পরিবহণ ব্যবস্থা একটি সমাজের তথা দেশের অর্থ-সামাজিক দিক সহ সর্বাঙ্গীন বিকাশের মূল স্রোত। পরিবহণন ব্যবস্থা বলতে আমরা সড়কপথ, রেলপথ ,জলপথ ও আকাশপথ এর মাধ্যমে যোগাযোগ কে বোঝাই। এই প্রবন্ধে পরিবহণের সড়কপথ মাধ্যমকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা মাত্র। যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আয় মানব উন্নয়নের মাপকাঠি বলা হয় তেমনি পরিবহন ব্যবস্থাকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির সর্বাঙ্গীন বিকাশের মেরুদণ্ড বলা যেতে পারে। এ নিয়ে লিখেছেন মোঃ সাহিদুল ইসলাম।
পরিবহণ ব্যবস্থা একটি সমাজের তথা দেশের অর্থ-সামাজিকদিক সহ সর্বাঙ্গীন বিকাশের মূল স্রোত। পরিবহণন ব্যবস্থা বলতে আমরা সড়কপথ, রেলপথ ,জলপথ ও আকাশপথ এর মাধ্যমে যোগাযোগ সাধন ও সমন্বয়কে বোঝাই। এই প্রবন্ধে পরিবহণের সড়কপথ মাধ্যমকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা মাত্র। যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আয় মানব উন্নয়ের মাপ কাঠি বলা হয় তেমনি পরিবহন ব্যবস্থাকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির সর্বাঙ্গীন বিকাশের মেরুদণ্ড বলা যেতে পারে। কেননা সঠিক যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা না থাকলে একটি স্থানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে যেমন অসুবিধা হয়, তেমনি সেই স্থানটি বিভিন্ন দিকে যেমন শিল্প, বাণিজ্য, অর্থনীতি, সামাজিক ইত্যাদি দিক গুলি থেকে পিছিয়ে পড়ে। ইতিহাসের পাতায় সম্রাট অশোকের নাম জ্বল জ্বল করে তাঁর পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে সুদূর প্রসারী চিন্তা ভাবনার জন্যে। তিঁনি যেমন মানব কল্যাণকর কার্য কলাপ করেছেন ঠিক মানুষের হিতের জন্যে সুপরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থা ও তার সুষ্ঠ পরিকাঠামো সেটাই দর্শিত করে। হরপ্পা সভ্যতার শহর পরিকল্পনার কথা তো ছেড়েই দিলাম। ব্রিটিশ যুগে ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম রেলপথ নির্মাণ হয় বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত ১৮৫৩ সালে। ইংরেজরা খুব সহজেই উপলব্ধি করেছিল যে ভারতবর্ষ থেকে লক্ষ্ লক্ষ টন কাঁচামাল স্থানান্তরিত করতে পরিবহন ব্যবস্থ্যার উন্নতি সাধন এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু খুব দুঃখের বিষয় যে আমরা আমাদের এতিহ্যময় ইতিহাস থেকে কি শিক্ষা নিয়েছি? পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে যদি আমরা দেখি তাহলে কি সত্যিই উন্নতির শিখরে পদার্পন করতে পেরেছি? বঙ্গের রাজধানী কলকাতা সংলগ্ন কয়েকটি জেলা ছাড়া সব গুলোর অবস্থা দেখলে আমরা খুব সহজেই নেতিবাচক উত্তর পেয়ে থাকি । উদাহরণস্বরূপ মুর্শিদাবাদ জেলাটি যদি দেখি, ৩৪ নং জাতীয় সড়কটি নদীয়া ,মুর্শিদাবাদ ও মালদার বুক চিরে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ এর যোগাযোগ স্থাপন করে। কিন্তু এই সড়কটির অবস্থা আজও করুন ও দুর্গম হয়ে আছে যদিও প্রায় ১০ বছর থেকে এই সড়কটির পুনর্গঠনের কাজ চলছে। দিবারাত্রি এই সড়কে যেমন যানজট ঘন্টার পর ঘন্টা চলতে থাকে যার ফলে সাধারণ মানুষ যারা বিভিন্ন কাজে গ্রাম থেকে শহরাঞ্চল যেতে হয় তাদের অনর্থক সময় অপচয় সহ জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অত্যাধিক যান চলাচল ও বেপরোয়া চালক এর ফলে বহু মানুষের প্রাণও যায় এটা একটা নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা যে অনুপাতে অর্থাৎ গত ১০ বছরে প্রায় ১ কোটি বা প্রতি বছর ১০ লক্ষ জনবৃদ্ধি হয়েছে সেই অনুপাতে কি পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন হয়েছে? একদিকে যেমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে যানজটও বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি পরিবহন ও পরিকাঠামো ব্যবস্থার অবন্নতি হচ্ছে। নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের অনেকাংশ সিমেন্ট কংক্রিট রাস্তা হয়ে মুখ্য বাজারের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে উঠেছে কিন্তু সেই রাস্তা গঠনের ৬ মাস পরে অবস্থা দেখলে দুর্নীতির মুখোশটা আমাদের অগোচর হয় না। পরিবহন ব্যবস্থা যেমন একটা সমাজের উন্নতির আশীর্বাদ তেমনি সেটি আবার মানুষের জীবনের অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায় যখন সঠিক পরিকাঠামো থাকেনা। পশ্চিমবঙ্গ ট্রাফিক পুলিশ সূত্র অনুযায়ী ২০২০ সাল পর্যন্ত গোটা রাজ্য জুড়ে গত তিন বছরে গড়ে প্রায় ১০ হাজার অর্থাৎ প্রতি মাসে প্রায় ৮৫০ টি এবং প্রতিদিন প্রায় ৩০ টি করে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রতি দুর্ঘটনায় শতকরা ৯০ জন মানুষ আহত হয় এবং শতকরা ৫০ জনের ও বেশি নিহত হয় ( বঙ্গে ২০২০ সালে মোট দুর্ঘটনা ঘটে ৯১৮০, আহত হয় ৮৩১৪ এবং নিহত হয় ৪৯২৭ জন) কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো ২০২০ সালের পর থেকে এখনো কোনো তথ্যই প্রকাশ্যে আসেনি। সমষ্টিগতভাবে দেখলে মনে হয় কয়েকটি সংখ্যা কিন্তু একটি পরিবারের ক্ষেত্রে আপনজন অপূরণীয় বিয়োগ। এই বিয়োজনের ফলে পরিবারটি অর্থ-সামাজিক ভাবে কিভাবে ভেঙে পরে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন পড়ে না। আমরা সকলেই ওয়াকিবহাল। আমরা অনেকেই এই ঘটনার সাক্ষী যে যখন রাজদরবার থেকে যখন কোনো রাজ্ নেতা বা নেত্রী রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কোনো বৈঠক করতে আসেন তখন সড়ক ব্যবস্থা অনেকটা তাঁদের জন্যে মসৃন করা হয়, কিভাবে? যেভাবে এক দরিদ্র পরিবার খড়ের ছাউনি ঘরটিকে বর্ষাকালে ঠেকা লাগাই সেরকমভাবে। এটাও আমাদেরকে অবাক করে যে বঙ্গ ‘স্মার্ট সিটি মিশন’ তালিকা ভুক্ত নয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যেমন ‘সাবধানে চালাও, জীবন বাঁচাও’ স্লোগান থেকে শুরু করে বিনা হেলমেটে পেট্রল না পাওয়া, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ হেতু শাস্তি সহ জরিমানা করা হয়। সাম্প্রতিক ট্রাফিক আইন ভঙ্গের জন্যে বেশি অংকের অর্থ জরিমানাও রাজ্যে শুরু হয়েছে। অদোৎসবসত্তেও প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও চালক সহ সাধারণ যাত্রীকেও প্রাণ বলিদান করতে হচ্ছে। কিন্তু কেন ? একটি নির্বাক শিশুর পেট খারাপ হলে যেমন বার বার ডায়পার চেঞ্জ করা নিৰ্থক, যার জন্যে সঠিক ভাবে পেট খারাপ হওয়ার জন্যে কারণ বিশ্লেষণ করা খুব প্রয়োজন এবং সেই মতো তার প্রতিষেধক। লাগাম ছাড়া অর্থ-দণ্ড করা সহ ট্রাফিক আইন চেঞ্জ করাই একমাত্র উপায় নয় তার সঙ্গে সঠিক পরিবহন ব্যবস্থার সাথে সাথে পরিকাঠামোর দিকে দৃষ্টি দেওয়া খুব প্রয়োজন। শুধুমাত্র প্রশাসনই নয় ,সাধারণ যাত্রীগণ সহ চালকদেরকেও সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই প্রয়োজন।
(লেখক গবেষক, ইনস্টিটিউট অফ রুরাল ম্যানেজমেন্ট আনন্দ, গুজরাত)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct