২০ বছর আগে সোনিয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়ে জিতেন্দ্র প্রসাদ যেখানে ১০০ ভোটও টানতে পারেননি, শশী থারুর সেখানে সহস্রাধিক ভোট সংগ্রহ করে বোঝালেন, দলের স্বার্থে যেসব সংস্কারের কথা তাঁরা বলে আসছেন, তাতে অনেকের সায় রয়েছে। দ্বিতীয় খাড়গে ভোটের আগেই তিনি জানিয়েছিলেন, দলের স্বার্থে গান্ধী পরিবারের পরামর্শ সব সময় নেবেন। দলের জন্মাবধি যে পরিবার যাবতীয় ভালোমন্দের সঙ্গে জড়িত, যাঁদের এত অবদান ও ত্যাগ স্বীকার, তাঁদের উপেক্ষা করা মূর্খতা। কংগ্রেসকে নিয়ে লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ প্রথম কিস্তি।
কংগ্রেসের নবনির্বাচিত সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দীপাবলি এবং নতুন সভাপতির অভিষেক পর্ব উপলক্ষে ভারত জোড়ো যাত্রায় তিন দিনের বিরতি পেয়ে দিল্লিতে এসে খাড়গের অভিষেক পর্বে হাজির থাকবেন রাহুল গান্ধী। সভাপতি নির্বাচন ঘিরে তেমন কোনো চমক ছিল না। কংগ্রেসের ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’ চেয়েছে, তাই অশীতিপর খাড়গে জিতেছেন। দল পরিচালনায় এখন তিনি কোনো চমক দেখাতে পারেন কি না, কৌতূহল তা নিয়ে। কৌতূহলের কারণ অনেক। প্রথম কারণ, কুড়ি বছর পর নির্বাচন হওয়া। নির্বাচনের স্ক্রিপ্ট যতই আগে থেকে লেখা থাকুক না, চ্যালেঞ্জার হিসেবে শশী থারুর কত ভোট টানেন, সেটা ছিল স্বাভাবিক আগ্রহ। ২০ বছর আগে সোনিয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়ে জিতেন্দ্র প্রসাদ যেখানে ১০০ ভোটও টানতে পারেননি, শশী থারুর সেখানে সহস্রাধিক ভোট সংগ্রহ করে বোঝালেন, দলের স্বার্থে যেসব সংস্কারের কথা তাঁরা বলে আসছেন, তাতে অনেকের সায় রয়েছে। সেই সংস্কারের পথে নতুন সভাপতি হাঁটেন কি না—প্রথম কৌতূহল।
দ্বিতীয় কৌতূহল খাড়গেকে নিয়ে। ভোটের আগেই তিনি জানিয়েছিলেন, দলের স্বার্থে গান্ধী পরিবারের পরামর্শ সব সময় নেবেন। দলের জন্মাবধি যে পরিবার যাবতীয় ভালোমন্দের সঙ্গে জড়িত, যাঁদের এত অবদান ও ত্যাগ স্বীকার, তাঁদের উপেক্ষা করা মূর্খতা। অনুগত থেকেও খাড়গে কতটা স্বাধীনভাবে দল পরিচালনা করতে চাইবেন ও পারবেন, সেটাও অবশ্যই এক কৌতূহল। বিশেষ করে মনোনীত হওয়া ইস্তক ‘রবার স্ট্যাম্প’ ও ‘রিমোট কন্ট্রোল’ শব্দ দুটি যখন তাঁকে ঘিরে আবর্তিত। খাড়গের কাছে এই শব্দদ্বয় অসম্মানজনক হলে এক কথা, না হলে অন্য। কীভাবে তিনি পরিচিত হবেন বা হতে চাইবেন, নিজেই নিজেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করাবেন কি না, তাঁর ব্যাপার। এই দায়িত্ব তাঁর নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করারও একটা সুযোগ এনে দিয়েছে। তৃতীয় কৌতূহল, যে কারণে ২০ বছর পর এই ভোট, নতুন সভাপতি সেই চাহিদা কতটা মেটাতে পারবেন, তা ঘিরে। তিন বছর ধরে সংগঠনের সর্বস্তরে নির্বাচনের দাবি (থারুরও সেই দাবিদারদের অন্যতম) খাড়গে মানবেন কি? তিনি চাইলেও গান্ধী পরিবার এবং এযাবৎকালের দাক্ষিণ্যভোগীরা তা হতে দেন কি না, সেটা বড় আকর্ষণ। মনোনয়নের বদভ্যাস বনাম নির্বাচন, এটা কংগ্রেসে আগামী দিনের অনিবার্য দ্বৈরথ। মনে রাখতে হবে, একটা সময় রাহুল নিজেই কিন্তু ‘বাস্তুঘুঘুদের’ বাসা ভাঙতে ব্লক স্তর থেকে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ার আদলে ভোট করার কথা শুনিয়েছিলেন। এখন তাঁর মন ও মত বদল হয়েছে কি না, জানা নেই। এই সব কৌতূহলের নিরসনের ওপর কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ বহুলাংশে নির্ভরশীল।
সৌ: প্র. আ.
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct