ড.মুহাম্মদ ইসমাইল : ইসরাইলি আগ্রাসন ও দখলদারির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য কয়েক দশক ধরে লড়াই চলছে ফিলিস্তিনে। নানা স্বাধীনতা কামী সংগঠন ইজরাইলি হানাদারদের জুলুম, অত্যাচার,খুন,ধর্ষণ প্রভৃতির বিরুদ্ধে অনবরত আন্দোলনে করে আসছে। ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করছে ইজরাইল।শুধু তাই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনকারী ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একত্রিত হতে থাকে ব্রিটিশ ও আমেরিকার সহযোগিতায়।ইহুদিরা নতুন নতুন এলাকা দখল করতে থাকে ফিলিস্তিন জনগণের ওপর নানা অত্যাচার ও জুলুমের মধ্যে দিয়ে।তার ফলে লাগাতার প্রতিবাদ ও আন্দোলন চলতে থাকে ও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত চলতেই থাকে।কিন্তু ফিলিস্তিন যেহেতু ব্রিটিশদের অধীন সামাজ্য হওয়ার কারণে তারা ইহুদি ও ইংরেজ বাহিনীর কাছে আক্রান্ত হতে থাকে।এই সমস্ত ঘটনার প্রতিবাদের জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা সংগঠনের উৎপত্তি হয় কিন্তু ব্রিটিশ ও আমেরিকা কঠোর হাতে দমন করে স্থানীয় ইহুদিদের সহযোগিতা নিয়ে।তার ফলে ফিলিস্তিনে নানা গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের মধ্যে অন্যতম হল হামাস যা ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। তবে হামাস কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন না।যার প্রধান উদ্দেশ্য হল ইজরাইলের দখলদারি থেকে ফিলিস্তিন ভূমিকে উদ্ধার করা।শুধু তাই তাদের অধিকার, স্বাধীনতা, দীর্ঘ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা এবং নারীদের ইহুদিদের নির্যাতন, খুন ও ধর্ষণ থেকে রক্ষা করা।আন্তর্জাতিক মহল থেকে আরব বিশ্বের সাথে বার বার শান্তি চুক্তি ও,যুদ্ধ বিরতি হলে স্হায়ী ভাবে শান্তি ফেরাতে ব্যর্থ তার অন্যতম কারণ ইজরাইলের জবর দখল ও লাগাতার নানা অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে নতুন নতুন এলাকা দখল করে নেওয়া। ১৯৯৪ সালে যৌথভাবে শান্তি স্থাপনের জন্য ইয়াসিন আরাফাত, সিমন পরেশ, ইটজাক রবিনকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া। পিএনও পর হামাস ও ইসলামিক জিহাদ তাদের ভূখণ্ড রক্ষার,লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনে শান্তি স্থাপনের জন্য বিভিন্ন চুক্তি সাক্ষরিত হলে ও স্হায়ী ভাবে শান্তি ফেরানো যায়নি কয়েকটি দেশের দখলদারি মনোভাব ও আধিপত্য বিস্থারমুলক মনোভাবের কারণে।কিন্তু গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অকথ্য অত্যাচার,খুন,ধর্ষণ, নির্যাতন ও নির্মম হত্যার প্রতিবাদ স্বরূপ হামাস আক্রমণ চালায় ইসরাইলের উপর। প্রায় ১৪০০ জনের কাছাকাছি প্রাণ হারায় ও কিছু ইসরাইলের সেনাবাহিনীকে হামাস নামক স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগঠন আটক করে।তারপর ইসরাইল পালটা আক্রমণ চালায় এবং লাগাতার অসম যুদ্ধ চলছে তারপর থেকে। যদিও যুদ্ধ বললে ভুল হবে। কারণ যুদ্ধ করার মত ক্ষমতা হামাস বা ফিলিস্তিনিদের নেই শক্তিশালী ইজরাইলের বিরুদ্ধে এবং তাদের আত্মরক্ষা করার মত সামরিক শক্তিও নেই। অথচ ইসরাইল একমাস ধরে গাজা ভূখণ্ডে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এই অসম যুদ্ধে ফিলিস্তিনে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দশ হাজারের বেশি এবং গাজা উপত্যকা মৃত্যু নগরী তো পরিণত হয়েছে। রাতদিন বৃষ্টির মত বর্ষণ হচ্ছে রকেট, বোমা ও অত্যাধুনিক বিস্ফোরক যা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা কে নিমিষে ধ্বংস করছে। যেখানে মারা যাচ্ছে শত শত শিশু, নারী, বৃদ্ধ, অসহায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে জীবজন্তু ও জানোয়ার। যাদের বিন্দুমাত্র যোগ নেই ইসরাইল আক্রমণে। ইসরাইলের নির্মম আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়নি হসপিটাল, নার্সিংহোম থেকে শুরু করে স্কুল ও কলেজ। গাজা উপত্যকায় বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ, পানীয় জলের সরবরাহ, এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে শুরু করে সবকিছুর সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। সমস্তটাই যুদ্ধের নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করছে। তা সত্ত্বেও বহু দেশ ইসরাইলকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সমর্থন করছেন এবং গোপনে যুদ্ধ সামগ্রী সরবরাহ করছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়ে দুহাত তুলে সমর্থন করছেন। এছাড়া বিশ্বের বহু দেশ, এমন অন্যায়কে সমর্থন করছেন ও অনেকে আবার চুপ করে বসে আছে। শুধু তাই নয়,রাষ্ট্রসংঘের ভোট দান পর্বে যুদ্ধ থামানোর বিপক্ষে সমর্থন করেছেন এবং বহু দেশ ভোটদানে বিরত থেকে ইসরাইলকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছেন। যদিও বিশ্বের ১২০ টি দেশ ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধের জন্য ভোট দান করেছেন এবং রাষ্ট্রসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়েছে। অথচ কয়েকটি শক্তিধর দেশের কাছে পরাজিত রাষ্ট্রসংঘ। বিশ্বের ১২০ টি দেশের মতামত থাকা সত্ত্বেও এবং জাতিসংঘের প্রস্তাব উপেক্ষা করে চলছে একের পর এক হামলা।যার ফলো কয়েক লক্ষ মানুষ ঘর ছাড়া কারণ ঘরবাড়ি খড়কুটোর মত উড়ে গেছে ইসরাইলি হামলায়। একবিংশ শতাব্দীতে এমন আগ্রাসন ও জুলুমের কাহিনি দেখতে হবে তা ভাবা যায় না। সকলেই জানে ১৯৪৮ সালের পূর্বে ইসরাইল নামক দেশ ছিল না।কয়েকটি দেশের সহযোগিতায় এবং রাষ্ট্রসংঘের দ্বারা গঠিত হয় ফিলিস্তিন ভূমিতে ইসরাইল নামক রাষ্ট্রের। জোর করে ফিলিস্তিন ভূমিতে ও ফিলিস্ত্রিনদের রাষ্ট্র দখল করে ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। স্বাভাবিক কারণে ফিলিস্তিনি জনগণ মেনে নিতে পারেনি। এছাড়া ভাগ বণ্টনের সময় উদ্বাস্তু ইসরাইলিদের ভূমি ভাগের ৫৭ শতাংশ দেওয়া হয় এবং ফিলিস্তিনিদের দেওয়া হয় মাত্র ৪৩ শতাংশ। প্রয়োজনে ইসরাইল সীমানা বাড়াতে পারবে তার উল্লেখও করা হয়। তার সুযোগ নিয়ে ইসরাইল পুরো ফিলিস্তিন দখল নিয়েছে এবং মাত্র ১২ শতাংশ জায়গা ফিলিস্তিনিদের দখলে রয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধের পর ফিলিস্তিন নামক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকবে কিনা তার সকলের কাছে প্রশ্নচিহ্ন। বর্তমানে প্রায় ৭১ লক্ষ ফিলিস্তিনি উদবাস্তু হয়ে পড়বে ও তাদের বাসস্থান কোন দেশে হবে তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। বর্তমানে বিশ্ব শুধু আন্তর্জাতিক সংগঠন নয় পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিচারালয় গড়ে উঠেছে। তারপরও আন্তর্জাতিক কোর্টে বিচার হয়না,কেন কোন দেশ অন্য দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করবে সত্যি যদি আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের গুরুত্ব না থাকে তবে কেন এমন কোর্টকে সমর্থন জানাবে।সদস্য দেশ হিসেবে ব্যয়ভার বহন করবে সকল দেশ।কেনই বা কয়েকটি দেশের ভেটো দানের অধিকার থাকবে।তাহলে কি আন্তর্জাতিক সংগঠন ও আন্তর্জাতিক বিচারালয় শক্তিশালী দেশগুলোের দালাল হিসেবে কাজ করবে?সাধারণ মানুষ ছিল বর্তমান আন্তর্জাতিক বিচারালয় ও নানা সংগঠনের ভুমিকায়।বিরক্ত মধ্যে প্রাচ্যের দেশগুলোর ভুমিকায় এবং জাতিসংঘ ভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে।শুধু তাই নয়, লুটেরা কয়েকটি দেশ ইজরাইলের আক্রমণকে আত্মরক্ষার লড়াই বলছেন ও তাদের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছেন।ভারতের মত বহু দেশ নিজেদের অবস্থান নেয়নি। বিশ্বের তাবোড় তাবোড় দেশ ও দাদাগিরি চালানো দেশগুলোর সমর্থন নিয়ে প্রায় একমাস নিরীহ, সাধারণ মানুষ, শিশু, নারী ও বৃদ্ধ কে হত্যা করছেন।আর বিশ্ব বাসী তামাসা উপভোগ করছেন।
লেখক: অধ্যাপক, দেওয়ান আব্দুল গণি কলেজ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct