লুজান চুক্তির মাধ্যমে তুরস্কের ওসমানীয় শাসনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির শত বছর পূর্তির পর প্রথম প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ১৪ মে। দৃশ্যত দুই দশক ক্ষমতায় থাকার পর, এরদোগানের শাসন অপ্রতিরোধ্য বলে মনে হতে পারে। তবে একই সাথে এরদোগানের সামনে দেশ বিদেশের শক্তিসমূহের যুগপৎ আয়োজন কঠিন চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করতে পারে। ছয়টি প্রধান বিরোধী দল এরদোগানের জোটকে হারানোর জন্য একক প্রার্থী দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা নিয়ে লিখেছেন মাসুম খলিলী। আজ দ্বিতীয় কিস্তি।
ওয়াশিংটনের সাথে আঙ্কারার সম্পর্ক এমন পর্যায়ে উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে যেখানে শীর্ষ তুর্কি কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এরদোগানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেলিম কোরু বলেছেন, ‘এরদোগানের বিশ্বদর্শন অধিকাংশ পশ্চিমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি উগ্র। তুরস্কের নিকটবর্তী প্রতিবেশী বলয়ে যেখানে আঙ্কারা ক্রমবর্ধমানভাবে প্রভাবশালী হচ্ছে সেখানে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমেরিকান এবং ইউরোপীয় প্রভাবের পরিপূরক নয়। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাদের প্রতিস্থাপন এবং প্রতিরোধ করার।’ পশ্চিমাদের মনোভঙ্গি যাই হোক, ভোটাররা এরদোগানকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন এমনটা নিশ্চিত নয়। তুর্কিরা তাদের রাষ্ট্রপতি এবং তার নীতি সম্পর্কে বেশ খানিকটা দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে এখনো।মেট্রোপলের অক্টোবরের শেষের দিকের জরিপে দেখা গেছে, এরদোগানের জন্য অনুমোদন হার দাঁড়ায় ৪৭.৬ শতাংশ, যা এক বছর আগে ৩৯ শতাংশ ছিল। তার পরও কেন অনেকেই তুরস্কের পথ সংশোধনের জন্য এরদোগানের দিকে তাকাচ্ছেন? আংশিকভাবে, এর কারণ তারা জানে না কে এরদোগানকে চ্যালেঞ্জ করবে। প্রধান বিরোধী দলগুলোর টেবিল অফ সিক্স এখনো তাদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। দুই প্রধান প্রতিযোগী হলেন শীর্ষস্থানীয় বিরোধী দল, সিএইচপির নেতা ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলু এবং দলের দীর্ঘদিনের নেতা কামাল কিলিচদারোগ্লু।
তুরস্কের অর্থনীতিকে মেরামত করার জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল তুলে ধরার জন্য টেবিল অফ সিক্সকে বেশ ধীর মনে হয়। গত মাসের গোড়ার দিকে সিএইচপি অবশেষে একটি এজেন্ডার মত কিছু প্রকাশ করে, কিন্তু এটি ছিল বড় বিনিয়োগের বায়বীয় প্রতিশ্রুতি সর্বস্ব এবং সংক্ষিপ্ত। এরদোগানের পছন্দের প্রতিপক্ষ হবেন কিছুটা বর্ণহীন প্রবীণ কিলিকদারোগ্লু, যিনি ১২ বছর ধরে সিএইচপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অনেক তুর্কি রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন যে তরুণ, আরো ক্যারিশম্যাটিক ইমামোগ্লু হবেন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু ইমামোগ্লুকে অনেকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চাইছে। গত মাসে, মেয়রকে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অপমান করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যদিও নির্বাচন নিয়ম অনুসারে তার আইনজীবীরা দোষী সাব্যস্ত হওয়াকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি পেতে পারেন। তবে এরদোগানের এখনো শক্তিশালী সমর্থনে মনে হয় তিনি যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকে আটকে রাখতে পারেন, বিশেষত যদি বসন্তে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা যায়। এরদোগান সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব থেকে বিনিয়োগ এবং ব্যাংক আমানতের ওপর হিসাব কষছেন। আর তুরস্ককে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানির কেন্দ্র করার জন্য পুতিনের প্রতিশ্রুতি হতাশা দূর করতে সাহায্য করবে। এরদোগান কৃষ্ণসাগরে তুরস্কের নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান নিয়েও কথা বলছেন, যা নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। গত মাসে, তিনি ন্যূনতম মজুরি ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা দেন; গত সপ্তাহে, তিনি বেসামরিক কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন বাড়িয়েছেন। এরদোগান এবং তার দল কুর্দি সন্ত্রাসবাদ ও পশ্চিমা ভ্রষ্টতার পুরোনো বক্তব্যের পাশাপাশি পারিবারিক এবং ইসলামিক মূল্যবোধের জন্য সমকামিতার মতো মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিবিরোধী বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গ্রিসের দখলদারিত্বের প্রতি তার হুমকি জাতীয়তাবাদী চেতনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এসব কৌশল এরদোগানকে আগে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছে। এসব আবারও সাহায্যকারী হতে পারে। তুর্কিরা তাদের ভোট না দেওয়া পর্যন্ত, পশ্চিমা নেতারা এরদোগান জমানার অবসান ঘটাতে সচেষ্ট থাকতে পারেন।
এরদোগানকে হারাতে প্রতিরক্ষা, পরিবহন, জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিতে (যে এলাকায় ক্ষমতাসীন সরকার উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছে) আরো অগ্রগতি করার অঙ্গীকার করেছে বিরোধী জোট। ঠিক কিভাবে করা হবে তা ব্যাখ্যা না করে বিরোধী জোট মুদ্রাস্ফীতিকে একক অঙ্কে কমিয়ে আনার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। ছয় বিরোধী দলের অগ্রাধিকার প্রতিফলিত করার পাশাপাশি তাদের ঘোষিত দলিলে আংশিকভাবে অসদস্য এইচডিপিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষত, বিরোধী ব্লক পৌরসভাগুলোতে স্বতন্ত্র ট্রাস্টি নিয়োগের প্রথা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর কুর্দিদের মাতৃভাষা হিসাবে স্বীকৃতি ও স্বায়ত্তশাসনের মতো এইচডিপির উগ্র দাবির উল্লেখ না করেই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা আদালতের পক্ষে যাতে কঠিন হয় সেটি গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছে।আজারবাইজান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে তুরস্কের সম্পর্কসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায় না। তদুপরি, ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান, এশিয়ার জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা এবং তুরস্ক-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা ইতোমধ্যেই বর্তমান সরকারের এজেন্ডায় রয়েছে। তুর্কি বিশ্লেষক দুরানের মতে, বিরোধী জোট এমন অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যা সরকার এর মধ্যে করেছে বা করছে। এরদোগান নিজেও তার বক্তব্যে এ কথা বলেছেন। ছয় বিরোধী দলের অগ্রাধিকার প্রতিফলিত করার পাশাপাশি তাদের ঘোষিত দলিলে আংশিকভাবে অসদস্য এইচডিপিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষত, বিরোধী ব্লক পৌরসভাগুলোতে স্বতন্ত্র ট্রাস্টি নিয়োগের প্রথা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর কুর্দিদের মাতৃভাষা হিসাবে স্বীকৃতি ও স্বায়ত্তশাসনের মতো এইচডিপির উগ্র দাবির উল্লেখ না করেই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা আদালতের পক্ষে যাতে কঠিন হয় সেটি গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct