নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: ফিলিস্তিনে অবিলম্বে ইসরায়েলের যুদ্ধ বিরতির দাবিতে সোচ্চার হল ‘ফ্রেন্ডস অফ প্যালেস্টাইন’। বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে গর্জে উঠলেন এই অরাজনৈতিক শান্তিকামী ফোরামের সদস্যরা। ফোরামের আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ বলেন, গাজায় যা হচ্ছে তার সূত্রপাত ৭ অক্টোবর ২০২৩ নয়। ইসরায়েল এর শুরু করেছিল ১৯৪৮ সালের ১৪ মে। বিগত সাড়ে সাত দশক ধরে গাজা তথা ফিলিস্তিনিদের ওপর পাশবিকতা ও বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করে শরণার্থী ও উদ্বাস্তুতে পরিণত করেছে তারা। হামাস মানে জঙ্গি নয়, হামাস মানে হল প্রতিরোধ। তাঁর কথায়, হিটলার ও নরেন্দ্র মোদির রাজনীতিক দর্শন একই। যদিও হিটলার ছিলেন ইহুদি নিধনকারী, আর মোদির পলিসি সম্পূর্ণ উল্টো।
অধ্যাপক রতন খাশনবিস বলেন, ১৯৪৮ সালে বেইনসাফি করে ইজরায়েলকে অবৈধ রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের বুক চিরে বসিয়ে দিয়েছিল আমেরিকা, ব্রিটেন। তাঁর মতে, হামাসকে পছন্দ না হতে পারে, কিন্তু গাজায় তো শুধু হামাসের লোকরাই থাকে না। হামাসের অজুহাতে সেখানকার নিরীহ মানুষজনকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে কোন যুক্তিতে। গাজাবাসী কোথায় যাবে? বিশ্বের সবথেকে ঘনবসতিপূর্ণ উপত্যকা গাজা। যাকে আজ বিশ্বের সবথেকে বড় উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। অথচ দুঃখজনক হল নরেন্দ্র মোদিও অত্যাচারী ও গণহত্যাকারী ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব বিবেকবান মানুষকে তিনি এর প্রতিবাদে সোচ্চার হতে আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ভারত বরাবর ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও সংহতির পক্ষে। কিন্তু এই প্রথম দেখা গেল ভারত বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। এটা দেশের রাজনীতির চরম দক্ষিণপন্থী বাঁক। তাঁর কথায়, ভারতের মানবিক অবস্থান নেওয়া উচিত ছিল। কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারক ও মাইনোরিটি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলি শাহ বলেন, মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী থেকে বাজপেয়ী পর্যন্ত ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিলেন। ১৯৭১ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সেনা পাঠিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র করতে সর্বাত্মক সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু আজ নরেন্দ্র মোদি ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পক্ষে নেই। তিনি উল্টো পথে হাঁটছেন। শিখদের প্রতিনিধি সোহন সিং আতিয়ানা বলেন, গাজা ও পশ্চিমতীরকে এমনভাবে দু-টুকরো করা হয়েছে যে, তারা ভৌগোলিক দিক থেকে কখনও এক হতে পারবে না। কারণ, মাঝখানে বসে রয়েছে ইসরায়েল। দীপংকর বসু বলেন, গাজাবাসীকে দক্ষিণাঞ্চলে চলে যেতে বলা হচ্ছে। সবকিছু ছেড়ে তারা কেন যাবে? ইমামে ঈদায়েন ক্কারী ফজলুর রহমান বলেন, ইসরায়েল রাষ্ট্র কীভাবে তৈরি হয়েছিল, তা আমরা কমবেশি জানি। এখন জানতে হবে, ইসরায়েলকে কেন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এনে বসানো হয়েছিল। পৃথিবীতে এত জায়গা থাকতে কেন মধ্যপ্রাচ্যের বুকের ওপর ইহুদিদের আবাসভূমি করে দেওয়া হল। জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সেক্রেটারি শাদাব মাসুম জানান, আগামীকাল শুক্রবার ৩ নভেম্বর জুম্মার নামাযের পর বেলা দুটো নাগাদ কলকাতার ধর্মতলাস্থিত টিপু সুলতান মসজিদের পিছনে ও স্টেটসম্যান অফিসের সামনে জমায়েত হবে এবং সেখান থেকে প্রতিবাদী মিছিল বের হবে। গাজায় নরসংহার ও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে মার্কিন কনসুলেটে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে। বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে সকলকে এতে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct