পশ্চিমবঙ্গ বর্তমানে বেকার সমস্যা এক চরম আকার ধারণ করেছে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের ভূমিকা এখন বহুল চর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণমাধ্যমে একটু চোখ রাখলেই সে কথা বুঝতে খুব বেশি অসুবিধা হয় না। প্রাথমিক শিক্ষক , মাদ্রাসা শিক্ষক, মাধ্যমিক শিক্ষক এবং গ্রুপ ডি নিয়োগ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার আওতায় এসেছে এস এস সির শারীরশিক্ষা ও কর্মশিক্ষা শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও। চাকুরি নিয়ে মামলা তখনই হয় যখন নিয়োগে বে-নিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে লিখেছেন সনাতন পাল। আজ প্রথম কিস্তি।
পশ্চিমবঙ্গ বর্তমানে বেকার সমস্যা এক চরম আকার ধারণ করেছে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের ভূমিকা এখন বহুল চর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণমাধ্যমে একটু চোখ রাখলেই সে কথা বুঝতে খুব বেশি অসুবিধা হয় না। প্রাথমিক শিক্ষক , মাদ্রাসা শিক্ষক, মাধ্যমিক শিক্ষক এবং গ্রুপ ডি নিয়োগ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার আওতায় এসেছে এস এস সি- শারীরশিক্ষা ও কর্মশিক্ষা শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও। চাকুরি নিয়ে মামলা তখনই হয় যখন নিয়োগে বে-নিয়মের অভিযোগ ওঠে। এই বেনিয়ম আর্থিক কারণে হতে পারে, স্বজন পোষণের জন্য হতে পারে, আবার দলীয় রাজনীতির স্বার্থেও হতে পারে। এই নিয়োগ দুর্নীতির কারণ অনুসন্ধান করা তদন্তকারী সংস্থার কাজ। তারা আদালতে যে সাক্ষ্য প্রমাণ পেশ করবেন, তার ভিত্তিতেই আদালত আইন মোতাবেক বিচার করবে। কিন্তু যদি কোনো অবাঞ্ছিত কারণে তদন্ত সঠিক ভাবে না হয়,তাহলে ন্যায় বিচার না হবার দায়টা তদন্তকারী সংস্থার উপরেই বর্তায়। তদন্ত তখনই কঠিন হয়, যখন অভিযোগ শাসকের বিরুদ্ধে ওঠে।
টিভির পর্দায়, খবরের কাগজে কালো টাকার পাহাড় দেখে এবং খবর দেখে অনেকেই বুঝে গেছেন যে নিয়োগে অর্থের বিনিময়েই দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু মানুষ অনুমান করলেও তদন্তকারী সংস্থা এখনও পর্যন্ত দুর্নীতির মূল পান্ডাকে গ্রেফতার করতে পারেননি এবং তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে আদালতে দাখিল করতে পারেননি, এটা ইচ্ছাকৃত,নাকি অনিচ্ছাকৃত না কারো নির্দেশে,সেটা সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। তবে দুর্নীতি যে হয়েছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্তত মাননীয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায় তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে। মূল অপরাধীর সাজা হবে— কি হবে না, এমন অনিশ্চয়তার সুর যখন বিচারপতির কন্ঠে ধ্বনিত হয়,তখন তদন্তকারী সংস্থা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন আসবে, এটা খুবই স্বাভাবিক । এতদিন ধরে শরীর শিক্ষার হবু শিক্ষকরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। সেই আন্দোলনকে রাজ্যের মানুষ অনেকেই সমর্থন করেছেন,এমন কি এসব নিয়ে আমি নিজেও লিখেছি। কারণ তখন মনে হয়েছিল তাদের আন্দোলন ন্যায়ের দাবিতে। কিন্তু এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে তাদের আন্দোলন শুধুমাত্র চাকুরি পাওয়ার জন্য, সে যে পথেই হোক না কেন! কিন্তু আন্দোলন হোক আর না হোক সমস্ত নিয়োগ নিয়ম মেনে আইন মেনে হওয়া দরকার। আন্দোলন করলেই তাকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হোক, এটা অন্তত কোনো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ মনে করবেন না। ঘটনা প্রবাহ প্রমাণ করছে যে ঐ সমস্ত হবু শিক্ষকদের দাবির সাথে ন্যায়ের খানিকটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কারণ সরকার তাঁদের জন্য হঠাৎ করেই ১৬০০ সুপার নিউমেরারি পোস্ট তৈরি করে শরীর শিক্ষা ও কর্মশিক্ষার হবু শিক্ষকদের নিয়োগ করতে চাইছেন। কিন্তু মেধাতালিকায় যদি আর একজনের নামও না থাকেন,তখন ওয়েটিংয়ে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগের প্রশ্ন আসে সেই নিয়োগে সমস্ত যোগ্য প্রার্থীদেরই সুযোগ পাবার নৈতিক অধিকার থাকা উচিত বলে হয় । তাছাড়াও সুপার নিউমেরারি পোস্ট সৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন থাকায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হতেই তারা মামলাকারী আইনজীবী দের বিরুদ্ধে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসে গেলেন! কিন্তু নিয়ম মেনে বা আইন মেনে নিয়োগের ক্ষেত্রে কেউ বাধা দিতে পারবেন না।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
লেখক প্রবান্ধিক ও শিক্ষক...
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct