মনে আছে সেই ডিসেম্বরের কথা! ২০১৯ এর ডিসেম্বর। চিনে একটা অজানা জ্বর হচ্ছে। পরে সেই জ্বর দেখা দিল ড্রাকুলার বিভীষিকা নিয়ে। তার পোশাকি নাম হল কোভিড ১৯। নতুন বছর থেকে সে কোভিড বা করোনা তার খেলা দেখাতে শুরু করল। বিমানে করে সে উড়ে গেল ইউরোপ, আমরিকা, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকায়। সেই যে রবীন্দ্রনাথ মদনভস্ম নিয়ে লিখেছিলেন, ‘বিশ্বময় দিয়েছে তারে ছড়ায়ে’। তেমনি কোভিড ভাইরাস চিন থেকে ছড়িয়ে গেল বিশ্বময়। সে সব ইতিহাস হারিয়ে যাবারই কথা নিয়ে লিখেছেন দিলীপ মজুমদার।
মনে আছে সেই ডিসেম্বরের কথা! ২০১৯-এর ডিসেম্বর। চিনে একটা অজানা জ্বর হচ্ছে। পরে সেই জ্বর দেখা দিল ড্রাকুলার বিভীষিকা নিয়ে। তার পোশাকি নাম হল কোভিড ১৯। নতুন বছর থেকে সে কোভিড বা করোনা তার খেলা দেখাতে শুরু করল। বিমানে করে সে উড়ে গেল ইউরোপ, আমরিকা, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকায়। সেই যে রবীন্দ্রনাথ মদনভস্ম নিয়ে লিখেছিলেন, ‘বিশ্বময় দিয়েছে তারে ছড়ায়ে’। তেমনি কোভিড ভাইরাস চিন থেকে ছড়িয়ে গেল বিশ্বময়।কারোর কারোর সন্দেহ হল, এটা চিনের কারসাজি। উহানের গবেষণাগারে ভাইরাস তৈরি করে চিন তাকে ছড়িয়ে দিয়েছে। কেন ? কেননা চিন সুপার পাওয়ার হতে চায়। ইউরোপকে, বিশেষ করে আমেরিকাকে টাইট করতে চায়। সন্দেহের কারণ যে নেই তা নয়। চিনের আচরণে সন্দেহ হয়। তার লুকুছাপু ব্যাপার। তদন্তে অনীহা। কেউ কেউ আবার একটু নরম করে বললেন, চিন ইচ্ছে করে ছড়ায় নি ভাইরাস, এটা একটা দুর্ঘটনা। নজরদারির অভাবে কেমন করে গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানীদের একদল বললেন, এই ভাইরাস কৃত্রিম নয়, নয় জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারর্ড।কিন্তু মজার ব্যাপার, পৃথিবীর অন্য অন্য দেশে যখন করোনা মারকাটারি অভিযান শুরু করেছে, তখন চিনে না কি করোনা নিয়ন্ত্রণে। আমাদের চিনাপন্থী দাদারা বললেন, দেখলে কমিউনিস্টদের খ্যামতা, অল্প সময়ে কেমন ভাইরাসবাবাজিকে ঝাড়ে-বংশে নিকেশ করে দিল। সংক্রমণ আটকে দিল, মৃত্যু আটকে দিল। মৃত্যুর গ্রাফ যখন অন্য দেশে হু হু করে বাড়ছে, তখন চিনে যেখানে ছিল সেখানেই থিতু হয়ে আছে।
দুবছর পরে আবার ডিসেম্বরে শোনা যাচ্ছে,চিনে বাড়ছে করোনা। বিশ্বের অন্য অন্য দেশে যখন করোনা নিয়ন্ত্রণে, লোকজন হাঁফ ছেড়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য জোরকদমে শুরু হয়েছে, তখন চিনে আবার এমনভাবে করোনা দেখা দিল কেন ! আমাদের কমিউনিস্ট দাদাদের মুখে কুলুপ। বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে বলছেন, এই শীতের সময়ে, আগামী তিন মাসে চিনে করোনার তিনটে ঢেউ আসবে। চিনে যদি তিনটে আসে তাহলে আমাদের তো তেত্রিশটা ঢেউ আসবে। বুস্টারে আটকাবে তো ! চিনে করোনার এক নতুন প্রজাতি দেখা দিয়েছে। ভুল বললাম। প্রজাতি নয়, উপ-প্রজাতি। ওমিক্রন প্রজাতির বি এফ ৭ উপ-প্রজাতি। এর মধ্যে সেই উপ-প্রজাতি ভারতের চারজনের শরীর দখল নিয়েছে। কে জানে, উপ-প্রজাতি থেকে উপ-উপ-প্রজাতি আসবে কি না নাতির পরে পুতির মতো। কিন্তু চিন তো অর্বাচীন নয়। অন্য দেশ বিজ্ঞানীদের কথা শিরোধার্য করে ভেবে এসেছে করোনাকে একেবারে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করা যাবে না, সতর্ক থেকে তার সঙ্গে সহবাস করতে হবে। চিন তখন বজ্রকণ্ঠে বলেছে আমরা আমাদের দেশকে জিরো কোভিড করে ছাড়ব। আর যতদিন চিন কোভিড শূন্য না হবে, ততদিন কড়াকড়ি থাকবে। তার মানে দাদারা ছড়ি ঘোরাতে থাকবে। কোয়রান্টিন শিবির থাকবে, লকডাউন থাকবে, মাস্ক পরতে হবে, গণ পরীক্ষা দিতে হবে এবং সে পরীক্ষায় টুকলি করা চলবে না। এমন কড়াকড়ি যে চিনের মানুষ মুখের মুখোশ খুলে একটু শ্বাস নেবার জন্য ছটফট করতে শুরু করে। তার থেকে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ। কিন্তু লৌহমানব শি জিনপিংকে টলানো যায় নি। কিন্তু এত কড়াকড়ি সত্ত্বেও সেখানে কোভিডের বাড়াবাড়ি হল কেন? কেউ বলছেন, আরে বাপু, চিনে টিকাকরণ কম হয়েছে। কেউ আবার বলছেন, সেখানকার দেশীয় টিকার শক্তি কম বলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায় নি। সত্যি কথাটা কি দেবা ন জানন্তি, মানুষ তো ছার। কিন্তু আবার যদি এখানে লকডাউন হয়, আ্য় উপায়ে টান পড়ে, ভয়ে ভয়ে দিনযাপন করতে হয়, তাহলে মেপে কথা না বলে চেপে ধরতে হবে চিনকে।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct