ডব্লুবিসিএস পরীক্ষায় সফলতার টিপস
আশিকুল আলম বিশ্বাস
কিভাবে পড়লে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় সফল হওয়া যাবে এবং প্রয়োজনীয় বইপত্রের নামগুলো আজকে পরীক্ষার্থীদের বলছি। প্রথমেই একটি কম্প্যাক্ট সময়সূচী প্রস্তুত করো, যা তোমরা প্রস্তুতির সময় কঠোরভাবে অনুসরণ করবে। এতে প্রস্তুতিতে অনেকের থেকেই এগিয়ে থাকবে। ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার তিনটি পর্যায়- প্রিলিমস, মেন এবং ইন্টারভিউ সম্পর্কে ভাল জ্ঞান অর্জনের পর,তোমরা জোরকদমে তার প্রস্তুতি শুরু করবে। এছাড়াও,গত ১০-১৫ বছরের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করো, যেসব বিষয় থেকে বেশিরভাগ প্রশ্ন করা হয় সেগুলি খুঁজে বের করে সেই বিষয়গুলিতে ফোকাস করো।
পাঠ পরিকল্পনাঃ ভালভাবে বিষয়গুলি পড়ো এবং যা পড়েছো তার একটি সারমর্ম তৈরি করো। কপিতে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো লিখো। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার পরীক্ষা দিয়ে নিজের পারফরম্যান্স পরীক্ষা করো।এই সাপ্তাহিক পরীক্ষা তোমাদের বোঝার এবং প্রস্তুতির স্তরের উন্নতি সাধন করবে। পরীক্ষার সময় যে পয়েন্টগুলির মুখোমুখি হয়েছো তার উপর কঠোর পরিশ্রম করো। ডব্লুবিসিএস মেনস পরীক্ষা ১৬০০ নম্বরের হয়। প্রথমেই থাকে মাতৃভাষা। বাংলা, হিন্দি, নেপালি এবং উর্দু ভাষার হয়ে থাকে। ইংরাজি পরীক্ষায় বর্ণনামূলক প্রশ্ন থাকে। যে কোনও অপশনালই একইভাবে স্কোরিং। এমন বিষয় বাছতে হবে যে বিষয়ে পরীক্ষার্থীরা কমফর্টেবল। স্নাতক স্তরে ওই বিষয় থাকলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো চর্চা করতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগে অ্যান্থ্রপলজি, সাইকোলজি, কলা বিভাগের মধ্যে সোশিওলজি, পলিটিক্যাল সায়েন্স, ইতিহাস রাখা যেতে পারে অপশনাল বিষয় হিসেবে। কলা বিভাগের বিষয় মানেই প্রচুর লিখতে হয় এই ধারণা ভুল। এক্ষেত্রে সব থেকে বড় বিষয় টাইম ম্যানেজমেন্ট। আমি কতটা লিখব, প্রশ্নের মান কতটা রয়েছে। পয়েন্ট ধরে, ফ্লো-চার্ট বা ডায়াগ্রাম ধরে লেখা যায়। কোনও বিষয়ে যদি ৪০ নম্বরের ৫টা প্রশ্ন থাকে। তবে একেকটা প্রশ্নে ৩০ থেকে ৩২ মিনিট সময় পাওয়া যাবে। প্রত্যেকটা প্রশ্নের সাব পার্টস ধরে লেখা উপযোগী হবে। বাড়িতেই প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এই টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে হবে। অনেকেই চাকরি করতে করতেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। তাঁদের হাতে প্রস্তুতির সময় এমনই কম থাকে। ১২ ঘণ্টা ১৩ ঘণ্টা পড়ার থেকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা মনযোগ সহকারে পড়া অনেক বেশি উপকারী। তাই এই সব থেকে টাইম ম্যানেজমেন্টে সব চাইতে ভাল উপায় হল মক। কত সংখ্যক মক সমাধান করতে পারা যাচ্ছে তার উপর এটা নির্ভর করে। কোন প্রশ্নে বেশি এবং কোন প্রশ্নে কম সময়ে লাগবে তা বোঝা যাবে মক সমাধানের মাধ্যমেই। বইটা খুঁটিয়ে পড়তে হবে। শুধু এমসিকিউ-র বই সমাধান করে গেলে বিপদে পড়বে পরীক্ষার্থীরা। রুটিন এমনভাবেই সাজাতে হবে যে কোনও বিষয়ে বই পড়া এবং এমসিকিউ-র বই সমাধান দুটোই করা যায়। সিভিল সার্ভিসের কোনও প্রশ্নের উত্তর লেখাতে বৈচিত্র যেন থাকে তা দেখতে হবে। এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিকভাবে বাংলায় পড়লেও ধীরে ধীরে ইংরেজি বই পড়া শুরু করতে হবে। কারণ, প্রিলিমস বাংলা এবং ইংরেজিতে হলেও মেনসে প্রশ্ন ইংরেজিতেই আসে। সায়েন্স, ইকোনমিক্স, পলিটিতে বেশ কিছু শব্দ আছে যার অনুবাদ হয় না। ফলে দুই ভাষার জন্য সমস্যায় পড়তে হতে পারে। ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার জন্য কোন বইগুলো পড়া উচিত? আজকে পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্যে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সেরা বইগুলোর তালিকা দিলাম। এই বই গুলো ডব্লিউবিসিএস প্রিলিমিনারি ও মেইন, দুটি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যে খুব দরকার। ডব্লিউবিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতে ইতিহাস,ভূগোল,পলিটি,ইকোনমি,রিজনিং,সায়েন্স এবং টেকনোলজি,কারেন্ট অ্যাফের্য়াস,ইংরাজী বিষয়ে করা হয়। ডব্লিউবিসিএস মেইন পরীক্ষা :বাংলা,ইংরাজী,,ইতিহাস,ভূগোল,পলিটি,ইকোনমিক্স, সায়েন্স এবং টেকনোলজি
কারেন্ট অ্যাফের্য়াস,জেনারেল নলেজ,পরিবেশ বিজ্ঞান,ম্যাথস এবং রিজনিং,এই বিষয়গুলো। এই পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বইগুলো হলঃ
১। পি.কে.দে সরকারের এ টেক্সস বুক অব হায়ার ইংরাজী গ্রামার কম্পোজিশন অ্যান্ড ট্রান্সলেসান : প্রিলি এবং মেইন দু’টি পরীক্ষার জন্য সবথেকে ভালো এটি। বইটি ভালো করে পড়লে প্রিলির সমস্ত প্রশ্ন এখান থেকে পেয়ে যাবে। তাছাড়া মেন পরীক্ষার জন্যে এসে বা প্রেসি প্রাকটিস এর জন্যে বইটি খুবই উপকারী। এছাড়া রেফারেন্স বই হিসাবে প্রিলির জন্য এস.পি.বক্সির অবজেক্টটিভ জেনারেল ইংলিশ বইটি পড়তে পারো। ইতিহাস বিষয়ের জন্য- ৩। জীবন মুখোপাধ্যায়ের স্বদেশ সভ্যতা ও বিশ্ব : প্রিলি হোক বা মেইন, দু’টি পরীক্ষার জন্যে এই বইটি পড়লেই যথেষ্ট। খুব সুন্দর ও সহজ সরল ভাষায় বই টি লেখা আছে, যা সহজে বুঝতে পারবে। এছাড়া ইংরাজী তে পুনম দালাল দাইয়া র ‘ এনসিয়েন্ট অ্যান্ড মেডিইভাল ইন্ডিয়া’ বই টি ভালো। মেইন পরীক্ষার অনেক প্রশ্নও এটি থেকে আসে। ইংরেজি মাধ্যমে বিপিন চন্দ্রের ইণ্ডিয়ান ন্যাশনাল মুভমেন্ট(মেডিয়েভাল হিস্ট্রি) বইটিও ভালো। তাই যারা ইংরাজী তে পড়তে চাও তারা জীবন মুখোপ্যায়ের পাশাপাশি এই বই দুটিও সাথে রাখতে পারো। ভূগোল বিষয়ের জন্য- ৩। কার্তিক চন্দ্র মন্ডলের ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল : এই বইটি সঠিক ভাবে পড়লে প্রায় সমস্ত প্রশ্ন কভার করতে পারবে, প্রিলি ও মেইন পরীক্ষার জন্য। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ পার্ট টি খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে বইটি তে। নতুন এডিশন টা কিনে নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করো। বইটি ইংরাজী ও বাংলা দু’টি ভার্সানেই পাবে। এছাড়া ইংরাজি ভাষায় আরও একটি ভালো বই হল মজিদ হুসেনের ‘ইন্ডিয়ান জিওগ্রাফি’। ওরিয়েন্ট লংম্যানের জিওগ্ৰাফি বইটিও পড়া যেতে পারে। ইকোনমি বিষয়ের জন্য- ৪। আরিহান্ট পাবলিকেশনের ইন্ডিয়ান ইকোনমি : আরিহান্ট পাবলিকেশনের এই বইটি তে পুরো সিলেবাস টি কভার করা আছে। প্রিলিমিনারি এবং মেনই পরীক্ষার জন্য অবশ্যই এই বইটি পড়তে পারো বেসিক কনসেপ্ট সম্পর্কেও ধারনা বাড়বে।এছাড়া শুরুতে বেসিক ধারনা নেওয়ার জন্য কে.শঙ্করগনেশের ‘ইন্ডিয়ান ইকোনমি কী কনসেপ্ট’ বইটি পড়তে পারো। তোজাম্মেল হোসেনের অর্থনীতির বইটাও পড়তে পারো। ৫। এম.লক্ষীকান্ত এর ইন্ডিয়ান পলিটি : প্রিলি এবং মেইন পরীক্ষায় ইন্ডিয়ান পলিটি বিষয়ের জন্যে এই বইটি ছাড়া আর কোনো বই পড়ার দরকার নেই। বেসিক কনসেপ্ট থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু কভার করা আছে বই টি তে। এছাড়া রেফারেন্স হিসাবে বাংলায় পড়ার জন্যে একটি বই রাখতে পারো- অনাদিকুমার মহাপাত্রের “ভারতের শাসন ব্যবস্থা ও রাজনীতি”। ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় সায়েন্স বিভাগ থেকে প্রশ্ন নির্দিষ্ট ভাবে আসে না। কোনে বছর ফিজিক্স থেকে, তো কোনো বছর রয়ায়ন, বা বায়েলজি থেকে। আবার কেনো বছর তিনটি বিষয় থেকে। তাই সায়েন্স বিষয়ের জন্য- সাজেস্ট করব, নবম – দশম শ্রেনীর পাঠ্য বই গুলি খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ো। প্রিলি এবং মেইন দু’টি পরীক্ষার জন্যেই উপযোগী। এছাড়া ইংরাজী তে আরিহান্ট পাবলিকেশনের ‘ম্যাগবুক জেনারেল সায়েন্স’ বই টি পাশে রাখতে পারো। এটিও সায়েন্সের সমস্ত প্রশ্ন কভার করতে পারবে।
ম্যাথস বিষয়ের জন্য- ৭। ড: আর.এস. আগরওয়ালের কোয়ান্টেটিভ অ্যাপ্টিটিউড : ডব্লিউবিসিএস প্রিলি ও মেইন পরীক্ষার ম্যাথস বিষয়ের জন্যে এই একটি বই যথেষ্ট। রিজনিং বিষয়ের জন্য- ৮। ড: আর এস আগরওয়ালের ” এ মর্ডান অ্যাপ্রোচ টু ভার্বাল অ্যান্ড নন-ভার্বাল রিজনিং : রিজনিং বিষয়ের জন্য এই বইটি যথেষ্ট। প্রিলি ও মেইন পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন এই বই থেকে পেয়ে যাবে। জেনারেল নলেজ বিষয়ের জন্য- ৯। লুসেন্টের ‘জেনারেল নলেজ’।কারেন্ট অ্যাফের্য়াস এর জন্যে- ১০। অ্যাচিভার্স বাংলা ম্যাগাজিন পড়ো। যারা ইংরাজী ভাষায় পড়তে চাও তাদের জন্যে ‘প্রতিযোগিতা দর্পন’ ম্যাগাজিন টি যথেষ্ট। এছাড়াও যোজনা ম্যাগাজিন, কম্পিটিশন সাকসেস রিভিউ ম্যাগাজিন কেউ পড়তে চাইলে পড়তে পারো। সকল পরীক্ষার্থীদের সফলতা কামনা করছি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct