ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক সামরিক হামলার প্রায় এক বছর পূর্ণ হয়েছে। গোটা দেশে প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ এখনো চলছে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের প্রণহানি হয়েছে। উভয় পক্ষের লক্ষাধিক সেনা নিহত হয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে উদ্বাস্তু ও শরণার্থীর জীবন কাটাচ্ছে। ইউক্রেনের অনেক শহর ও গ্রাম রকেট ও গোলার আঘাতে মাটিতে মিশে গেছে। এই যুদ্ধ যখন দ্বিতীয় বছরে পা দিচ্ছে, উভয় শিবিরে হাজার হাজার নতুন সেনা নিয়োগ করা হচ্ছে। এ নিয়ে লিখেছেন লিওনিদ রাগোজিন। আজ প্রথম কিস্তি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক সামরিক হামলার প্রায় এক বছর পূর্ণ হয়েছে। গোটা দেশে প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ এখনো চলছে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের প্রণহানি হয়েছে। উভয় পক্ষের লক্ষাধিক সেনা নিহত হয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে উদ্বাস্তু ও শরণার্থীর জীবন কাটাচ্ছে। ইউক্রেনের অনেক শহর ও গ্রাম রকেট ও গোলার আঘাতে মাটিতে মিশে গেছে। এই যুদ্ধ যখন দ্বিতীয় বছরে পা দিচ্ছে, তখন আমরা উভয় শিবিরকে নতুন করে আরও শক্তি নিয়ে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তৈরি হতে দেখছি। উভয় শিবিরে হাজার হাজার নতুন সেনা নিয়োগ করা হচ্ছে এবং আরও উন্নত ও আধুনিক অস্ত্র লড়াইরত শিবিরে যুক্ত হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আসছে বছর গত বছরের চেয়ে বেশি বড় ও বেশি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হতে যাচ্ছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের নেতারা জনসমক্ষে দেওয়া বাগাড়ম্বর ভাষণে যেসব কথা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে, জয়ের বিষয়ে উভয় পক্ষই বেশ আত্মবিশ্বাসী। তবে তাঁদের বিজয়ের সংজ্ঞা ভিন্ন বলে ঠেকছে। কিয়েভের সরকার পরিষ্কার করে বলেছে, ক্রিমিয়া উপদ্বীপসহ ইউক্রেনের যেসব এলাকা রাশিয়া এ পর্যন্ত দখল করেছে, তার সব কটি দখলমুক্ত করাই তাদের লক্ষ্য। গত নভেম্বরে চেক প্রজাতন্ত্রের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী চূড়ান্ত জয় পাওয়ার পর তিনি ক্রিমিয়াতে অবকাশ কাটাতে যাবেন। তাঁর কয়েকজন কর্মকর্তা আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, তাঁদের লক্ষ্য হলো, রাশিয়ান ফেডারেশনকে ভেঙে টুকরা টুকরা করে ফেলা এবং সেটিকেই তাঁরা চূড়ান্ত জয় বলে মনে করেন।
এ মাসের শুরুতে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান ওলেক্সি দানিলভ ইউক্রনের সংবাদপত্র ইউরেইনস্কা প্রাভদাতে একটি কলামে লিখেছেন, রাশিয়াকে ‘উপনিবেশমুক্ত’ করতে হবে এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে যেসব স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী পুতিনবিরোধিতায় সক্রিয় রয়েছে, তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে হবে। ইউক্রেনের সেনারা ইতিমধ্যে যদিও রাশিয়ার বাহিনীর দখল করা কিছু এলাকা পুনর্দখল করতে সক্ষম হয়েছেন, কিন্তু গত ১২ মাসে রুশ সেনারা ইউক্রেনের যে বিশাল এলাকা ছিনিয়ে নিয়েছে, তার বেশির ভাগ অংশ এখনো রুশ সেনাদের কবজাতেই রয়ে গেছে। এখন তাঁদের মোকাবিলা করতে ইউক্রেন সারা দেশে সেনা সংগ্রহের কার্যক্রম চালাচ্ছে; নতুন নতুন সেনা নিয়োগ করা হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে তারা আধুনিক অস্ত্র ও সামরিক প্রশিক্ষণ সহায়তা পাচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রাথমিকভাবে ইউক্রনের দনবাস এলাকাকে ‘মুক্ত করা’ এবং ইউক্রেনকে ‘নাৎসিমুক্ত’ এবং ‘সামরিকীকরণমুক্ত’ করাকে তাঁর লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেছিলেন। রাশিয়ার সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত দনবাসের দুটি এলাকা দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের পূর্ণ দখল নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিয়াহ ও খেরসন প্রদেশের বিশাল বিশাল এলাকা তারা দখল করে নিয়েছে, যার ফলে ক্রিমিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী স্থলভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার হাতে রয়েছে। অক্টোবরে পুতিন ওই দুই অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করার একটি বিলে সই করেছেন। গত বছরের শেষ ভাগে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে নতুন সেনা সংগ্রহের অভিযান চালিয়ে আরও তিন লাখ সেনাকে নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত করেছে। তাদের একটি অংশকে ইতিমধ্যেই সম্মুখসমরে পাঠানো হয়েছে এবং বাকিরা রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে ব্যারাকে রয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct