কুতুব উদ্দিন মোল্লা, ক্যানিং, আপনজন: দীর্ঘ প্রায় একবছর পর পুলিশ প্রশাসন ও হ্যাম রেডিও’র উদ্যোগে বাড়িতে ফিবলো মধ্যপ্রদেশের বিপিন।মধ্যপ্রদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে নিতে এসেছিলেন বিপিন এর বাবা রামকুমার সাকেত,ভাই রমেশ কুমার সাকেত। অন্যদিকে দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর বিপিন কে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে খুশি হ্যাম রেডিও ওয়েষ্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাস ও দিবস মন্ডল। উল্লেখ্য মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার নেইহার থানার গোবরি গ্রামের হরিজন বস্তির বাসিন্দা রামকুমার সাকেত। দুই ছেলেকে নিয়ে চাষ আবাদের কাজ করে কোন রকমে দিন গুজরান করতেন। দরিদ্র পরিবারের বড় ছেলে বিপিন সাকেত চাষবাসের কাজ করতো না। পড়াশোনা করে চাকরি করার ইচ্ছা ছিলো তার। সেইমতো স্নাতক উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিভিন্ন ভাবে চাকরির চেষ্টা করে সে। চাকরি না পেয়ে এক সময় মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকে।আচমকা গত প্রায় এক বছর আগে পরিবারের সদস্যদের অলক্ষ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে বিপিন।পরিবারের লোকজন বিস্তর খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে স্থানীয় সরপঞ্চ(পঞ্চায়েত প্রধান) এর দ্বারস্থ হয়।তার পর প্রায় ১০ মাস অতিবাহিত হলেও ছেলের কোন খোঁজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে সাকেত পরিবারের লোকজন।এদিকে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরতে ঘুরতে গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে ক্যানিং শহরে হাজীর হয় মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক বিপিন সাকেত।স্থানীয় মানুষজনের সন্দেহ হয় ছেলেটি চোর। পরে বুঝতে পারে ছেলেটি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। স্থানীয় কয়েকজন মহকুমা শাসকের নজরে আনেন বিষয়টি। ক্যানিং থানাতেও জানানো হয়। এরপর মহকুমা শাসক লিখিত নির্দেশ দেন ক্যানিং থানার আইসি সৌগত ঘোষকে।
জানানো হয়, মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটি কে যেনতেন প্রকারে তার বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য।পুলিশের তরফে ক্যানিং থানা থেকে হ্যাম রেডিও ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা।ক্যানিং থানার আইসি’র সৌগত ঘোষের উদ্যোগে ওই যুবক কে কাকদ্বীপের বামানগর ওয়েলফেয়ার সোসাইটিতে রাখা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশ এবং মহকুমা শাসকের তরফ থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক কে বারংবার জিঞ্জাসাবাদ করে সঠিক ঠিকানা জানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তেমন বিশেষ লাভ হয়নি।এরপর যুবকের ঠিকানা উদ্ধার করতে কোমর বেঁধে আসরে নামে হ্যাম রেডিও ওয়েষ্টবেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরিশ নাগবিশ্বাস ও দিবস মন্ডল। তাঁরা রাজস্থান, মহারাষ্ট্র,গুজরাট,মধ্যপ্রদেশ এবং হিমাচল প্রদেশে খোঁজখবর শুরু করেন। অবশেষে মধ্যপ্রদেশে ওই যুবকের পরিবারের সন্ধান পায় তাঁরা।যোগাযোগ করা হয় ওই যুবকের পরিবারের সাথে। ছেলে কে ফিরে পেলেও নিয়ে যাওয়ার মতো খরচ না থাকায় হাল ছেড়ে দেয় সাকেত পরিবার।সাকেত পরিবার হাল ছাড়লে ও হাল ছাড়তে নারাজ হ্যাম রেডিও ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাব এর সম্পাদক অম্বরিশ নাগবিশ্বাস। তিনি পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় সমস্ত খরচ বহন করার দায়িত্ব নিয়ে ওই যুবক কে বাড়িতে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ বিষয় অম্বরিশ নাগবিশ্বাস জানিয়েছেন ‘ক্যানিং থানার আইসি এবং ক্যানিং মহকুমা প্রসাশন উদ্যোগ নেওয়ায় ছেলেটি বৃহষ্পতিবার বাড়িতে ফিরলো তার পরিবারের সাথে।পাশাপাশি দেশে ফিরে যাতে করে কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য মধ্যপ্রদেশ ওই এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী অখিলেশ আগরয়াল যুবকের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। এমনকি স্থানীয় বিধায়ক নারায়ণ ত্রিপাঠী ওই যুবকের চিকিৎসা সহ অন্যান্য দায়িত্ব নিজেই বহন করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিবারের লোকজনদের সাথে বাড়িতে ফিরছে তাদের কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছে বিপিনের পরিবারের লোকজন।অন্যদিকে হ্যাম রেডিও ওয়েষ্টবেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সদস্য দিবস মন্ডল বলেন ‘পুলিশ প্শাসনের উদ্যোগে বিপিন কে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে বৃহস্পতিবার দুপুরে আমরা খুশি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct