পশ্চিমবঙ্গে অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ থাকলেও পরিকাঠামোর অভাবে আরবি বিষয়ের সঠিক প্রচার প্রসার হচ্ছে না। সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদনে মাধ্যমে জানলাম বারাসাত বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তরে আরবী চালু হয়েছে, চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি শুরু হবে। বলাবাহুল্য আরবি কোন ধর্মীয় বা সম্প্রদায়ের ভাষা নয়। বলা হয়ে থাকে, আরবি পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষা। আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে আরবির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিশ্বায়নের এই যুগে যোগাযোগের মাধ্যমে হিসেবে আরবিকে শীর্ষস্থানীয় ভাষাগুলোর একটি বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের ৪২২ মিলিয়ন আরব জনগোষ্ঠী এবং দেড় শ’ কোটিরও বেশি মুসলিম তাদের দৈনন্দিন জীবনে এ ভাষা ব্যবহার করেন। রাষ্ট্রসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন, ওআইসিসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিসিয়াল ভাষা হলো এই আরবি। আমরা বাঙালি হওয়ার পরেও নিত্যদিন পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অসংখ্য আরবি শব্দ ব্যবহার করি। পৃথিবীজুড়ে ২৮টি দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা আরবি। এছাড়াও আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুরস্ক পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা সহ প্রায়ই কুড়িটি দেশে আরবি সংখ্যালঘু ভাষায় স্বীকৃত ।
পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা ভারতবর্ষের জন্য বহু বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ আছে। আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ও আরবি বিষয় নিয়ে স্নাতকোত্তর কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি পর্যন্ত পড়াশোনা করা যায়। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের অনেকগুলি কলেজে স্নাতক স্তরে আরবি নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ আছে, বর্তমানে আরো নতুন নতুন কলেজ আরবি বিভাগ চালু হচ্ছে। এছাড়াও বহু বেসরকারি মাদ্রাসাতে আরবি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করা করার সুযোগ আছে। বর্তমান সময়ে আরবি নিয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে আরবি নিয়ে পড়াশোনা করার পর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দোভাষী সহ অন্যান্য চাকরির ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছে। তথাপি পশ্চিমবঙ্গে পরিকল্পিত পরিকাঠামোর অভাবে আরবি বিষয়ের সঠিক প্রচার প্রসার হচ্ছে না। বিগত সরকারের আমলে প্রতিবছর স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হতে তাতে অন্যান্য বিষয়ের সাথে সাথে আরবি বিষয়েও অনেক ছেলেমেয়ে চাকরি হতো, কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বর্তমান সরকারের আমলে দীর্ঘদিন স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় আরবি শিক্ষক দিন দিন কমে যাওয়ায় উক্ত বিষয় নিয়ে পড়াশুনার প্রতি ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ কমছে, নতুন করে কলেজ, ইউনিভার্সিটিগুলিতে আরবি বিষয় চালু হলেও কিন্তু বর্তমান সমস্যা হল নতুন করে কোন বিদ্যালয় আরবি বিষয় শুরু হচ্ছে না।
অনেক উচ্চ বিদ্যালয় আছে যেখানে আগে আরবি ছিল কিন্তু বর্তমানে আরবি শিক্ষক নেই তাই আরবি বিষয়ে ছাত্র ভর্তি নেওয়া বন্ধ। আবার অনেক উচ্চ বিদ্যালয় আরবি বিষয় আছে আরবি শিক্ষক আছেন কিন্তু আরবি বিষয় কোন ছাত্র ছাত্রী সপ্তম, অষ্টম শ্রেণীতে নেয়নি কারণ সংস্কৃত বিষয়ে নাকি বেশি নাম্বার পাওয়া যায়। তাই এইসব বিদ্যালয়গুলিতে দীর্ঘদিন আরবি বিষয় পঠন-পাঠন বন্ধ। তাই আরবি শিক্ষক অন্য বিষয় পাঠ দান করেন। আবার বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে সপ্তম, অষ্টম শ্রেণীতে আরবি বিষয়ে আছে কিন্তু একাদশ, দ্বাদশে শ্রেণীতে আরবি বিষয় নাই সেই জন্য ছাত্রছাত্রীরা সপ্তম অষ্টম শ্রেণীতে আরবি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় না , কেননা তারা আরবি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীতে ওই বিদ্যালয় আরবি বিষয়টি পড়ার সুযোগ পাবে না, স্বাভাবিকভাবেই ছাত্ররা ছাত্রীরা আরবি বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইছে না। যে বিদ্যালয় গুলিতে সপ্তম, অষ্টম শ্রেণীতে আরবি বিষয় আছে সেই বিদ্যালয় গুলিতে একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীতে আরবি বিষয় থাকা জরুরী না হলে ছাত্ররাই বিষয়ে ভর্তি হতে চাইছে না। এই ব্যাপার গুলো একটু গুরুত্ব দেওয়া দরকার। শুধুমাত্র আরবি বিষয় ইউনিভার্সিটি লেভেলে চালু করলে আরবি বিষয়ে সঠিক প্রচার প্রসার হবে না। একটি আন্তর্জাতিক বিদেশী ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে একদম নিম্নস্তর থেকে এই ভিত তৈরি করা জরুরি , এবং মধ্যস্থলে যে জায়গায় ছাত্র-ছাত্রীরা আরবি ভাষা শিক্ষায় বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে সেই দিকটা বিশেষভাবে শিক্ষা দপ্তরের লক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজন, তাহলেই আরবি ভাষা সঠিকভাবে প্রচার প্রসার হবে এবং এর দ্বারা বহু ছাত্র-ছাত্রী উপকৃত হবে।
নূর মোহাম্মদ খান
প্রাক্তন ছাত্র, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
জয়সিংহ চক, আরামবাগ, হুগলি
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct