আপনজন ডেস্ক: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অধিকার নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে সওয়ালকালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তা বলেছেন, ‘আপনি তো একে অযৌক্তিক কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন না। পোশাক পরার অধিকারের মধ্যে কি নগ্ন হওয়ার অধিকারও অন্তর্ভুক্ত হবে?’ উত্তরে আইনজীবী দেব দত্ত কামাত বলেন, ‘বিদ্যালয়ে তো কেউ নগ্ন হচ্ছে না।’ কর্নাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে রাজ্য সরকার। সেটা প্রত্যাহারেকর্নাটক হাইকোর্ট অস্বীকৃতি জানান। হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন করা হয়। বুধবার সেই আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি ও আইনজীবী পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন। শুনানি চলাকালে বিচারপতি গুপ্তা আরও বলেন, ‘এখানে সমস্যা হল একটি বিশেষ সম্প্রদায় হিজাব পরার ওপর জোর দিচ্ছে। অন্যদিকে অন্য সব সম্প্রদায় ড্রেস কোড মেনে চলছে। অন্য সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা কিন্তু এটা বলছে না যে “আমরা এই বা ওই পোশাক পরতে চাই।” তবে, হিজাব শালীন পোশাক হলৌ তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। বরং, বললেন, কেউ মিনি স্কার্ট পরে এলে তাকে কি অনুমতি দেওয়া যাবে? আইনজীবী দেব দত্ত বলেন, ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে অনেক শিক্ষার্থী তো রুদ্রাক্ষ বা ক্রস পরে। তখন বিচারপতি গুপ্তা বলেন, ‘এটা শার্টের ভেতর পরা হয়। কেউ তো শার্ট খুলে দেখতে যাবে না যে কোনো শিক্ষার্থী রুদ্রাক্ষ পরেছে কি না।’
গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তা ও সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ আলোচিত বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘আপনি যা চর্চা করতে চান, তা চর্চা করার আপনার ধর্মীয় অধিকার থাকতেই পারে। কিন্তু আপনি কি সেই চর্চার অধিকার এমন একটি বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে পারেন, যেখানে নির্দিষ্ট পোশাক পরার বিধি রয়েছে? এটিই হবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।’ এর আগের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলেছিল, ‘ধর্মীয় দৃষ্টিতে হিজাব অপরিহার্য হতে পারে, আবার না–ও হতে পারে। তবে ভারত হল একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ।’ গত ১ জানুয়ারি কর্ণাটকের উদুপি শহরের পিইউ কলেজ থেকে এ বিতর্কের শুরু। এদিন ওই কলেজের ছয় নারী শিক্ষার্থী বলে, হিজাব পরার কারণে তাদেরকে শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এর বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। এ ঘটনার পরপরই বিষয়টি ভারতের জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়। অপরদিকে হিন্দু শিক্ষার্থীরা গেরুয়া রঙের কাপড় গলায় ঝুলিয়ে পাল্টা প্রতিবাদ জানায়। অন্য প্রদেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণে হিজাব পরতে পারবে, তবে শ্রেণিকক্ষে ঢোকার আগে তাদের হিজাব খুলতে হবে। তবে অধ্যক্ষের এমন দাবি মিথ্যা ছিল বলে দাবি করে অভিযোগকারী মুসলিম শিক্ষার্থীরা। এরপর অন্যান্য স্থানেও হিজাব পরে আসা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপরে ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৯ ও ২৫ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে কর্ণাটক হাইকোর্টে একাধিক পিটিশন দাখিল হয়। হাইকোর্ট রায় দেন, হিজাব ‘অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় চর্চা নয়’, যা সংবিধানের অধীন সুরক্ষিত হতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct