সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: বিজেপির উদ্যোগে দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আর রাজ্য বিজেপির উদ্যোগে কলকাতায় দলীয় পুজোর মহিলা পুরোহিত সুলতা মণ্ডল। ইজেডসিসিতে বিজেপির উদ্যোগে যে দুর্গাপূজা হবে সেখানেও প্রচারে বহাল রইল জাতপাতের রাজনীতি। মহিলা পুরোহিত দিয়ে এবার হবে ইজেডসিসিতে দুর্গা পূজা। আগামী সোমবার নবরাত্রির প্রথম দিনেই কলকাতায় আসবেন মহিলা পুরোহিত সুলতা। বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে পুজোর আয়োজন নিয়ে কথা বলবেন। ফিরে গিয়ে আবার আসবেন চতুর্থী বা পঞ্চমীর দিনে। ’’বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্তবাবু ছিলেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনি বটানির শিক্ষক হলেও বাংলার বিভাগের ছাত্রী সুলতা তাঁকে ‘সুকান্তস্যার’ হিসাবেই চেনেন। সেই সুলতা এ বার গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন। এক বছর আগে পুজোর মুখে মুখে রাজ্য বিজেপির সভাপতি হলেও তখনও সে ভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে ছিল না সুকান্তের। কিন্তু এ বার রাজ্য সভাপতি আগেই ঠিক করেছিলেন, কোনও মহিলা পুরোহিতই দলের হয়ে উমার আরাধনায় যোগ দেবেন। দলের পক্ষে ঠিক হয়েছে, সুকান্তের সেই ছাত্রী সুলতাই হবেন পুরোহিত।সুকান্তর জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরেরই কন্যা সুলতা। গঙ্গারামপুর থানার বাতাসকুড়ি গ্রাম। বয়স আঠাশের আশপাশে। মণ্ডলবাড়ির একমাত্র মেয়ে। বাবা বা দুই দাদা কখনও পুজো না করলেও সুলতা ছোট থেকেই এ ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। বাংলার পাশাপাশি শিক্ষাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে বিএড এবং এমএড পাশ করেন। পেশা হিসাবে শিক্ষকতাই ছিল লক্ষ্য। আর ‘নেশা’ না হলেও ‘ভাল লাগা’ পুজো করা। এখন জেলারই কুশমুণ্ডি হাই স্কুলে অতিথি শিক্ষক হিসাবে রয়েছেন।
পুরোহিত সুলতা মনে করেন, ‘‘নারী, পুরুষ বা জাত দিয়ে পূজারিকে ভাগ করা উচিত নয়। পুজোর অধিকারী তিনিই, যাঁর ব্রহ্মজ্ঞান রয়েছে। যিনি ব্রাহ্মমুহূর্তে ঘুম থেকে ওঠেন এবং নিত্য গীতাপাঠ করেন, তিনিই পূজার অধিকারী।’’ বয়স খুব বেশি না হলেও সেই সব তিনি মেনে চলেন বলেই জানিয়েছেন সুলতা। তিনি বলেন, ‘‘সব পুরুষ পুরোহিতরা কি সব নিয়ম মেনে চলেন? কিন্তু আমি নিত্য পূজা করি। সব নিয়ম মেনে চলি। তবে আমি বাইরে গিয়ে কেন পুজো করতে পারব না?’’সেই জেদ নিয়েই বারোয়ারি পুজো শুরু করেন সুলতা। এ বার ‘সুকান্তস্যার’-এর হাত ধরে আসছেন কলকাতায়। বিজেপি সূত্রে খবর, ঠিক হয়েছে সুলতার সঙ্গে যাতে ‘তন্ত্রধারক’ হিসাবেও মহিলাদেরই রাখা যায়। ইতিমধ্যেই সেই খোঁজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সুলতার পছন্দের কেউও আসতে পারেন। জানা গিয়েছে, সুলতা-সহ তন্ত্রধারকদের থাকার ব্যবস্থাও করবে রাজ্য বিজেপি।
এই আয়োজন ও উদ্যোগ নিয়ে কী বলছেন সুলতার? তিনি বলেন, ‘‘বিজেপিকে নিয়ে অনেক মানুষের অনেক ধারণা রয়েছে। অনেকেই অনেক ভুল ধারণা পোষণ করেন। আমি শুধু এটুকুই বলব যে, আমরা ঠিক কোন দর্শনে বিশ্বাস রাখি এটা তারই একটা উদাহরণ।’’কলকাতার দুর্গাপুজোয় মহিলা পুরোহিত গত বছরেই দেখা গিয়েছে। কলকাতার ৬৬ পল্লির শারদোৎসব কমিটির পুজোয় মহিলা পুরোহিতরা ছিলেন। তা নিয়ে কিছু বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। তবে সেই পুজোর পিছনে ওই কমিটির প্রেরণা ছিল একটি চলচ্চিত্র। পরিচালক অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ ছবি দেখেই সেই ভাবনা আসে। শোনা যায়, পুজো কমিটি যোগাযোগ করেছিল ছবিটির প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে। তাঁদের থেকেই কর্তারা জানতে পারেন মহিলা পুরোহিতদের দল ‘শুভমস্তু’-র কথা। দলটি চার মহিলা পুরোহিতকে নিয়ে তৈরি। নন্দিনী, রুমা, সেমন্তী ও পৌলমী। সেই দলের নন্দিনীর জীবন থেকেই তৈরি হয়েছে ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ ছবিটি। সুলতা অবশ্য ছবিটি দেখেছেন। আর বলছেন, ‘‘ওই ছবি মুক্তির অনেক আগে থেকেই কিন্তু আমি পুরোহিত।’’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct