এম মেহেদী সানি, আমডাঙ্গা, আপনজন: ব্যারাকপুর দমদম সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু সেলের আহ্বানে জেলা কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল রবিবার। আসন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করে প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেও আওয়ালসিদ্ধি জিরাক বাজারে অনুষ্ঠিত তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের জেলা কর্মী সম্মেলনে এক ঝাঁক তৃনমূল নেতৃত্বদের পাশাপাশি তৃণমূল নেতা কর্মী সমর্থকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এ দিন আমডাঙ্গা বিধানসভার ২০২১-এর নির্বাচনের আইএসএফের পরাজিত প্রার্থী জামাল উদ্দিন সহ ১০ জন আইএসএফ নেতা তৃণমূলে যোগ দেন।ব্যারাকপুর লোকসভা তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি ও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল নওসাদ আলম, দমদম লোকসভা তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু সেলের সিকান্দার আযমদের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত ওই কর্মী সম্মেলন থেকে তৃণমূল নেতৃত্বরা পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে বক্তব্য রাখেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি সম্প্রতি সময়ে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের উত্থান এবং শাসক দলের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বেরা দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠায় কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ঠিক সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের মনোবল বাড়াতে সংখ্যালঘু সেল আয়োজিত ওই কর্মী সম্মেলন। এদিন উপস্থিত সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়করা পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করে কর্মীদের ময়দানে নেমে পড়ার অনুরোধ করেন। পাশাপাশি সকলেই আইএসএফ সহ বিজেপির সমালোচনায় সরব হন। রাজ্য সরকারের তরফে সংখ্যালঘু উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে সংখ্যালঘুদের, মমতার পাশে থাকার বার্তা দেন রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান তথা বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেস চেয়ারম্যান বিধায়ক সেখ হাজী নূরুল ইসলাম। সম্প্রতি নূরুল ইসলামকে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সেখ নূরুল ইসলাম সন্তোষ প্রকাশ করেই জানান ‘আমি পারছিলাম না।’ হাজী সাহেব আরও বলেন, ‘আমি পদ থেকে বিলুপ্তি হয়নি আমি চেয়ারম্যান হয়েছি, যুবক ছেলে (মোসারাফ হোসেন) সভাপতি হয়েছে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে চলার চেষ্টা করছি।’ ব্যারাকপুর দমদম তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ও বিধায়ক তাপস রায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে দাবি করেন ‘আইএসএফ’ ‘মিম’ সহ বিরোধী দলগুলি বিশেষ উদ্দেশ্যে কাজ করছে সেটা মানুষের বুঝতে হবে। বিজেপির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘বিভাজনের রাজনীতি চলছে ভাগাভাগি চলছে ধর্মে-ধর্মে বিভাজন করছে, অপশক্তির বিরুদ্ধে সকল ভাষা ধর্ম বর্ণ এক হয়ে লড়তে হবে।’
রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বিজেপিকে নিশানা করে বলেন ‘ওরা বলেছিল বিজেপি ক্ষমতায় আসলে রাম মন্দির নির্মাণ করবে, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা জারি করবে, তাই করেছে।’ আপনারা সাবধান ২০২৪ বিজেপি ক্ষমতায় এলে এনআরসি চালু করবে, সংখ্যালঘু মানুষদের বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেবে। এ দিন বিজেপি কে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন কিছু সংখ্যালঘু নেতাকে কোটি কোটি টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে, মমতার নামে ভুল বোঝানোর জন্য। বিজেপি সমস্ত মিডিয়াকেও কিনে নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন পার্থ ভৌমিক।ব্যারাকপুর লোকসভার সাংসদ অর্জুন সিং বক্তব্য রাখার সময় আমডাঙ্গার বিধায়ককে উদ্দেশ্য করে বলেন সাংগঠনিক স্তরে ত্রুটি হচ্ছে, বুথ স্তরে সংগঠনকে মজবুত করার পরামর্শ দেন অর্জুন সিং। ২০১১ সালে মুসলিমরাই সরকার পরিবর্তন করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দমদম লোকসভার সাংসদ সৌগত রায়ের কথায় তৃণমূলকে চাপে রাখার ক্ষমতা কোনো বিরোধী দলের নেই। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে কর্মীদের কিভাবে কাজ করতে হবে তা আলোচনা করেন রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সহঃ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মাদ্রাসা শিক্ষক নেতা পীরজাদা একেএম ফারহাদ জানান গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা ময়দানে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি, আমাদের লক্ষ্য ২০২৪ সালে বিজেপি মুক্ত দেশ গঠন করা এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বারাসাত সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু সেলের জেলা কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক রফিকার রহমান, রাজ চক্রবর্তী সহ অন্যান্যরা।আইএসএফ নেতার তৃণমূলে যোগদান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইএসএফ নেতা ও বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী আপনজন প্রতিনিধিকে জানান, ‘বিধানসভা নির্বাচনে আমডাঙ্গার আইএসএফ প্রার্থী, নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না আমাদের সঙ্গে। সুতরাং তাঁর নতুন করে তৃণমূলে যোগদান এটা চমকের রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়।’ যদিও তৃণমূলে নবাগত ওই আইএসএফ নেতা সংবাদমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। নওসাদের দাবি, ‘আমাদের সংগঠনের কোনো ক্ষতি হবে না, আগামীদিন আমরা আরও ভালো জায়গায় আসবো।’ রাজ্যজুড়ে তৃণমূল সংখ্যালঘু ছেলের কর্মী সম্মেলন নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি আইএসএফ নেতা ও বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু নেতাদেরকে এতদিন পরে শাসকদল গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতদিন সংখ্যালঘু সেলের কোন গুরুত্ব ছিল না। এখন ‘আইএসএফ’কে রোখবার জন্য সংখ্যালঘু নেতাদেরকে শাসকদল গুরুত্ব দিচ্ছেন।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct