রূপসী
তাপস কুমার বর
বাড়ির বারান্দার পাশে জাম গাছটার দিকে তাকিয়ে, একটু আনমনা হয়ে কি যেন ভাবছিল মৃদুল? পাশের বাড়ির রূপসী তার ক্লাসমেট একজন ভালো বান্ধবী। রূপসী এসে বললো, তুই যাবিনা কলেজ? মৃদুলের আনমনা ভাবটা কেটে গেলো। রূপসীকে দেখে মৃদুল বললো, “আজ যাবোনা ভাবছি কলেজে”। রূপসী মৃদুলের কাছে এসে বসলো। তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ। রূপসী বললো কেন যাবি না তুই? কি হয়েছে তোর? মৃদুল কিছু বললো না। রূপসী যেন কিছু বলতে চায়,....“তুমি বুঝবেনা মৃদুল! কেন আমি ছুটে আসি?”- সেদিন রূপসী মৃদুলকে বললো। আমিও কলেজ যাবো না। মৃদুল বললো কেন তুই কলেজ যাবি না? মৃদুল রূপসীর চোখের দিকে তাকিয়ে “একটা তীব্র ভালোবাসার স্পর্শ দেখেছিল সেদিন” আর মৃদুল জিজ্ঞাসা করতে পারেনি। রূপসীর চোখের ভাষা মৃদুলের জন্য অনেক মায়া দিয়ে ঘেরা,....“তুমি কবে বুঝবে?”- হঠাৎ রূপসীর মা ডাক দেয়। রূপসী মৃদুলকে বললো। মা ডাকছে “এখন যাই মৃদুল”। মৃদুল বাংলা অর্নাসের ছাত্র আর রূপসী দর্শনের ছাত্রী। দু’জনে কখন যে নিজেদের ভালোবেসে ফেলেছে। সেটা কেউ কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারেনা। সেই দশম শ্রেণী থেকে তাদের একসাথে পথ চলা। তাদের বন্ধুত্বটা অনেক গভীর। আজ তারা কলেজে পড়ছে। রূপসীর বাবা রামেশ্বর দেবনাথ রূপসীর জন্য তার ছেলেবেলার বন্ধু শ্যামচরণের ছেলের জন্য তার মেয়েকে দেখে রেখেছে। শ্যামচরণের ছেলের সঙ্গে বন্ধু রামেশ্বরের মেয়ের জন্য অনেক আগে থেকে কথা বলে রেখেছে। কিন্তু রূপসী কি এই সম্পর্ক মন থেকে চায়? তার বাবা এখনো পর্যন্ত মেয়ের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে একবার ও কথা বলেনি। সে মৃদুলকে ভালোবাসে। একদিন মৃদুল কলেজের ছাদের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিল। পাশের রুমটি দর্শন বিভাগের। রূপসী একা বাইরে যাচ্ছিল। তখন মৃদুলকে দেখে বললো,...
“চল ওই মাঠ থেকে একটু ঘুরে আসি”। - মৃদুল রূপসীকে ভীষণ ভালোবাসে কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনা। তাই অগত্যা রূপসীর সঙ্গে মাঠে গেলো মৃদুল। সেখানে একটা ছাতিম গাছের নীচে বসে। কিছুক্ষণ দু’জনে চুপ। তারপর দুজনের কথা শুরু হলো। রূপসী বললো, জানিস মৃদুল। বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। কিন্তু আমি ওই বিয়ে করতে চাইনা। মৃদুল বললো কেন? সেদিন রূপসী তার মনের কথা মৃদুলকে বলেছিল,...“দু’জনে চোখের দিকে তাকিয়ে। নিজেদের মন ভরে দেখছিল”। - মৃদুল বললো, রূপসী তোকেও আমি ভালোবেসে ফেলেছি। এতোদিন বলতে পারিনি লজ্জায়। যদি আমাদের এই বিশ্বাসের বন্ধুত্বটা ভেঙে যায়। সেই ভয়ে পারিনি। বার বার পিছিয়ে এসেছি তোর থেকে”। একদিন রূপসীর বাবা রামেশ্বর দেবনাথ সব জানতে পেরে রূপসীকে ডাকলো কাছে। রামেশ্বর বাবু মেয়েকে বললো “তোমার বিয়ে আমার ছোটবেলার বন্ধু শ্যামচরণের ছেলের সঙ্গে কথা বলে রেখেছি। ওরা অনেক বড়োলোক। ছেলে ও বিদেশে থাকে। তোমাকে ওখানেই বিয়ে করতে হবে। সেদিন রূপসী তার বাবাকে সবকথা বললো। মৃদুলের কথাশুনে রামেশ্বর বাবু রেগে উঠলেন,...“আর কখনো যেন ওই ছেলের সঙ্গে দেখা করতে না যাওয়া হয়”। - রূপসী সেদিন বাবার সামনে অনেক কেঁদেছিল। বিকেল বেলায় সে এক দৌড়ে মৃদুলের বাড়িতে হাজির হয়েছিল। সেদিন মৃদুল তাদের বাগানে কাজ করছিলো। রূপসী বাগানে মৃদুলের কাছে গিয়ে কান্না শুরু করে দিল। মৃদুল বললো কি হয়েছে রূপসী। রূপসী বললো,...“বাবা সব জেনে গেছে মৃদুল। বাবা আমার কলেজ শেষ হয়ে গেলে বিয়ে দিতে চায় উনার বন্ধুর ছেলের সঙ্গে। সেদিন মৃদুল নীরব ছিল। রূপসী শুধু কাঁদছে। মৃদুলের এখন কোনো উপায় নেই। তারা চাষাবাদ করে সংসার চালায়। আর রূপসীর বাবা জমিদার মানুষ। তার মেয়ের জন্য তো ভালো পাত্র দেখবে। রূপসী কেঁদে কেঁদে বললো,.....“আমি তোমাকে ভালোবাসি মৃদুল। ”- মৃদুল সেদিন কিছু করতে পারেনি। তার বুকের ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সে কিছু করতে পারছেনা। রামেশ্বর দেবনাথ শেষ পর্যন্ত মেয়ের দিকে তাকাতে পারলো না। রূপসী আগের মতো বাড়ির কারোর সঙ্গে তেমন কথা বলেনা। খেতে ডাকলে নিজে একা খেয়ে আসে। এই দৃশ্য রূপসীর মা ও বাবার ভালো লাগছিলনা। তাই শেষ পর্যন্ত রূপসীর বাবা ও মা মৃদুলকে মেনে নিয়েছিল। সেদিন রূপসী খুব খুশি। খুশির সংবাদ দিতে মৃদুলদের বাড়ি গিয়ে মৃদুলের সামনে কিছুক্ষন স্তম্ভিত। মৃদুলের চোখে রূপসীর জন্য অনেক ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। রূপসী বুঝতে পেরে একটু হেসে বললো,...“আর দুঃখ করো না মৃদুল দু’জনকে বাবা মেনে নিয়েছে”। - সেদিন খুশির জোয়ারে দু’জনে একটা সমান্তরালে হারিয়ে যেতে চায়। যেখানে থাকবে শুধু দু’জনের অনেক ভালোবাসা,.....“চোখের দৃষ্টিতে একটা খুশির জোয়ার। হারিয়ে যাওয়া সাম্রাজ্য নতুন করে আবার খুঁজে পাওয়া”।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct