ল্যারিনজাইটিস ও হ্যোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
ডা. পার্থসারথি মল্লিক (এম.ডি (কন্)
অনেকসময়ে দেখা যায় বেশি জোরে চিৎকার করলে বা অনেকক্ষণ ধরে চেচিয়ে কথা বললে পরেরদিন গলা ভাঙা ভাঙা থাকে। গলা খাকারি দিয়েও পরিষ্কার হয় না। আমাদের গলার স্বরযন্ত্রকে ইংরেজিতে বলে ল্যারিংক্স। এর ভিতরে থাকে দুটি ভোকাল কর্ড। আমরা যখন গলা দিয়ে কোনও আওয়াজ করি বা কথা বলতে চাই তখন আমাদের মুখের কারিকুরিতে নিঃশ্বাসের বাতাস এই দুটি ভোকাল কর্ডে সঠিক কম্পন তৈরি করে, যাতে কথা বলতে পারি। ভোকাল কর্ডে কোনও ক্ষত হলে নিঃশ্বাসের বাতাস ঠিকমতো কম্পন তৈরি করতে পারে না, কণ্ঠস্বরের বিকৃতি ঘটে। আবার অস্বাভাবিক জোরে কথা বললে, একটানা চেচালে ভোকাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কখনও কখনও শ্বাসনালীর উপরিভাগে কোনও সংন্রমণ হলে বা অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশনে প্রদাহ হতে পারে। এমনকী শুষ্ক বাতাসে শ্লেম্মা আঠালো হয়ে গিয়ে দুটি ভোকাল কর্ডের মাঝখানে আটকে যেতে পারে। এর ফলে গলা বসে যাওয়া, স্বর না বেরোনো বা কণ্ঠস্বরে বদল হয়, আর এর সবগুলির পিছনেই দায়ী ল্যারিংক্সে প্রদাহ, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে ল্যারিনজাইটিস। কিশোর বয়সেই রোগটি বেশি হয়। ল্যারিনজাইটিস হলে কণ্ঠস্বর তো পালটে যায়, কখনও কখনও একেবারে বন্ধও হয়ে যায়, জ্বর আসাও অস্বাভাবিক নয়, শরীরে সবসময়ে একটা ক্লান্তি অনুভূত হয়। সঙ্গে উপরি উপসর্গ হিসাবে থাকে গলার ব্যথা ও কাশি। ল্যারিনজাইটিস হলে কিছুদিন তো ভূগতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো এমনভাবে চলতে হবে, যাতে তাড়াতাড়ি কণ্ঠস্বর ফিরে পাওয়া যায়।
এর জন্য নিম্নক্ত টিপসগুলি মেনে চলতে হবে-
১) ল্যারিনজাইটিসের কারণ যাই হোক না কেন গলাকে পুরোপুরি বিশ্রাম দিতে হবে। প্রথম দুতিনদিন কোনও কথা বলা চলবে না। ফিসফিস করে কথা বললেও ভোকাল কর্ডে চাপ পড়বে, যা এই সময়ের জন্য একেবারেই উচিত নয়। কাউকে কিছু বলতে হলে লিখে বোঝান।
২) চিৎকার করতে গিয়ে যদি গলা ভেঙে যায়, তাহলে জানতে হবে ভোকাল কর্ডের কোনও ক্যাপিলারি মানে সরু রক্তবাহী শিরা হয়তো বা ছিড়ে গেছে। কিন্তু যদি আপনি আাসপিরিন খান তাহলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না, ক্ষত শিরাও শুকোয় না। কাজেই ল্যারেনজাইটিসে আাসপিরিন নিরাপদ নয়। আর ১২ বছরের কম বাচ্চাদের আযাসপিরিন থেকে দূরে রাখা উচিত।
৩) দুটি ভোকাল কর্ডের মাঝখানে শ্লেষ্মা আটকে গিয়ে সমস্যা হয়। সেজন্য একটা বড় বাটিতে টগবগে ফুটন্ত জল নিয়ে তার উপর মিনিট পাঁচেক মাথা নিচু করে বসুন। দিনে দুবার করে ভাপ নিতে পারলে শ্লেষ্মা অনেকটা শুকোবে।
৪) এই সময়ে দিনে অন্তত আট থেকে দশ গ্লাস জল খাওয়া দরকার।
৫) নুন দিয়ে বারবার নিয়ম করে গার্গল করলেও উপকার পাওয়া যাবে।
৬) ঠান্ডা জল, কোল্ড ড্রিংকস, ফ্রিজ ঠান্ডা তই মোটকথা ঠান্ডা কিছুই খাওয়া যাবে না এই সময়ে। সিগারেট থেকেও দূরে থাকুন। অনে কসময়ে ল্যারিনজাইটিস প্রাণ সংশয়ের কারণ হতে পারে । যদি দেখেন ভাঙা গলার সঙ্গে মুখের লালা পর্যন্ত গিলতেও কষ্ট হচ্ছে, তালে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান। কাশির সঙ্গে সেইসব উপসর্গ ফেলে রাখা উচিত নয়। ল্যারিনজাইটিস যদি সারতে না চায়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে ভয়ের কারণ বই কী। হতে পারে গলায় হয়তো টিউমার হয়েছে। তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে ল্যারিনজাইটিসের সমস্যায় গলার স্বর স্বাভাবিক না হলে ডাক্তার অতি অবশ্যই দেখানো উচিত। এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দারুণ ফলপ্রসূ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct