আপনজন ডেস্ক: ইংল্যান্ডের ইনিংসে তখন নবম ওভার। ব্যাটিংয়ে ডেভিড ম্যালান। অভিষিক্ত মাইকেল নেসার বল করতেই তাঁর পেছনে বজ্রপাত! হ্যাঁ, অ্যাডিলেডের কালো আকাশ থেকে ঝিলিক মারা বজ্রপাতে সবারই চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ম্যালানের সৌভাগ্য যে বলটা দেখে ছাড়তে পেরেছেন। এরপরই বৃষ্টির আশঙ্কা টের পেয়ে কাভারে ঢেকে দেওয়া হয় উইকেট, বজ্রপাতের ভয়ে মাঠ ছাড়েন খেলোয়াড়েরা। প্রায় ১৫ মিনিট পর ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হলে সমাপ্তি ঘোষণা হয় দ্বিতীয় দিনের খেলার। আশ্চর্য ব্যাপার, দিনের খেলা নির্ধারিত সময়ের বেশ আগে শেষ হলেও গান ধরেছিল ‘বার্মি আর্মি’র দল।
বৃষ্টিতে দিনের খেলা শেষ হওয়ায় ইংল্যান্ডের এই সমর্থকগোষ্ঠীর খুশি হওয়াই স্বাভাবিক। মাত্র ৭ ওভারের মধ্যে দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ায় বিপদটা সবাই টের পাচ্ছিলেন। গোলাপি বল অ্যাডিলেডে এখনো তার কারুকাজ দেখাতে পারেনি। ফ্লাডলাইটের আলোতে অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা তবু বাড়তি কিছু আদায় করে নিচ্ছিলেন। খেলা আরও যত গড়াবে ততই আরও উইকেট হারিয়ে বিপদ বাড়ার আশঙ্কা। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে ৮.৪ ওভারে ২ উইকেটে ১৭ রান—ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের এই স্কোরকার্ড আর যা–ই হোক, কোনো সমর্থককেই স্বস্তিতে রাখার কথা নয়। ৪৫৬ রানে পিছিয়ে থেকে মাঠ ছেড়েছে সফরকারীরা। অস্ট্রেলিয়া ৯ উইকেটে ৪৭৩ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। মাথার ওপর পাহাড়সমান রানের এই চাপ কায়দা করতে কাল অন্তত নতুন করে সবকিছু শুরুর সুযোগটা পাচ্ছেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান জো রুট (৫*) ও ম্যালান (১*)।
অস্ট্রেলিয়ার বোলিংকে বলা যায়, বজ্রপাতের আগে ঝড়। তৃতীয় ওভারে ররি বার্নসকে মিচেল স্টার্ক যেভাবে আউট করলেন তাতে অস্ট্রেলিয়ান পেসারের চেয়ে বার্নসের অবদানই বেশি! ইংলিশ ওপেনার সোজা ব্যাটে অনায়াসে খেলতে পারতেন। কিন্তু ব্যাটটা অনসাইডের দিকে কাত করে ধরার মাশুল গুনে স্লিপে ক্যাচ দেন। বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে স্টিভ স্মিথের হাতে জমা পড়ে। তার আগে ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটিকে গতি ও সুইংয়ে কাঁপিয়েছেন স্টার্ক ও ঝাই রিচার্ডসন। আরেক ওপেনার হাসিব হামিদও উইকেট উপহার দেন। সপ্তম ওভারে নেসারের (৬) বলটা সহজেই নিচে খেলতে পারতেন তিনি। কী বুঝে মিড অনে স্টার্ককে ক্যাচ শেখালেন কে জানে! দ্বিতীয় দিনটা অস্ট্রেলিয়া নিজেদের করে নেওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়েছে ব্যাটিংয়ে। ৯৫ রানে অপরাজিত থেকে প্রথম দিন শেষ করা মারনাস লাবুশেন আজ বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১০৩ রানে আউট হন ওলি রবিনসনের বলে। স্মিথ এরপর দুটি জুটিতে অস্ট্রেলিয়াকে চার শ পার করার পথ দেখান। ট্রাভিস হেডের সঙ্গে ৫০ ও অ্যালেক্স ক্যারির সঙ্গে গড়েন ৯১ রানের জুটি। ৯৩ রানে আউট হওয়া স্মিথের শতক না পাওয়ার আক্ষেপ থাকবে। তবে অস্ট্রেলিয়ার শেষের ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তা বেশি করে নাকাল করেছে ইংলিশ বোলিংকে। অষ্টম উইকেটে ৫৮ রান তোলেন স্টার্ক ও অভিষিক্ত নেসার। ২৪ বলে ৩৫ রানের ঝোড়ো ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ৪০০ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ এনে দেন নেসার। ৩৯ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন স্টার্ক।
ঝাই রিচার্ডসন এসে স্টার্কের সঙ্গে ৯ বলে ২৫ রানে জুটি গড়ার পথেই বোঝা যাচ্ছিল যেকোনো সময় ইনিংস ঘোষণা করবে অস্ট্রেলিয়া। শেষ বিকেলে গোলাপি বলের সুইংয়ে দ্রুত কিছু উইকেট তুলে নেওয়া লক্ষ্য ছিল অধিনায়ক স্মিথের। পেসাররা এই লক্ষ্য পূরণ করায় দিনটা শেষ অস্ট্রেলিয়ারই। তবে বৃষ্টি ইংল্যান্ডের ক্ষত বাড়াতে দেয়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct