বিজয়ী
শীলা সোম
সকাল থেকেই অর্কর মন ভালো নেই। আজ বিশ্বকর্মা পূজোর দিনে ওরা সবাই মিলে ঘুড়ি ওড়ায়। ছোটকার কাছ থেকে এক ডজন ঘুড়ি ও সে আদায় করেছে। কাঁচের গুড়ো দিয়ে সুতোয় মাঞ্জা দিয়েছে। কাল বিকেল থেকে তার ধূম জ্বর। মায়ের সাথে ডাক্তারখানায় গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসায় জ্বর একটু কমলেও শরীরে সেরকম বল নেই ঘুড়ি ওড়ানোর মতো। আর বাবা অফিস যাবার আগে পই পই করে না করে গেছেন অর্ককে মাঠে না যাবার জন্য। মাঠে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা চলে। অর্কদের দলই প্রতি বছর জিতে এসেছে। অর্কর জ্বর হওয়ায় ওদের দল মুষড়ে পড়েছে। মাঠে মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে যারা খেলবে তাদের নাম। নানা রকম ঘুড়ি পেটকাটি, চাঁদিয়াল আরও অনেক রকম নাম। বিছানায় উঠে বসতেই মা বলেন মুখ ধুয়ে দুধ পাঁউরুটি খা। ওষুধ খেতে হবে তো! অর্ক ভালো ছেলের মতন তর্ক না করে সবটা খেয়ে নেয়। তারপর ওষুধ খায়। ওদিকে ঘুড়ি ওড়ানো শুরু হয়ে গেছে। ভোকাট্টা চীৎকার শুনে অর্ক বিচলিত হয়ে ওঠে, কে কার ঘুড়ি কাটলো কে জানে! তুমুল হৈ চৈ আবার ভোকাট্টা। মাইকে ঘোষণা হলো সবুজ সাথী ইয়ং স্টার ক্লাবের ঘুড়ি কেটেছে। অর্ক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর অর্কর মা অর্কর মাথা ধুইয়ে বললো ,আমি স্নান করে ঠাকুর দিয়ে এসে তোকে খেতে দেবো। আজ ভাত দেবনা, রুটি দিয়ে তরকারি দিয়ে খাবি। অর্ক বেচারা আর কী করে জানালার কাছে বসে থাকলো। আবার ভোকাট্টা চীৎকার, ঐ আবার, পর পর চীৎকার শুনে অর্কর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, মাইকে ঘোষণা হচ্ছে ইয়ং স্টার এগিয়ে যাচ্ছে। পরের পর ঘুড়ি কেটে। অর্ক দেখলো মা ঠাকুর ঘরে। সে পা টিপে টিপে ঘরের থেকে বেড়িয়ে দৌড় লাগানো মাঠের দিকে। সেখানে গিয়ে লাটাই হাতে ধরতেই সবাই চীৎকার করে উঠলো, সবুজ সাথী, হিপ হিপ হুররে। অর্কর কোনো দিকে খেয়াল নেই। একটার পর একটা ঘুড়ি কেবল কেটে যেতে লাগলো। ইয়ং স্টারের সব ঘুড়ি কাটা হয়ে গেছে। একটাই ঘুড়ি উড়ছে। হ্যাঁচকা এক টানে শেষ ঘুড়ি টাকে কুপোকাত করে অর্ক পড়ে যেতে ই সবাই চীৎকার করে উঠলো। মাইকে ঘোষিত হলো, এবারের ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দল সবুজ সাথী। এর পুরোটাই কৃতিত্ব অর্ক ঘোষের। তবে ও এইমাত্র মাঠে পড়ে যাওয়ায় ওর পুরস্কার ওদের বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসা হবে।অর্ক র মা তো অবাক, কখন কোন ফাঁকে সে বেড়িয়ে গেছে তিনি বিন্দু বিসর্গ ও জানেন না। তারপর ডাক্তার ডেকে আনা হলো। অর্ক সুস্হ বোধ করতে লাগলো। বাবা অফিস থেকে এসে এই খবর শুনে রেগে গেলেন বললেন বার বার না করা সত্ত্বেও কেন এমন কাজ করলি? হাতটা তুলতেই অর্ক চোখ বন্ধ করে ফেললো বাবা যা রাগী একটা বিরাট মাপের থাপ্পড় বুঝি তার গালে এসে পড়ে! কিন্তু না এতো মাথায় আলতো হাতে র স্পর্শ। এটুকু বয়সে দলের কথা ভাবতে শিখেছে।দলকে জেতানোর জন্য অসুস্থ শরীর নিয়ে ছুটে গেছে। না আমার ছেলেটা খারাপ নয়। এই বলে তাকে জড়িয়ে ধরলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct