সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: পুজোর মুখে বাংলার মুকুটে যুক্ত হল নতুন আরও এক পালক। ছোট অঙ্কের মাথাপিছু ঋণের নিরিখে এবারও ভারত সেরা হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। আর এই সাফল্যের নেপথ্যে উঠে এসেছে বাংলার লক্ষ্মী মানে মহিলাদের অবদান। বাংলায় ঘরোয়া ব্যবসায় ঋণ নেওয়ার প্রবণতায় মহিলারা এগিয়ে রয়েছেন দেশের অনান্য রাজ্যের থেকে। তাই তাঁদের হাতে নগদের জোগান বেশি। আবার ছোট অঙ্কের ঋণ নিয়ে ব্যবসা করার প্রবণতা সব সময়ই বেশি থাকে গ্রামগুলিতে। সেই জায়গায় একটা বড় ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’প্রকল্পটিও। ঋণ নিয়ে তাই শোধ করতে না পারার ভয়ে আর ভোগেন না গ্রাম বাংলার মহিলারা। তাঁরা ঋণ নিচ্ছেন ও তা সময়মতো শোধও করছেন। আর এই দুইয়ের যুগলবন্দীতে বাংলা ফের ছোট অঙ্কের মাথাপিছু ঋণের নিরিখে এবারও ভারত সেরার তকমা পেয়ে গেল।ছোট অঙ্কের ঋণ নিয়ে ব্যবসা করার প্রবণতা সব সময়ই বেশি থাকে গ্রামগুলিতে। এক্ষেত্রে কোনও রাজ্যে ঋণের টাকা বেশি পৌঁছনোর অর্থ সেখানকার গ্রামীণ অর্থনীতির প্রসার। গ্রামের মানুষের হাতে টাকা আসার অর্থ অর্থনীতির সুষ্ঠু বিকাশ। হিসেব বলছে, বাংলার বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের হাতে সর্বাধিক ঋণ পৌঁছেছে। তাই আর্থিক কর্মকাণ্ডে দেশকে দিশা দেখাচ্ছে বাংলা। অন্তত এমনটাই দাবি দেশের অর্থনীতিবিদদের একাংশের। এই দাবি যা যথাযথ তার প্রমাণ মিলেছে ‘অ্যামফিন’র রিপোর্টে। ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থাগুলির সর্বভারতীয় ও স্বনিয়ন্ত্রিত সংগঠন মাইক্রোফিনান্স ইনস্টিটিউশনস নেটওয়ার্ক বা ‘অ্যামফিন’ ক্ষুদ্র ঋণের ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মোট ঋণ প্রদানের তালিকায় প্রথমে রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে মোট ক্ষুদ্র ঋণ মেটানো হয়েছে ৩৮ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে বিহার। ঋণের মোট অঙ্ক ৩৭ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। বাংলায় মোট ঋণের অঙ্ক ৩৩ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গের পর তালিকায় রয়েছে কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের নাম। কিন্তু মাথাপিছু ঋণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সবার আগে রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলায় মাথাপিছু গড়ে ঋণ দেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার ৩৩৬ টাকা। এই অঙ্কের ধারেকাছে নেই অন্য কোনও রাজ্য।মাথাপিছু ঋণের ক্ষেত্রে বাংলার পরেই রয়েছে কেরল। তাদের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৪৬ হাজার ৩৬৬ টাকা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে কর্ণাটক, যেখানে মাথাপিছু ঋণ মিলেছে ৪৪ হাজার ১৭১ টাকা। চলতি অর্থবর্ষে জুন পর্যন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে দেশে মোট ক্ষুদ্র ঋণের অঙ্ক ছিল ২ লক্ষ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। ছ’কোটি মানুষ ওই ঋণ নিয়েছেন। ঋণের ৩৮.৪ শতাংশ এসেছে ব্যাঙ্ক থেকে। বাকি ঋণের বেশির ভাগটাই দিয়েছে ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাঙ্ক নয়, এমন আর্থিক সংস্থা। ২০২০-’২১ অর্থবর্ষের তুলনায় গত আর্থিক বছরে ঋণ সংক্রান্ত অ্যাকাউন্ট বেড়েছিল ৪.৪ শতাংশ হারে। যে আর্থিক বছরে পরপর দু’বার কোভিডের জোরালো ঢেউ এসেছে, সেই বছরেই ক্ষুদ্র ঋণের বাজার যথেষ্ট চাঙ্গা ছিল। সেই হাওয়া এখনও জোরালো। আর তার সব থেকে সফল প্রয়োগ ঘটছে বাংলার বুকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct