মেডিক্যালে ভর্তির জন্য রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা বাতিলই করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ফলে আগামী মঙ্গলবার, ১৭ মে পশ্চিমবঙ্গে যে জয়েন্ট এন্ট্রান্স হবে, তাতে শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং প্রত্যাশীরাই বসতে পারবেন।
তা হলে যাঁরা ডাক্তারি পড়তে চান, তাঁরা কী করবেন?
সুপ্রিম কোর্ট সোমবার জানিয়ে দিয়েছে, একমাত্র কেন্দ্রীয় ভাবে আয়োজিত মেডিক্যাল প্রবেশিকার মাধ্যমেই দেশের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র ভর্তি হবে। ১ মে প্রথম দফার কেন্দ্রীয় প্রবেশিকা হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় দফার দিন ধার্য হয়েছে আগামী ২৪ জুলাই।
রাজ্যের যে ৭৫ হাজার ৮০০ পরীক্ষার্থী মেডিক্যাল জয়েন্টের জন্য তৈরি হচ্ছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে তাঁরা যারপরনাই হতাশ। হতাশ অভিভাবকেরাও। এ রাজ্যের সিংহভাগ ছাত্রছাত্রীর কাছে কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল জয়েন্ট গুরুত্বের তালিকায় দ্বিতীয়। তাই ১ মে রাজ্যের যাঁরা কেন্দ্রীয় জয়েন্টের প্রথম দফায় বসেছেন, অধিকাংশের পরীক্ষা ভাল হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের কাছে তাই পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১১টি রাজ্যের আর্জি ছিল, ওই সব ছেলে-মেয়েকে যেন দ্বিতীয় প্রবেশিকায় পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়।
শীর্ষ আদালত অবশ্য আপত্তি করেনি। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি জয়দীপ মজুমদার বলেন, রাজ্যের মেডিক্যাল জয়েন্ট পরীক্ষা সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিলেও পরীক্ষার্থীদের আর্জি মেনে তারা জানিয়েছে, ১ মে যাঁরা কেন্দ্রীয় প্রবেশিকার প্রথম দফায় বসেছিলেন, তাঁরা চাইলে দ্বিতীয় দফায় (২৪ জুলাই) বসতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের ১ মে-র পরীক্ষাটি বাতিল হয়ে যাবে। শুধু তা-ই নয়, পরীক্ষার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ২৪ জুলাইয়ের পরীক্ষা প্রয়োজন মতো পিছিয়ে দেওয়ার অনুমতিও এ দিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ আর দাভে, বিচারপতি এস কে সিংহ এবং বিচারপতি এ কে গয়ালের বেঞ্চ।
গত ২৮ এপ্রিলই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, কোনও রাজ্য আর মেডিক্যাল জয়েন্ট পরীক্ষা নিতে পারবে না। চলতি বছর থেকেই নির্দেশটি কার্যকর হবে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১১টি রাজ্য এ যাবৎ নিজেদের মতো করে মেডিক্যাল জয়েন্ট নিয়ে এসেছে। তারা সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়ে বলে, অন্তত চলতি বছরের জন্য রাজ্যগুলোকে মেডিক্যাল জয়েন্ট নেওয়ার অনুমতি দেওয়া না-হলে বহু ছেলে-মেয়ে অকূল পাথারে পড়বেন।
প্রায় এক সপ্তাহ শুনানি শেষে এ দিন সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যগুলির আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। শুধু সরকারি মেডিক্যাল কলেজ নয়, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টালে ভর্তি হতে গেলেও এ বছর থেকে কেন্দ্রীয় প্রবেশিকায় পাশ করতে হবে।
এ দিন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘আমরা আর কী বলতে পারি? ছাত্রছাত্রীদের মতো আমরাও আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। খুবই অসহায় লাগছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’ রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান সজল দাশগুপ্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আমি দেখিনি। তবে সুপ্রিম কোর্ট আগের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে আমরা আগামী ১৭ মে শুধু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা নেব।’’
এ দিকে মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য এ ধরনের প্রবেশিকার কোনও প্রয়োজন রয়েছে কি না, সে প্রশ্নও উঠে পড়েছে। শিক্ষাবিদদের একাংশ চাইছেন, প্রতিটি মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে নিজের মতো করে পড়ুয়া বাছাইয়ের ক্ষমতা দেওয়া হোক। ঠিক যেমন প্রেসিডেন্সি বা সেন্ট জেভিয়ার্স বেছে বেছে ভাল ছেলে-মেয়েদের তুলে নেয়। ‘‘যে সব কলেজের পরিকাঠামো যথাযথ নয় কিংবা সঠিক মানের শিক্ষক নেই, কেন্দ্রীয় প্রবেশিকায় উত্তীর্ণের তালিকা থেকে তারাও ছাত্রছাত্রী পায়। অথচ প্রতিষ্ঠানের দোষে সেই পড়ুয়াদের শিক্ষা অসম্পূর্ণ থাকে।’’— পর্যবেক্ষণ এক শিক্ষাবিদের।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct