ফের সৌগত রায়ের কাছে গোল খেল তৃণমূল!
মাত্র দিন কয়েক আগেই কপ্টার-দুর্নীতি নিয়ে বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছে দল। গাঁধী পরিবার তথা কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করে নরেন্দ্র মোদীর দলের বাহবাও কুড়িয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। অথচ আজ লোকসভায় একই বিষয়ে বলতে উঠে সুখেন্দুর অস্ত্রকে ভোঁতা করে বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করে বসলেন সৌগত!
এক্কেবারে সেমসাইড গোল!
সৌগত বরাবরই দলছুট। তাঁর এমন অবস্থানের জন্য একাধিক বার অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। তালিকায় নতুন সংযোজন কপ্টার-বিতর্ক। অস্বস্তি সামাল দিতে সৌগতবাবুর বক্তব্য শেষ হওয়ার পরপরই এক বিবৃতিতে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্নীতি প্রশ্নে কংগ্রেস ও বিজেপি দু’দল থেকেই সমদূরত্বে আমাদের অবস্থান।’’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘আধ ঘণ্টার মধ্যে বিবৃতি থেকেই স্পষ্ট, সৌগতদার বক্তব্যকে দল কী চোখে দেখছে!’’
পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোট হওয়ার পর থেকে এমনিতেই সনিয়া গাঁধীর উপরে ক্ষুব্ধ তৃণমূল। তার উপর রাজ্যে প্রচারে গিয়ে সনিয়া তৃণমূলের কড়া সমালোচনা করায় পাল্টা আক্রমণে নামে দল। চলতি সপ্তাহেই কপ্টার-বিতর্কে বিজেপির পাশে দাঁড়িয়ে গাঁধী পরিবারকে নিশানা করতে গিয়ে ‘সীমা ছাড়ানোয়’ রাজ্যসভা থেকে বহিষ্কৃত হন সুখেন্দুশেখর! অথচ আজ লোকসভায় বলতে উঠে সৌগতবাবু শুরুতেই বলেন, ‘‘আমি যা বলব, তাতে শাসক দলের অস্বস্তি হতে পারে।’’
কপ্টার-কাণ্ডে ইতালির আদালত সরাসরি গাঁধী পরিবার বা কোনও ভারতীয় নেতার নাম করেনি। তবে রায়ের প্রতিলিপির সঙ্গে যে অতিরিক্ত পাতা সংযোজিত হয়েছে, তাতে গাঁধী ও এপি (বিরোধীদের মতে আহমেদ পটেল)-র মতো শব্দগুলি রয়েছে। বিজেপির মতোই ওই সব শব্দকে অস্ত্র করে রাজ্যসভায় কংগ্রেস এবং সনিয়া গাঁধীকে আক্রমণ করেছিলেন সুখেন্দুবাবু। আজ ওই শব্দগুলির প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে সৌগত জানান, একটি হাতে লেখা কাগজে ওই শব্দগুলি ছিল। মূল রায়ের সঙ্গে শব্দগুলির সম্পর্ক নেই। সৌগতবাবু বলেন, ‘‘ইতালির বিচারপতি একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কোনও ভারতীয় নেতা ঘুষের বিনিময়ে ওই সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দিয়েছেন এমন প্রমাণ মেলেনি। বিচারপতি ওই সংস্থার কিছু কর্তা ও ভারতীয় আমলাদের ঘুষ দিয়েছে এমন এক দালালের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের উচিত, প্রকৃত সত্য সামনে আনা।’’ সৌগতবাবুর কথায় তৃণমূল তো বটেই, বিজেপিও হতবাক। বিতর্কের শেষে তৃণমূলকে উদ্দেশ করে পর্রীকর বলেন, ‘‘আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি! রাজ্যসভায় আপনারা আমাদের পাশে ছিলেন। আবার এখানে আমাদের বিরোধিতা করছেন!’’ নারদ-স্টিং নিয়ে সৌগতবাবুকে আক্রমণও করেন বিজেপি সাংসদরা। পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে বুঝেই দ্রুত বিবৃতি জারি করেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সৌগতবাবুর এ দিনের বক্তব্যের পরে অনেকেই বলতে শুরু করেন, রাজ্যে দলের ফল নিয়ে ঘোর সংশয়ে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন নির্বাচনী বৈরিতা ভুলে কংগ্রেসকে বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাচ্ছেন। যা উড়িয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘যারা সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলায়, তৃণমূল কোনও ভাবেই তাদের প্রতি নরম হবে না।’’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct