কুতুব উদ্দিন মোল্লা, গোসাবা, আপনজন: দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার গোসাবা লাহিড়ীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চরঘেরীর বাসিন্দা। বাঘের মুখ থেকে নিজের সন্তান কে ফিরিয়ে আনলেন পিতা। ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের গাঁড়াল নদীর ছোট হেতালবেড়িয়া জঙ্গলের নদী খাঁড়িতে। বাঘের আক্রমণে গুরুতর জখম হয়েছেন মৎস্যজীবি সোনাতন মন্ডল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় সামনে রয়েছে দুর্গা পুজো। আর দুর্গাপুজোর খরচ যোগাতেই। সুন্দরবন জঙ্গলেই মাছ-কাঁকড়া ধরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই পরিবারটি। অন্যান্য দিনের মতো শুক্রবার সকালে গ্রামের বাড়ি থেকে মৎস্যজীবী সূধন্য মন্ডল ও তার দুই ছেলে গোবিন্দ ও সোনাতন কে সাথে নিয়ে মাছ-কাঁকড়া ধরার জন্য নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে পাড়ি দিয়েছিলেন। গাঁড়াল নদীর ছোট হেতালবেড়িয়া জঙ্গলের নদী খাঁড়িতে বাবা ও দুই ছেলে যখন কাঁকড়া ধরার জন্য মগ্ন ছিলেন,সেই সময় সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে আসে। সকলের অলক্ষে টার্গেট করতে থাকে সনাতনকে। সুযোগ বুঝে আচমকাই বাবা ও দাদার সামনে সোনাতনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সুন্দরবনের বাঘ। তাকে টানতে টানতে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেই মুহূর্তে নিজের সন্তানের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবেও সন্তানকে বাঘের মুখ থেকে উদ্ধার করতে নৌকার বৈঠা নিয়ে বাঘের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন পিতা সূধন্য মন্ডল।শু রু হয় বাঘে মানুষে লড়াই। অন্যদিকে ছোট ভাইয়ের করুণ পরিণতি দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে দাদা গোবিন্দ মন্ডল। ভয়ঙ্কর রুদ্রমূর্তি বাঘের সাথে শুরু হয় বাবাও ছেলের লড়াই। দীর্ঘক্ষণ চলে লড়াই। বাঘ তার শিকার ছাড়তে নারাজ। সূধন্য মন্ডলও তার পুত্রকে হারাতে নারাজ। হুঙ্কার করতে থাকে বাঘ। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে শিকার ফেলে রেখে বাঘ সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে গা ঢাকা দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় সনাতন মন্ডলকে উদ্ধার করে নৌকায় তোলেন। এরপর ডিঙি নৌকার দাঁড় বেয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। সেখানে বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে সনাতনকে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। বর্তমানে আশাঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন সনাতন মন্ডল। ঘটনার খবর পেয়ে আক্রান্ত মৎস্যজীবিদের কাছে মাছ-কাঁকড়া ধরার জন্য কোন বৈধ অনুমতি পত্র ছিলো কি না,সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে বনদপ্তরের কর্মীরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct