জানান পি বি সেলিম। সম্প্রতি ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ আন্দোলনের আবহে জঙ্গিপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তেজনা এতটাই ভয়াবহ হয়েছিল, যেখানে সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী ১০৯ টি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধুলিয়ান পুরসভার জাফরাবাদ, বেদনা, ঘোষপাড়া সহ হিজলতলা, শুলিতলা, কাঞ্চনতলা এলাকা। একের পর এক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে শুরু করে স্থানীয় সাংসদ, বিধায়ক এবং জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, জাতীয় মহিলা কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দল। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি করে দেওয়ার ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে মৃত্যু হওয়া জাফরাবাদের হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস এবং সুতির কাশিমনগর এর ইজাজ আহমেদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ফের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু বিষয়ক মাদ্রাসার শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব পি বি সেলিম, জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র এবং পুলিশ সুপারকে সঙ্গে নিয়ে পরিদর্শনে আসেন। খতিয়ে দেখেন এলাকার পরিস্থিতি। জাফরাবাদে খুন হওয়া হরগোবিন্দ দাসের বাড়িতে যান, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি তিনি সুতির কাশিমনগর এলাকায় গুলিতে নিহত ইজাজ আহমেদের বাড়িতে যান। প্রশাসনিকভাবে তাদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন পি বি সেলিম। বুধবারেও তিনি মুর্শিদাবাদের অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলে জানা গিয়েছে। এ দিন তিনি এলাকার সংসদ, বিধায়ক এবং সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন বলে সূত্রের খবর। এলাকা পরিদর্শন করে পিবি সেলিম বলেন, আজকে আমি শামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ানে এসেছিলাম রাজ্য সরকারের নির্দেশে।
এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত করলাম রাজ্য সরকার সর্বদা তাদের পাশে আছে। শামশেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানের যেখানে যেখানে ঝামেলা হয়েছে ধুলিয়ানের ১৬ নাম্বার ওয়ার্ড এবং অন্যান্য জায়গা পালপাড়া, দাসপাড়া, জাফরাবাদ এলাকা ঘুরলাম। মানুষের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বাড়ি-দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো দেখলাম, যে দুজন খুন হয়েছে তাদের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দেখা করলাম এবং পুলিশের গুলিতে যার মৃত্যু হয়েছে তার বাড়িতেও গিয়েছিলাম।’
তীব্র গরমের হাত থেকে রেহাই দিতে এদিন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে সিলিং ফ্যান তুলে দিতে দেখা যায় পিবি সেলিমের। তিনি আরও জানান, আগামী কালও পরিদর্শন করব লোকজনের সঙ্গে কথা বলব। স্থানীয় এমপি এমএলএদের সঙ্গেও দেখা করব।