আর্য্য রেহান, জঙ্গিপুর: ২০১৭ সালের ৭ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদ জেলায় দুস্থ গরিবদের চিকিৎসা পরিসেবা দেওয়ার জন্য গড়ে উঠেছিল ফিরোজা হেলথ কেয়ার ট্রাস্ট।আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২১–এ চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করতে চলেছে । গত চার
বছরেই মুর্শিদাবাদ জেলা রঘুনাথগঞ্জ গাড়িঘাটে গড়ে ওঠা ফিরোজা হেলথ কেয়ার ট্রাস্ট কেবল মুর্শিদাবাদেই নয় ,গোটা রাজ্যে নজির সৃষ্টি করেছে। এই চার বছরে কয়েক লক্ষ মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে ফিরোজ ফেয়ার ট্রাস্ট। অত্যাধুনিক মেশিনপত্র, এমার্জেন্সি, ওটি, প্রতিদিন আউটডোরে রোগী দেখা হয় এখানে। সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে জেলার বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা রোগী দেখেন এখানে।
আবার সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে কলকাতা থেকেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা গিয়ে রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেন এই হাসপাতলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নামমাত্র খরচ নেওয়া হলেও বেশির ভাগটাই বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয় ফিরোজা হেলথ কেয়ার ট্রাস্ট । আর তাতেই জেলার দুঃস্থ মানুষদের কাছে প্রাণের স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
জেলার অন্যতম বিড়ি ও রাজমিস্ত্রি শ্রমিকদের জেলা নামে খ্যাত জঙ্গিপুর সেখান থেকে প্রতিদিন কয়েক শ’ মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা নেন। জঙ্গিপুর ছাড়াও ধুলিয়ান , সূতি, সামশেরগঞ্জ, ফারাক্কা, সাগরদিঘী ,লালগোলা, ভগবানগোলা, লালবাগ, জিয়াগঞ্জ থেকে বহু মানুষ আসছেন চিকিৎসা পরিষেবা নিতে। গত চার বছরে চার লাখেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে উপকৃত হয়েছেন এই হাসপাতাল থেকে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার শিল্পপতি মেহেদী হাসান।
পঞ্চমবর্ষে পদার্পণ করা এই বিনামূল্যের হাসপাতাল সম্পর্কে বলতে গিয়ে মেহেদি হাসান বলেন, এলাকার দুঃস্থ মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল আজ থেকে চার বছর আগে জেএইচএম গ্রুপ আজ সেই কাজ সফল হয়েছে। তিনি বলেন,জেএইচ এম গ্রুপ আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যবসা করলেও জঙ্গিপুরের দিকে সব সময় লক্ষ্য রাখে। এলাকার মানুষের যাতে বিনা চিকিৎসায় না মরতে হয় তার জন্য সর্বক্ষণিক খবর রাখেন। তিনি বলেন আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকলেও জেএইচএম মানুষের যে পরিষেবা দিয়ে এসেছে আগামী দিনে সেই পরিষেবা অব্যাহত থাকবে ।
তিনি বলেন গর্ভবতী মায়েদের জন্য অত্যন্ত যত্নসহকারে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বাড়তি সুবিধা পান চিকিৎসার জন্য।
এছাড়াও ইএনটি ,ডায়াবেটিস ,চোখ, দাতের চিকিৎসা করা হয় হাসপাতলে। বিভিন্ন জটিল রোগের অপারেশন এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাইক্রো সার্জারি ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। এই হাসপাতলের জন্য বিদেশ থেকে অত্যাধুনিক মেশিন পত্র ক্রয় করে আনা হয়েছে যা জেলায় রেকর্ড। এক্সরে মেশিন থেকে শুরু করে অপারেশন থিয়েটারের সমস্ত মেশিনই অত্যাধুনিক। রয়েছে আই সি ইউ, ভেন্টিলেটর সহ আরও নানান পরিষেবা।
জীবনের একটি ছোট্ট কাহিনী বলতে গিয়ে মেহেদি হাসান বলেন খুব ছোট অবস্থায় মাকে হারিয়েছি। ডায়াবেটিসে রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন মা ফিরোজা বেগম ।তখন ছিল না অত্যাধুনিক চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা। ফলে মা অনেকটাই বিনা চিকিৎসায় মারা যান। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে অন্তত যাদের মারা বেঁচে রয়েছেন তাদের যাতে বিনাচিকিৎসায় না মরতে হয় । সেই জায়গাতে আজ তিনি অন্তত সফল বলে দাবি করেন মেহেদি হাসান।জনাব মেহেদি বলেন, বাঁচার মালিক আল্লাহ । কিন্তু বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে সে তো হয়না, ফিরোজা হেলথ কেয়ার ট্রাস্ট চিকিৎসার ব্যবস্থা এনে দিয়েছে । ফলে বহু মানুষ চিকিৎসার সুযোগ দিয়েছে। আগামী দিনেও আরও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
এই হাসপাতালের আরো দুইজন কর্ণধার রয়েছেন, তারা হলেন সমাজসেবী জাহাঙ্গীর আলম এবং হুমায়ুন কবীর । হাসপাতাল প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খুব ভালো লাগে যে আমাদের এই হাসপাতাল থেকে বহু মানুষ বিনা ব্যয়ে চিকিৎসা পরিষেবা নেন ।মানুষের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পেরে আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ ।
তিন ভাই মিলে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা আজ সফল। যারা উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবার জন্য কলকাতা, ভেলোর কিংবা অন্যান্য জায়গায় যেতে পারেন না তারা আজ রঘুনাথগঞ্জের গাড়ি ঘাটে এসে চিকিৎসা পরিষেবা নিচ্ছেন।
এর ফলে মানুষের যেমন সময় বাঁচছে,তেমনি কলকাতা যাওয়ার ঝামেলা থেকে অনেকটা রক্ষা পেয়েছেন। অচেনা শহরে এসে কি হবে ,কোথায় যাবে,কোথায় থাকবেন কিনারা করতে পারেন না ।কিন্তু ফিরোজা হেলথ কেয়ার ট্রাস্টে এলেই চিকিৎসা ব্যবস্থা করছেন চিকিৎসকরা এবং ফিরোজা হেলথকেয়ার এর কর্মীরা। আগামীদিনে গোটা জেলার মানুষের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য আরও উন্নতমানের পরিষেবা নিয়ে আসবে বলে তিনি জানান। আরো এক কর্ণধার সমাজসেবী হুমায়ুন কবীর বলেন, এখানে কেবল চিকিৎসা দিয়ে থেমে থাকে না ফিরোজা কেয়ার ট্রাস্ট । বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় হেলথ ক্যাম্প করে। রক্তদান শিবির, বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ,চক্ষু পরীক্ষা ক্যাম্প, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় ।হাসপাতালের বাইরে ও গ্রামে গ্রামে গিয়ে এই কাজ করে চলেছে ফিরোজা হেলথ কেয়ার ট্রাস্ট । এর ফলে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হচ্ছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা শিশু-কিশোর সকলে আজ ফিরোজা হেলথকেয়ার এর চিকিৎসা পাচ্ছেন। এখানে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের ঔষধি যোজনা । যেখানে ৭০% শতাংশ ছাড়ে ওষুধ পাচ্ছে রোগীরা এর ফলে প্রতিদিন ৩০০ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। হুমায়ুন কবির আরও বলেন, এই হাসপাতাল থেকে প্রতিদিনই তিনশ’র বেশি রোগী দেখা হচ্ছে ।যা জেলায় একটি রেকর্ড। অন্যান্য হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরত গেলেও ফিরোজা হেলথকেয়ার থেকে কোন সময় রোগী ফেরত যায় না।তারা চেষ্টা করেন রোগীকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়ে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে। সেই জায়গায় ফিরোজা হেলথ ট্রাস্ট আজ পুরোপুরি সফল বলে হুমায়ুন কবীর দাবি করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct