আপনজন ডেস্ক: করোনার করাল গ্রাসে গোটা বিশ্ব আর সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে আমাদের দেশ ধুঁকছে । আর লকডাউনের জেরে কার্যত অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে কার্যত ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বকখালি ও তার আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা । সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবারও বড়সড় ধাক্কার সম্মুখীন হলেন বকখালির হোটেল ও লজ মালিকরা । পরিবেশ বিধি লঙ্ঘন করে সমুদ্র তীরের ৫০০ মিটারের মধ্যে অবৈধ নির্মাণ করার দায়ে বকখালির ১ টি হোটেল ও ৫ টি লজকে বন্ধের নোটিশ দিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদ। দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন ও আমফানের তাণ্ডবে ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে করোনা বিধি মেনে হোটেল ও লজগুলি খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল । কিন্তু প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে কার্যত দিশেহারা হোটেল মালিকরা। বিপাকে পড়েছেন হোটেলের সাথে যুক্ত কর্মচারী ও শ্রমিকরা।
বকখালি হোটেল ওনার্স ও লজ মালিক সংগঠন সূত্রে খবর , প্রায় সত্তরটির অধিক বৈধ হোটেল ও লজ আছে বকখালি ও সংলগ্ন এলাকায় । পাশাপাশি আরও নির্মাণ চলছে । যা এখনও নতিভুক্তকরণ হয়নি । গত কয়েক বছরে ব্যাঙের ছাতার মত হোটেল গজিয়ে উঠেছে বকখালি এলাকায় । এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । এমনকি কোস্টাল রেগুলেশন জোনের ছাড়পত্র সম্পর্কে কোন তথ্য নেই পুলিশ প্রশাসন ও হোটেলের মালিকদের কাছে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হোটেল ওনার্স ও লজ মালিকরা প্রয়োজনে আইনি লড়াই চালানোর পক্ষে মত দিয়েছেন । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , ২০১২ সালে নির্মিত বকখালির হোটেল শ্রীগুরু-র মালিক গুরুপদ মঙ্গল বলেন , “ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বকখালি হোটেল ও লজগুলির কোস্টাল রেগুলেশন জোনের ছাড়পত্র খতিয়ে দেখা উচিৎ। অনেক নতুন হোটেলের নির্মাণ করে জোরকদমে ব্যব্যসা চলছে । বেছে বেছে ৬ টি হোটেল বন্ধ করে আমাদের ভাতে মারার চেষ্টা চলছে ’’।
পাশাপাশি আরেক হোটেল আমন্ত্রণের মালিক কালো সর্দার জানায়, কোস্টাল রেগুলেশন জোন সঠিক তদন্ত করে হোটেল বন্ধের নির্দেশ দিতে পারতো। বেশ কিছু হোটেল আছে যে হোটেলগুলো সমুদ্র উপকূল থেকে ২০ মিটার থেকে ৫০ মিটারের মধ্যে আছে সেগুলো তদন্ত করা হোক দাবী হোটেল মালিকের। সঠিক তদন্ত না করে যেসকল হোটেল গুলো ৫০০ মিটারের বাইরে আছে সেই হোটেল গুলো কেনো বন্ধ করা হল। বকখালির এই ছয়টি হোটেল বন্ধ করে দেওয়ার ফলে প্রায় ৬০ জনের মতো কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়েছে । হত দরিদ্র হয়ে পড়েছে এই সকল কর্মচারীর পরিবার ।
সূত্রের খবর , নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পর্যটন কেন্দ্রের হোটেল সাগরিকা , মোনালিসা , শ্রীগুরু সহ আমন্ত্রণ , সুধাময়ী ও মহামায়া লজের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে । পাশাপাশি হোটেল গুলির উপরে সর্বক্ষণের নজর রাখতে ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । এই ঘটনার ফলে আতঙ্কিত বকখালির বাকি হোটেল ও লজের মালিকরা । এই প্রসঙ্গে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন , জাতীয় পরিবেশ আদালতের পক্ষ থেকে অবৈধ নির্মাণের তালিকা চাওয়া হয়েছিল । জাতীয় পরিবেশ আদালতের কাছে ১২০ টি অবৈধ নির্মাণের তালিকা পাঠানো হলেও সংখ্যাতা বাস্তবে প্রায় পাঁচশো । মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে কয়েকটি হোটেল ও লজ বন্ধ না করে সকলকে একই শাস্তি দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত ।
বকখালি হোটেল ওনার্স সংগঠনের তরফ থেকে ইতিমধ্যে এই বন্ধ হয়ে যাওয়া ছটি হোটেল সব কিছু তদন্ত করে পুনরায় খোলার আর্জি জানিয়ে জেলা শাসকের কাছে খোলার আবেদন করেছে । কার্যত এই বন্ধ হয়ে যাওয়া ছটি হোটেলের প্রায় ১০০ জনের কর্মী রা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ওই কর্মীদের অসহায় পরিবার গুলো এখন দিন গুনছে আবার কবে সেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। অন্ন সংস্থানের যোগান ফিরে পাবে কবে? বঞ্চনার ছাপ চোখেমুখে।
বকখালি হোটেল ওনার্স সংগঠনের সভাপতি বিদ্যুত কুমার দিন্দা, “ আমরা এমনিতে সর্বস্বান্ত । নানা সমস্যা নিয়ে চলছি । শীতকালীন মরশুমে ব্যবসায় লক্ষ্মীলাভের আশা থাকলেও তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল । আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সরকারের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি চাই ”।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct