বিশ্লেষকরা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করেন যে, ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যা অপ্রকাশিত। তারা কোনোমতেই ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দিতে চান না। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের গুপ্তহত্যা এবং ইরানে স্থাপনা নাশকতার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে ইরান। এই পরিস্থিতির মধ্যেই বাইডেন এই অঞ্চলে তথা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের ‘একীকরণ’ করতে চান। অর্থাৎ আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করতে চান। বিশ্লেষণ করেছেন ল্যারি কাপলো। আজ প্রথম কিস্তি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি সপ্তাহব্যাপী মধ্যপ্রাচ্যে থাকবেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই অঞ্চলে এটিই তার প্রথম সফর। এখানে তিনি ১১ জন আঞ্চলিক নেতার সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেলের ক্রমবর্ধমান দামের প্রেক্ষাপটকে এই সফরের আংশিক কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। বাইডেনের সফরকালে বড় ধরনের কোনো কৌশলগত চুক্তি হবে বলে মনে হচ্ছে না। হোয়াইট হাউজ বলেছে, কয়েক বছর আগেকার তুলনায় এ অঞ্চলকে অধিকতর স্থিতিশীল করে তুলতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ গড়ে তুলতে চাইছেন। যদিও আপাতদৃষ্টিতে মধ্যপ্রাচ্যকে অপেক্ষাকৃত শান্তই বলা যায়। ইয়েমেনে সাত বছরের যুদ্ধে সহিংসতা এবং মন্দাবস্থায় বহু হতাহতের পর ইরান-সমর্থিত এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর মধ্যে তিন মাসের যুদ্ধবিরতি হতে দেখা গেছে। যদিও ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঘনঘন সহিংসতা হচ্ছে। তবে এটি গত বছরের গাজা যুদ্ধের মতো ঘটনা ছাড়া বড় কিছুই নয়। ইরাকে ইরান-সমর্থিত হামলা এবং মার্কিন প্রতিশোধ গ্রহণ এখন নিম্ন পর্যায়েই আছে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ইতিমধ্যে সাংবাদিকদের বলেছেন, বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলটি অনেক বেশি স্থিতিশীল। তিনি বলেছিলেন, ‘অধিকতর স্থিতিশীল এবং কম যুদ্ধপূর্ণ অঞ্চল’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশা করে। আমরা দেখেছি যে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এর বিপরীতে সারা বিশ্বে তেল আসছে উপসাগর থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে্র গ্যাসের দাম বাড়তির দিকে এবং একই সঙ্গে মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে। এমন অবস্থায় বাইডেন প্রশাসন উপসাগরীয় দেশগুলোকে তেলের সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এই প্রেক্ষিতে যদিও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বলছে যে বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য সফর তেলের বিষয়ে নয়। বরং হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে—‘শক্তি সুরক্ষা’ অন্যতম একটি ইস্যু। এই সফরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরাইল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইরানকে মোকাবিলা করার পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া ইয়েমেন যুদ্ধবিরতির জন্য সৌদি সমর্থন আদায়ের জোর চেষ্টা করবেন তিনি। আরেকটি আশা করা হচ্ছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখতে সাহাঘ্য করার জন্য নেতাদের সহযোগিতা-সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করবেন বাইডেন।
গত বুধবার ইসরাইলে প্রথম বৈঠক শুরু হয়। ফিলিস্তিনি নেতৃৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে পরের গন্তব্য ইসরাইল-অধিকৃৃত পশ্চিম তীর। সেখান থেকে সৌদি আরবের জেদ্দায় একটি সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। অতঃপর সৌদি নেতার সঙ্গে সাক্ষাত্সহ কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইন, কাতার, ইরাক, জর্ডান এবং মিশরের নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন। তবে, মূল নাটকটি সামনে আসবে সম্ভবত শুক্রবার বা শনিবার, যখন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং তার অসুস্থ পিতা ৮৬ বছর বয়সি সালমানের মুখোমুখি হবেন বাইডেন। বাইডেন যখন রাষ্ট্রপতি পদের জন্য দৌড়াচ্ছিলেন, সে সময় মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি এবং ইয়েমেন যুদ্ধ বাড়ানোর জন্য দায়ী করে সৌদি আরবকে তিনি ‘দাক্ষিণাত্যের নিচ জাতি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ২০১৮ সালে সৌদি এজেন্টরা সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করে। বাইডেনের দল সে সময় প্রচার করেছিল, ঘটনার সঙ্গে মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত। তবে সে যা-ই হোক, যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের উচ্চ মূল্য এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের স্বার্থগুলির মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য রয়েছে; যার ফলে তাদের উভয়েরই কথা বলা দরকার। একজন বিশ্লেষক ইতিমধ্যে বলেছেন, এই বৈঠকটি সম্পর্ককে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাবে—বরফ গলতেও পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct