সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: এলাকার বাসিন্দা থেকে পরিবেশবিদ, নদী বিশারদ থেকে ভূতত্ত্ববিদরা বার বার বলছেন নদীর বুক থেকে অবৈজ্ঞানিক ও অপরিকল্পিত ভাবে বালি ও পাথর সরিয়ে ফেলা উচিত নয়। এতে নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ার পাশপাশি ভাঙনের সমস্যাও মাথাচাড়া দেবে। বাড়বে বন্যার আশঙ্কা ও নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ার সম্ভাবনাও। কিন্তু সেই সব সতর্কবার্তাকে উড়িয়ে দিয়ে বালি ও পাথর মাফিয়ারা দিন দুপুরেই হোক বা রাতের আঁধারেই হোক বালি ও পাথর পাচার করে চলেছে নদীর বুক থেকে। আর এই মাফিয়াদের ভয়ে এলাকার মানুষজন সব দেখেও মুখ চুপ করে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সমস্যার প্রতিকার করতেই এবার বাংলার বুকে ভিন্ন পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার। ঠিক করা হয়েছে দক্ষিণবঙ্গ হোক বা উত্তরবঙ্গ, নদীর বুক থেকে বালি ও পাথর পাচারের ঘটনা চোখে পড়লেই যাতে সেই খবর দ্রুত প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে চলে আসে তার জন্য খোলা হবে কলসেন্টার। সেখানে অভিযোগ করা ব্যক্তির নাম ও পরিচয় গোপন রেখে প্রশাসনের তরফে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।বাংলার বুকে বিভিন্ন নদী থেকে বালি ও পাথর চুরি করার প্রবণতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বেআইনি ভাবে এই বালি ও পাথর চুরি যাওয়ার ফলে রাজ্য সরকারের রাজস্ব যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি নদীর আশেপাশের এলাকার বিপদও বাড়ছে। সেই ঘটনা ঠেকাতেই রাজ্য সরকার কলসেন্টার খুলছে যেখানে নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি বা পাথর চুরি হচ্ছে দেখলেই যে কেউ ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারবেন। ফোন করে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি মেসেজ কিংবা ই-মেলও পাঠিয়েও অভিযোগ জানানো যাবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। বালি ও পাথর খাদান দেখভালের জন্য গঠিত হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন। একটা সময় পর্যন্ত এই কাজটা করত রাজ্যের সেচ দফতর। কিছু জায়গায় আবার বন দফতরও এই কাজ দেখার দায়িত্বে ছিল। বর্তমানে রাজ্যের সমস্ত বালি ও পাথর খাদানকে একছাতার তলায় আনা হয়েছে। বালি ও পাথর খাদানের লিজ দেওয়ার জন্য টেন্ডার ডাকা থেকে শুরু করে লিজের পুনর্নবীকরণ, চুরি ঠেকানো, সবটাই দেখাশোনা করে ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন।এই সংস্থা তৈরির পিছনে মূলত দু’টি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, বালি ও পাথর খাদান থেকে সরকারের রোজগার বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, নদী থেকে বেআইনি বালি পাচার বন্ধ করা। কর্পোরেশন তৈরি হওয়ার পরে সরকারের রোজগার অনেকটা বাড়লেও বালি ও পাথর পাচার পুরোপুরি আটকানো যায়নি। এখনও রাজ্যের বহু জায়গায় বেআইনি বালি খাদানের ব্যবসা চলছে। সেটা বন্ধ করতেই কল সেন্টার চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সারা বছর ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টার খোলা থাকবে। যে কোনও সময়ে সেখানে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা যাবে। অভিযোগ নেওয়া এবং তার প্রতিকারের জন্য সেল খোলা হবে। প্রতি সপ্তাহে একবার রিপোর্ট জমা দেবে সেল। নবান্নের আধিকারিকদের বক্তব্য, নদী থেকে বালি ও পাথর চুরির ঘটনা ঘটলেও সেই খবর যথাসময়ে প্রশাসনের কাছে পৌঁছচ্ছে না। অনেক জায়গায় অন্ধকারে বেআইনি ভাবে বালি তোলা হচ্ছে। স্থানীয় থানা এবং বিএলআরও অফিসের আধিকারিকদের একাংশ এই অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত। ফলে স্থানীয় মানুষজন পুলিশ কিংবা বিএলআরও দফতরে অভিযোগ জানালেও সেটা ধামাচাপা পড়ে যায়। সেই খবর পৌঁছচ্ছে না ওপরতলায়। এই প্রবণতা বন্ধ করতেই কল সেন্টার তৈরির ভাবনা মাথায় এসেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct