নিজস্ব সংবাদদাতা, আপনজন: মর্যদা রক্ষার আন্দোলনে নামছে ফ্র্যাটারনিটি মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া পশ্চিমবঙ্গ শাখা। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর কলকাতার রামলীলা ময়দান থেকে দুপুর ১২:৩০ টায় শুরু হবে ডিগনিটি কনফারেন্স।রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে ফ্র্যাটারনিটি মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়,ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে আজ স্পষ্ট যে, অভূতপূর্ব পরিবর্তনের কারণে প্রতি মুহূর্তে অনুভূত হচ্ছে যে, দেশের স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি গভীর সংকটের সম্মুখীন। সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকর্তা, প্রথাগত রাজনৈতিক ধারার নেতা থেকে শুরু করে আম্বেদকারপন্থী, বামপন্থী থেকে শুরু করে আঞ্চলিক দলগুলো এবং সব ধরনের প্রগতিশীল সংগঠনের কর্মকর্তাদের ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে দ্রুত ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্যের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মুসলিম, দলিত, উপজাতি সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ও সামাজিক দলগুলো আজ ভারতের নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার ক্রোধের শিকার। বিশেষভাবে বলতে গেলে, বিজেপি তথা আরএসএস এর রাজনীতি এবং রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থা মুসলিম বিরোধিতার উপর প্রতিষ্ঠিত। মুসলিমদের খলনায়ক হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা আগে থেকেই ছিল এবং বর্তমান শাসনামলে এটি একটি নীতিতে পরিণত হয়েছে । মুসলিমদের চড়াহারে এর মূল্য দিতে হচ্ছে।ফ্র্যাটারনিটি মুভমেন্টের রাজ্য সভাপতি মুহাম্মাদ আরমান আলী জানান, মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন (যেমন কর্নাটকে হিজাব নিষিদ্ধ ) অভিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আইন প্রণয়ন এবং এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল(যেমন সিএএ) প্রতিহিংসা পরায়ণ রাজনীতির উলঙ্গ প্রদর্শন - এ সবকিছুই এখন ভারতে নবরূপে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভিন্নমত এবং সংহতিকেও এখন আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ( যেমন মোহাম্মদ জুবায়ের, তিস্তা শীতলাবাদ, আর বি শ্রীকুমার এর গ্রেফতারী)। এটা উল্লেখ করা ন্যয়সংগত যে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল এবং সত্তা গুলো উল্লিখিত সমস্ত আক্রমণের বিরুদ্ধে আওয়াজ না তুলে বরং বিভিন্ন গোত্র এবং তাদের সমস্যা থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। এটা প্রান্তিক সম্প্রদায়ের প্রতি বিভেদকে আরও ত্বরান্বিত করছে।
তিনি আরও জানান, এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের সংগঠন যেমন ফ্র্যাটারনিটি মুভমেন্ট প্রান্তিক মানুষদের মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার জন্য নতুন রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রস্তাব দিয়েছে এবং নিপীড়িতদের আওয়াজ তোলার ক্ষেত্রে তারা এক অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করেছে। তবে এই পরিস্থিতিতেও আরও জোর কদমে এবং সুসংহত পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের সামনে এগোতে হবে। এই প্রান্তিক মানুষদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংগঠিত করা এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন পরিচালিত করা অবশ্যই আমাদের প্রাথমিক দায়িত্ব। নিপীড়িত সম্প্রদায়ের গণতান্ত্রিক প্রতিরোধ আন্দোলনের জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে সাম্প্রতিক সময়ে ফ্র্যাটারনিটি মুভমেন্টের সিএএ বিরোধী ঐতিহাসিক আন্দোলন। তিনি বলেন, এই ডিগনিটি কনফারেন্সের মূল লক্ষ্য হবে সিএএ বিরোধী আন্দোলনের উৎসাহ ও উদ্দীপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এটি ছাত্রযুব এবং সমমনা ব্যক্তিদের নিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের জুলুম নির্যাতন এবং বুলডোজার রাজের বিরুদ্ধে কার্যকর এবং সঙ্ঘবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালাবে। স্বগৌরবে পুনরাবৃত্তি করবে আফরিন ফাতিমা, মুসকান খান, সার্জিল ইমাম এবং অন্যান্য অসংখ্য যুব চেতনার লড়াইয়ের মানসিকতাকে যারা এই সরকারের সামনে মাথা নত করতে কিংবা আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে প্রস্তুত নয়, বরং তারা প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে তাদের মাথা উঁচু করে। এছাড়াও চাকরি ক্ষেত্রে দূর্নীতি, নিয়োগে অস্বচ্ছতা, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়মিত না হওয়া প্রভৃতি কারণে দেশের ছাত্র-যুব সমাজ আজ হতাশায় নিমজ্জিত। তারা আজ বেকারত্বের জ্বালায় জর্জরিত। মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকা আজ তাদের কাছে দিবা স্বপ্ন মনে হচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির জন্য দেশের জনসাধারণের জীবন আজ বিপন্ন। দূর্নীতি আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
ফ্র্যাটারনিটি মুভমেন্টের দাবি- মানবতা বিরোধী সিএএ/এনআরসি চালু করা চলবেনা
- বুল ডোজার পলিটিক্স বন্ধ করতে হবে
-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে
NPR, NRC, CAA বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এবং সকল রাজনৈতিক বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে
- চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে এবং দূর্নীতিমুক্ত নিয়োগের জন্য যথাযত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর সাজা দিতে হবে।
- নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়মিত করণ এবং সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
- প্রতি ব্লকে ওয়াকফ বোর্ড কর্তৃক সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য একটি করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল চালু করতে হবে ।
- SSC, MSC, CSC, PSC - র সমস্ত শূন্যপদ অনতিবিলম্বে পূরণ করতে হবে।
- পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত কলেজ ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র ইউনিয়ন ইলেকশন চালু করতে হবে এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে।
- সমস্ত জেল বন্দিদের মানবাধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে, পুলিশি নির্যাতন বন্ধ এবং লকআপে মৃত্যুর জন্য দায়ী পুলিশ অফিসারদের কঠোর সাজা প্রদান করতে হবে। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মোল্লা,কেন্দ্রীয় সম্পাদক লুবাইব বসির, রাজ্য সভাপতি আরমান আলি,রাজ্য সম্পাদকদ্বয় নাসির সেখ ও নয়িম সেখ সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct