ডিপ্রেশন ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
ডা. পার্থসারথি মল্লিক, এম.ডি (কন্)
মনখারাপ নাকি ডিপ্রেশন? মনখারাপ দু-এক দিনে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু মনখারাপ যদি দু’সপ্তাহবা তার বেশি স্থায়ী হয়, তা হলে বুঝতে হবে তা ডিপ্রেশনের দিকে এগোচ্ছে । আর একটা দিকও দেখতে হবে, তিনি সব কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কি না। হয়তো তিনি সিনেমা-সিরিজ দেখতে ভালবাসেন, গান ভালবাসেন, কিন্তু এখন সেটা আর ভাল লাগছে না। বা কেউ হয়তো রান্না করতে, খেতে ভালবাসেন, সেটাও আর ভাল লাগছে না। এই দুটি দিক বা এদের যে কোনও একটি লক্ষণ থাকলেই বুঝতে হবে, মনে ডিপ্রেশন বাসা বাঁধছে। এর সঙ্গেই কিছু লক্ষণ নজর রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, তার খাওয়ার অনিচ্ছা দেখা দিচ্ছে কি না। ঘুম কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত ঘুমোনোও অন্যতম লক্ষণ। লস অফ এনার্জিও দেখা দিতে পারে । তবে তখন তা খতিয়ে দেখতে হবে যে, এটা মানসিক কারণে হচ্ছে নাকিশারীরিক সমস্যা থেকে হচ্ছে। অনেক সময়ে থাইরয়েড বা অন্যান্য অসুখের কারণেও এনার্জি থাকে না। এর সঙ্গেই অহেতুক অপরাধবোধ দেখা দেবে। তিনি নিজেকে সব ব্যাপারে দোষী ভাবতে শুরু করবেন।
সব বিষয়ে মনোযোগও কমতে থাকবে।
একটানা কোনও কাজ করতে পারবেন না।আর মুভমেন্ট কমবে বা অতিরিক্ত বাড়বে। হতে পারে, কেউ সারা দিন একটা ঘরে শুয়েই থাকলেন। আবার হতে পারে কেউ চিন্তা করতে করতে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে পায়চারি করে গেলেন। সারা দিনের কাজের পরিকল্পনা বা কোন কাজকে প্রাধান্য দেবেন, তা-ও নির্ধারণ করতে পারবেন না। আত্মহত্যা করার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে। খুব কম ক্ষেত্রে হলেও কিছু ঘটনা দেখা গিয়েছে যে, রোগী নিজের উপরে নির্ভরশীলদেরও মেরে ফেলার কথা ভাবতে পারেন। মনখারাপের স্থায়িত্ব, আগ্রহ হারিয়ে ফেলার সঙ্গে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেই বুঝতে হবে যে, ডিপ্রেশন তাকে গ্রাস করছে। তখনই কিন্তু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময়ে বন্ধু বান্ধব বা মা-বাবার কাছে রোগী স্বীকার করেন যে, তার মন ভাল নেই। তখন অনেকেই ভাবেন, ওর কীসের অভাব আছে? বা কী এমন ঘটেছে। যে মন ভাল নেই কেন? এ সব ভেবে তা উড়িয়ে দেন। কোনও অভাব না থাকলেও ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে একটি মানুষের জীবন ঠিকঠাক চলছে মনে হলেও কিন্তু ডিপ্রেশন বাসা বাধতে পারে তার মনে।
নিজে থেকে ডিপ্রেশন কমে?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রুদ্র আচার্য কথায়, মাইন্ড ডিপ্রেশন হলে কিছু ক্ষেত্রে রোগী বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলে হয়তো অবসাদ কাটিয়ে উঠল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দরকার। কারণ যার একবার ডিপ্রেশন দেওয়ার প্রবণতা থাকে।
রোগনির্ণয়
অনেক সময়ে রোগী নিজেই বুঝতে পারেন যে, তিনি ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার রোগী তা বুঝে উঠতে পারেন না। তখন কিন্তু আশপাশের মানুষকে সচেতন হতে হবে। অবসাদ গ্রাস করতে শুরু করলে সোশ্যাল উইথড্রয়াল বা আইসোলেশনের প্রবণতা দেখা দেয়। সেটা কিন্তু রোগী বুঝতে না পারলেও তার পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের বোঝা উচিত। যে মানুষটা এত দিন সকলের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, তিনি হঠাৎ মেলামেশা বন্ধ করে দিলে বা বাড়িতেই ক্রমাগত গুটিয়ে যেতে থাকলে আশপাশের মানুষকে পদক্ষেপ করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি । তবে প্রিয়জনের কাছে মনের আগল খুলতে পারেন। আমাদের দেশে সায়কায়াট্রিস্ট ও সাইকোলজিস্টের সংখ্যা কম। অন্য দিকে ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে চট করে সায়কিট্রিস্টের আ্যাপয়েন্টমেন্ট না-ও পেতে পারেন। তাই অপেক্ষা না করে বন্ধু, মা-বাবা, আস্থাভাজনদের সঙ্গে কথা বলুন। এ-ক্ষেত্রে কথা বলা জরুরি। ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানের পরামর্শ নিন। মেন্টাল হেল্থ প্রফেশনালের সাহায্যও নিতে পারেন।
চিকিৎসা
রোগীর সঙ্গে কথা বলে কাউন্সেলিং শুরু করা হয়। একই সঙ্গে তার ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, আ্যানিমিয়া বা অন্যান্য রোগ আছে কি না সেই টেস্টও করা হয়। তবে পরীক্ষা করার আগেই কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায় কিন্তু চিকিৎসা ওষুধ চলে দীর্ঘমেয়াদি সমাজ থেকে এক বছর পর্যস্ত ওষুধ খেতে হতে পারে দু’বার পাতার থেকে বেশি বার দেখা দিলে সেই ওষুধ আরো বাড়বে কিছুক্ষেত্রে সারাজীবন খেতে হতে পারে। পাশাপাশি অন্য অসুখ আছে কি না তা পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। রোগীর ওসিডি, ফোবিয়া বা কোনও নেশা আছে কি না, তা-ও দেখা জরুরি। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার ধরনও বদলাবে। নেশা করার কেস হিস্ট্রি থাকলে আগে তাছাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। যেমন, আলকোহল ডিপ্রেশন বাড়িয়ে দেয়। তাই আলকোহল আগে বন্ধ করতে বলা হয়। রোগী যদি নিজে থেকে তা বন্ধ করতে না পারেন, তখন তাকে সায়কায়াট্রিক সেন্টারে ভর্তি করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে রিহ্যাবেও ভর্তি করতে হতে পারে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এসব ক্ষেত্রে খুবই ফলপ্রসূ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct